দিরিলিস, দামেস্ক মদিনা রেলপথ তৈরীর কাহিনী।
দামেস্ক - মদিনা রেলপথ :
১৯০৮ সালের ২৮ অগাস্ট । এদিন প্রথমবারের মত মদীনায় ট্রেন এসে থামে সুদূর দামেস্ক থেকে। এর ফলে শাম ও আনাতোলিয়ার মুসলমানরা নিরাপদে হজ্ব করার সুযোগ লাভ করে,যা আগে ছিল না।
১৯০০ সালের ১ মার্চ সুলতান ২য় আব্দুল হামিদ এই দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণের আদেশ দেন। তখন দামেস্ক থেকে মদিনায় যেতে প্রায় ৪০ দিনের মত সময় লাগতো। সেই সাথে যাত্রাপথে হাজিদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। লুটেরা, খারাপ আবহাওয়াসহ নানা রকম বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করতো।
১৯০৮ সালে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথের কাজ শেষ হয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৯ বছর এই রেলপথের মাধ্যমে হাজারো হাজি ও অসংখ্য সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধ ও এর পরবর্তী সময় আরবদের বিদ্রোহের ফলে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়,অনেক জায়গায় লাইন উপড়ে ফেলা হয়।
এই রেলপথ তৈরি করতে সুলতান কোন বিদেশি সাহায্য নেননি। বরং তার ইচ্ছে ছিল যে মুসলমানদের অর্থ ও শ্রমের মাধ্যমেই এই রেলপথ তৈরি হবে।
সেসময় সুলতানের এমন উদ্যোগে ইউরোপ জুড়ে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে। কারণ উসমানীয় খিলাফতের অবস্থা ছিল খুবই দূর্বল। আর অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল খুবই নাজুক। আর উঁচু - নিচু মরূভূমির মাঝে এমন রেললাইন তৈরি করাও অনেক কঠিন কাজ ছিল।
ইউরোপে তখন সুলতানের এই উদ্যোগকে বিলাসী কল্পনা হিসাবে প্রচার করা হচ্ছিল। সেইসাথে পত্রপত্রিকায় এই নিয়ে অনেক বিদ্রুপাত্মক লেখা ছাপা হতে থাকলো। কিন্তু সুলতান তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনি তার মনোবল ও স্পৃহা বিন্দুমাত্রও কমতে দেন নি।
এই রেলপথের কাজ করেন বিখ্যাত অটোমান প্রকৌশলী মোখতার বেহ,তিনি এর নকশা প্রনয়ণ করেন। প্রাচীন কালের উটের কাফেলার রূট অনুযায়ী তিনি এই নকশা তৈরি করেন।
উসমানী বাজেটের ১৮ শতাংশ বেই রেললাইন তৈরির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সুলতান তার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ লাখ ২০/হাজার মুদ্রা দান করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানদের দান আসতে থাকে এই রেলপথ তৈরির জন্য।
৫ হাজারের বেশি শ্রমিক এই রেললাইন তৈরির জন্য দিন রাত কাজ করে। এদের বেশির ভাগ উসমানী সেনাবাহিনীর সদস্য ছিল। এই রেললাইন এর জন্য ইস্তাম্বুলে একটি রেল গবেষণা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়।
রেললাইন তৈরির সময় রেললাইন কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রায় ২ হাজার সেতু তৈরি করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। প্রতি ২০ কিলোমিটার পরপর রেল স্টেশন স্থাপন করা হয়। এই সকল স্টেশনে যাত্রীছাউনির পাশাপাশি পানি মজুদ রাখার জন্য ট্যাংক ও তৈরি করা হয়। উসমানি সাম্রাজ্যের মুসলমানরা ছাড়াও অনেক দেশের মুসলমানরা এই রেলপথের কাজে অংশগ্রহণ করে। অনেক শ্রমিক মারা যায়। তাদের রেললাইন এর পাশেই কবর দেওয়া হয়। রেললাইন স্থাপনের ফলে হাজিদের যাত্রা আর সহজ হয়,সেইসাথে আরব এ উসমানী সৈন্যদের যাতায়াত ও সুবিধাজনক হয়।
যার স্বপ্ন, সাহস,শ্রম ও উদ্যোগে এই অসাধ্য সাধিত হল,সেই সুলতান ২য় আবদুল হামিদ এই রেললাইন এ চলমান ট্রেনে চড়ার সুযোগ পাননি৷ 😥
১৯০৯ সালে তাকে পদচ্যুত করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়৷ 😥
গ্রন্থসূত্র : সুলতান কাহিনি
#collected
Comments
Post a Comment