করোনা থেকে প্রতিকারের করনীয়।
করোনা ভাইরাস: আমাদের করনীয় ও বর্জনীয় (হুযুর (দঃ) এর পবিত্র নির্দেশনাবলীর আলোকে)
সকলের প্রতি অনুরোধ- পড়ুন, জানুন, সতর্ক হোন এবং অবশ্যই অন্যের সাথে শেয়ার করুন
--------------------------------------------------
প্রশ্নঃ এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও ভয়ংকর বিষয় 'করোনা ভাইরাস কভিড-১৯'। বিশ্বের সব বাঘা বাঘা দেশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও রোধ করতে পারছেনা এর সংক্রমন বা মৃত্যুর মিছিল।কিন্তু আমাদের দেশের লোক বিষয়টাকে সেভাবে গুরুত্ব না দিয়ে কোনরূপ সতর্কতা অবলম্বন না করে "আল্লাহ্ ভরসা" বলে যে যার মত করে আড্ডা আর ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত। কি বলবেন?
উত্তর: এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হতাশাব্যন্জক। এই ধরনের খামখেয়ালীপূর্ণ কথাবার্তা ও চলাফেরা আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি এবং পরিবার-পরিজনের জন্য কি পরিমাণ ক্ষতির কারণ হতে পারে তা যদি যদি এতদ সামান্য অনুধাবন করতে পারতাম তবে এই বিষয়টি কখনো এত হালকা করে নিতাম না। তাছাড়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এই ধরনের কথা 'তাওয়াক্কুলের' (আল্লাহ্ ভরসা) মূল নীতির পরিপন্থী। কারণ যতদুর সম্ভব সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে 'আল্লাহ্ ভরসা' বলা কোন ধর্মভীরুতা নই, বরং নিরেট মুর্খতা। এই মুহুর্তে এই ধরনের কথা ও কাজ নিজের জীবন সহ আশেপাশের মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সব ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালায় ভরসা। কিন্তু এই ভরসা করার আগে আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে- আর তা হলো যতদুর সম্ভব সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতঃপর ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়া।হুযুর (দঃ) এই কারণেই মহামারী আক্রান্ত দেশে যেতে এবং ঐ দেশ থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। অতএব আগে সতর্কতা অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা।
প্রশ্নঃ মহামারী আসলে কি এবং মহামারী আক্রান্ত দেশ ও দেশের মানুষকে হুযুর (দঃ) যেই নির্দেশনা দিয়েছেন তা যদি একটু বলতেন তবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো।
উত্তরঃ মহামারী একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ। এটি সাধারণত সংক্রামক হয়।হুযুর (দঃ) মহামারীকে আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে শাস্তি বলে পবিত্র হাদীছ শরীফে এরশাদ করেছেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি (দঃ) উত্তরে বলেনঃ মহামারী একটা আযাব। যার ওপর ইচ্ছা আল্লাহ্ এই আযাব প্রেরণ করেন। তবে আল্লাহ তায়ালা এই মহামারীকে মুমিনদের জন্য রহমত করে দিয়েছেন। কোন মানুষ যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং সেখানে ধৈর্য্যের সাথে সাওয়াব প্রাপ্তির আশায় অবস্থান করে এবং এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে যে, আল্লাহ তাআলা যদি তার তাকদিরে লিখে না থাকেন তাহলে মহামারী তাকে আক্রান্ত করতে পারবে না। আর যদি সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তাকে একজন শহিদের সমপরিমাণ প্রতিদান দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৬১৯, ৫৭৩৪, মুসলিম শরীফ ৫৭৭৩)
মহামারী আক্রান্ত এলাকার জনসাধারণ এবং অন্যান্য এলাকার লোকজনের প্রতি হুযুর কারীম (দঃ) এর শিক্ষাঃ
- মহামারী আক্রান্ত এলাকার লোক যেন কোনভাবেই ঐ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে না যায় (কারণ এতে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে)। সেই সাথে সংক্রমন হয়নি এমন এলাকার লোকও যেন কোনক্রমেই সংক্রমিত এলাকায় প্রবেশ না করে। (বোখারী শরীফ ৫৭২৮)
- ছাকীফ গোত্রের একটা ডেলিগেশন হুযুর কারীম (দঃ) পবিত্র হস্তে বাইয়াত গ্রহণ করতে আসছিলেন।
ইতোমধ্যে আল্লাহর নবীর (দঃ) নিকট খবর আসে যে, তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি কুষ্টরোগে আক্রান্ত। তখন হুযুর (দঃ) তাকে তাঁর কাছে না ডেকে বরং লোক পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, আমি তোমার বায়াত নিয়ে নিয়েছি, অতএব তুমি ফিরে যাও। (মুসলিম শরীফ ৫৮২২)
- হযরত ফারুকে আজম (রাঃ) সরকারী ডেলিগেশন সহ সিরিয়া যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে 'সারগ্' নামি জায়গায় পৌছলে সংবাদ আসে সিরিয়াতে মহামারী দেখা দিয়েছে। উনি আব্দুররাহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এর পরামর্শক্রমে হাদীছে রাছুল (দঃ) এর নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে পুরো ডেলিগেশন নিয়ে মদীনা শরীফ ফেরত চলে আসেন। (বোখারী শরীফ ৫৭৩০)
সুতরাং মহামারী আক্রান্ত এলাকা ত্যাগ করা এবং ঐ এলাকায় প্রবেশ করা দুটোই সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ। অনুরূপ মহামারী আক্রান্ত এলাকায় সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে দুরে না থাকা এবং নিজেকে সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে সতর্কতা অবলম্বন না করাও হুযুর (দঃ) এর শিক্ষার পরিপন্থী।
প্রশ্নঃ কোয়ারানটাইনে থাকা কতটা জরুরী তা যদি একটু হুযুর (দঃ) এর নির্দেশনাবলী থেকে বলতেন তবে আমরা সাধারণ মানুষ ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারতাম।
উত্তর: প্রথমে মনে রাখতে হবে যে, এগুলো মডার্ন টার্ম। এই সমস্ত টার্মগুলির পূর্ণ প্রতিচ্ছবি হুবহু হয়ত মিলবেনা। তবে একটা গাইডলাইন এবং প্রিনসিপল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। কোয়ারানটাইন এর মূল কথা হচ্ছে- আপনি যদি এফেকটেড (অসুস্থ) হোন তবে আনএফেকটেড (সুস্থ) ব্যক্তি থেকে দূরে থাকবেন যাতে কেউ আপনার মাধ্যমে সংক্রমিত না হয়। কারণ আপনার মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়া মানে কিছু মানুষের মৃত্যুঝুকি বেড়ে যাওয়া এবং সংক্রমনকে এসকেলেইট করা।
তাই হুযুর (দঃ) এরশাদ করেনঃ "মহামারীতে সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে এভাবে পলায়ন করো ঠিক যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন করো"। (বুখারী শরীফ ৫৭০৭)
(অর্থাৎ মহামারী আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিজেকে দুরে রাখো। এটা তখন সম্ভব হবে যখন আমি জানতে পারব বা চিন্হিত করতে পারব সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্হানকে। যদি সংক্রমনের তীব্রতা অধিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং কে এই ভাইরাস নিয়ে চলাফেরা করছে জানার উপায় না থাকে তবে হুযুর (দঃ) এর শিক্ষা অনুযায়ী 'সেলফ আইসোলেশন' তথা ঘরে অবস্থান করাটাই সবচেয়ে উত্তম।)
অন্য এক বর্ণনায় হুযুর কারীম (দঃ) এরশাদ করেনঃ
"সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে উপস্থিত করা যাবেনা।" (বুখারী শরীফ ৫৭৭১, মুসলিম শরীফ ৫৭৯১)
কারণ এতে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আশংখ্যা থাকে। সুতরাং সংক্রমিত ব্যক্তিকে কোয়ারানটাইনে রাখা হুযুর (দঃ) এর নির্দেশ। কেউ কেউ এই হাদীছের অনুবাদ করতে গিয়ে "মুমরিদ" শব্দের অনুবাদ করেছেন 'অসুস্হ ব্যক্তি' বলে। আমার মনে হয় এখানে এই শব্দের অনুবাদ শুধু 'অসুস্হ ব্যক্তি' না বলে 'সংক্রমন ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি' বললে বেশি শুদ্ধ হবে। কারণ শব্দটা 'মারীদ' না, বরং 'মুমরিদ' (বাবে এফআল থেকে)।
প্রশ্নঃ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সংক্রমন দ্রুত রোধ করা না গেলে আমাদেরকে সামগ্রিকভাবে একটা দুর্যোগপুর্ণ পরিস্থিতি এবং দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে হবে। তাই এই সংক্রমন রোধে উনারা সমস্ত পাবলিক প্লেইস বন্ধ করার প্রতি জোড় দাবি জানাচ্ছেন। কারণ এই সংক্রমন বন্ধ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষে মানুষে কন্ট্রাক্ট কমিয়ে আনা বা পরিস্থিতি স্বাপেক্ষে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া। সেই জন্য পরিস্থিতির ভয়াবহতার দিক বিবেচনা করে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারটাও খুব জোড়ালোভাবে আলোচিত হচ্ছে। যদিও আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক আলেম-ওলামা বিষয়টাকে খুব নেগেটিভলি নিয়ে মসজিদ বন্ধ না করা এবং সাধারণ মানুষকে মসজিদে আসতে উৎসাহিত করছেন। কি বলবেন?
উত্তর: আমি এই ইমোশনকে শ্রদ্ধা করি। তবে সময়টা ইমোশন দেখানোর নই। কারণ পরিস্থিতির ভয়াবহতা এতটাই ভীতিকর যে, এখন জাতি আমাদের মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আবেগ নই, বরং বিবেক ও আবেগের ব্যলেন্সড সংমিশ্রন প্রসূত আরো অনেক বেশি রেসপনসিবল ও সেনসিবল কথা-বার্তা আশা করে। বিশেষ করে আমাদের যেই সমস্ত সম্মানিত মুফতিগণ বড় বড় চেয়ারে আসীন তারা যদি একটু গবেষণা করে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নিয়ে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফকীহদের ফাতওয়ার স্পিরিট ও দলীল-আদীল্লাহ্ অধ্যয়নপূর্বক ইসলামী শরীয়তের 'মাকাসিদ' বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে অতঃপর এই বিষয়ে কথা বলেন তবে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পাবে এবং রাস্ট্র উপকৃত হবে। সর্বোপরি আধুনিক বিশ্বের সামনে আমাদের কথা ও মন্তব্যের ওয়েইট বৃদ্ধি পাবে। যাই হোক, আমি তো আর মুফতি না, তবে সমগ্র বিশ্বের বেশিরভাগ মুফতিগণ এই ভাইরাসের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এর নারকীয় তান্ডব ঠেকাতে মসজিদে জুমার নামাজ এবং জামাতে নামাজকে সাময়িকভাবে সাধারণের জন্য বন্ধ রাখতে এডভাইস করেছেন। কারণ এই ভাইরাস মানুষের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে। কোন মানুষ যদি এই ভাইরাস বহন করে তবে তার সিম্পটম প্রকাশ হতে প্রায় চার সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এই সময়ে সংক্রমিত ব্যক্তি বুঝতেই পারেনা যে, তিনি এই ভাইরাস বহন করছেন। প্রথম চার সপ্তাহ অসুস্থতার কোন উপসর্গ প্রকাশ না হওয়াতে মানুষ সাধারণত কোনরূপ সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিজের সমগ্রিক কর্মকান্ড প্রাত্যহিক রুটিন অনুযায়ী পরিচালিত করে। এভাবে সাবধানতা অবলম্বন না করার কারণে নিজের অজান্তেই সকাল থেকে রাত পর্য্যন্ত তার সংস্পর্শে আসা হাজার লোকের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে এর কোন চিকিৎসা এখনো পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। কাজেই এখনো পর্যন্ত এই সংক্রমন রোধ করার একমাত্র উপায় মানুষে মানুষে দুরত্ব সৃষ্টি করা। আর এই দুরত্ব সৃষ্টি করতে একটা নির্দিষ্ট সময় সাধারণ মানুষকে মসজিদে নামাজ আদায় না করে ঘরে নামাজ পড়তে বলা হলে অনেক বড় স্বাস্থ্যঝুকি থেকে জনগণকে রক্ষা করা যাবে বলে পৃথিবীর বড় বড় মুফতিরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। উনাদের মতে এই ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তে আমাদের জন্য ফ্লেক্সিবিলিটি রয়েছে।
পবিত্র কোরানে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
- তোমরা নিজেদের হত্যা করিওনা (৪:২৯)
- তোমরা নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিওনা (২:১৯৫)
- মহামারী রোগে আক্রান্ত” ব্যক্তির জুমা ও জামাআতে উপস্থিত হওয়া কোনভাবেই বৈধ নই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ
“অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে উপস্থিত করা যাবে না”। (বুখারী ৫৩২৮ ও মুসলিম ৪১১৭) ইমাম নববী বলেন, কেননা এতে যদি আল্লাহর হুকুমে সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়, তাহলে সে তার তকদ্বীরের প্রতি বিশ্বাস না করে ঐ ব্যক্তিকে দোষারোপ করবে, ফলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। (শরহু মুসলিম খ. ৭, পৃ. ৩৭৩)।
- জীবননাশের আশংখ্যা থাকলে এবং কোন ব্যক্তি অসুস্থতা বোধ করলে হুযুর (দঃ) মসজিদে এসে নামাজ আদায় করা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। যেমন হযরত আব্বাছ (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ হুযুর কারীম (দঃ) এরশাদ করেনঃ "যদি কোন ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনার পর 'উঝর' বা কোন অজুহাত ছাড়া জামাতে নামাজ আদায় না করে, তবে তার নামাজ গ্রহণ করা হবেনা। তারা জিজ্ঞেস করেনঃ 'উঝর' কি? উত্তরে তিনি বলেনঃ ভয় বা রোগ।" (সুনান আবু দাউদ ৫৫১, সুনান ইবনে মাজাহ ৭৯৩)
- মুহাম্মাদ ইবনে ছিরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত: এক বর্ষার দিন ইবনে আব্বাস তাঁর মুয়াজ্জিনকে বললেন, (আজ) 'আশ-হাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ' বলার পর 'হায়্যা আলাস সালাহ্' বলবেনা। বরং বলবে 'সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম' (ঘরে নামাজ আদায় করুন)। (লোকটি তাই করেছে) কিন্তু লোকেরা এটি অপছন্দ করে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এটি এমন একজনের দ্বারা করা হয়েছিল যিনি আমার চেয়ে অনেক উত্তম ছিলেন (অর্থাৎ রাসূল (দঃ))। সন্দেহ নেই যে, জুমার নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। তবে আমি চাচ্ছিলামনা যে, (এই বর্ষার দিনে) আপনাদেরকে ঘর থেকে বের করে আনি আর আপনারা কাদায় হেটে জলকাদায় একাকার হয়ে মসজিদে আসেন। (বুখারী শরীফ ৯০১, ৬৬৮)
- যে ব্যক্তি এই আশঙ্কা করবে যে, সে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অথবা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তার জন্য এই অনুমতি রয়েছে যে সে জুমআ ও জামাআতে অনুপস্থিত থাকবে। কেননা নবী সা. বলেন,
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ “
“নিজের ক্ষতি করা যাবে না অন্যের ক্ষতি করা যাবে না”। [সুনান ইবন মাজাহ, ২৩৩১]
এই ধরনের আরো অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে যা একজন মুফতিকে অদ্ভুত পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন রক্ষায় ফাতওয়া দিতে মুলনীতি ও গ্রাউন্ড প্রভাইড করে। কাজেই এই মুহুর্তে আমরা যা করতে পারি:
- আমরা মসজিদে যাবনা। বরং ঘরেই আজান দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নামাজ আদায় করব এবং সকলে মিলে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইব।
- আমাদের মুয়াজ্জিনগণ মসজিদে আজান দিয়ে ইমাম সাহেবকে নিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। আরো এক বা দুইজন চাইলে যোগ দিতে পারেন তবে পূর্ণ সতর্কতার সাথে পারস্পরিক দুরত্ব বজায় রেখে।
- জুমারদিন আপনারা ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করেন। নিয়্যতের কারণে আপনারা পূর্ণ সাওয়াব পাবেন।
- ইমাম সাহেব মুয়াজ্জিন এবং মাত্র কয়েকজন মুসল্লি নিয়ে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে কম সময়ের মধ্যে শুধু খুতবা ও নামাজ পড়ে জুমা শেষ করবেন।
এভাবেই আমরা খুব দ্রুত এই আজাব থেকে মুক্তি পাব। (ওয়াল্লাহু আ'লাম)
প্রশ্নঃ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যদি কোন দোয়া আমাদের সাধারণের জন্য বলতেন তবে আমরা উপকৃত হতাম।
উত্তরঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, আমরা যদি এই ভাইরাসের বিস্তার কমাতে চাই তবে তাদবীর হিসাবে কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন জরা জরুরী। পশ্চিমা বিশ্বের এখন একটাই শ্লোগান- "প্লীজ স্টে এট হোম (দয়া করে ঘরে অবস্থান করুন)। আমরা আগে এটা এপ্লাই করব। যাই হোক, এখন আমরা কিছু স্পিরিচুয়াল তাদবীর বলবঃ
আসুন আমরা আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে কৃত গুনাহের জন্য অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
আসুন আমরা আল্লাহ্ এবং তদীয় রাসুল (দঃ) কতৃক নিষেধকৃত কর্ম থেকে আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টির দিকে প্রত্যাবর্তন করি। লুটমার, অত্যাচার-নিপিড়ন, প্রতারণা, অহমিকা, ঘৃনা ও হিংসা-বিদ্ধেষ পরিহার করি। আসুন অশ্লীলতাকে 'না' বলি। আসুন পাপ থেকে পুণ্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করি। বেশি বেশি করে নফল নামাজ, কুরান তেলওয়াত এবং দরুদ শরীফ পাঠ করুন। সাথে নিম্নলিখিত দোয়া গুলোও পড়ুনঃ
একঃ প্রথমে ১১বার দরুদ শরীফ পড়ুন। অতঃপর নিম্মোক্ত আয়াতগুলি পাঠ করুনঃ
-ওয়া ইয়াশফি সুদুরা কাউমিম মু'মিনীন (৯:১৪)
- ওয়া শিফাউল লিমা ফিস সুদুর (১০:৫৭)
- ফীহি শিফাউল লিন্নাস (১৬:৬৯)
- ওয়া নুনাঝ্ঝিলু মিনাল কুরআানি মা হুয়া শিফাউন ওয়া রাহমাতুল লিল মু'মিনীন (১৭:৮২)
-ওয়া ইঝা মারিদতু ফাহুয়া ইয়াশফীনি (২৬:৮০)
-কুল হুয়া লিল্লাঝীনা আমানু হুদান ওয়া শিফায়া (৪১:৪৪)
এই ছয়টি আয়াত ধারাবাহিকভাবে পড়ার পর নিম্নলিখিত দোয়াটি সাতবার পড়ুনঃ
"আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুঝুবিকা মিনাল বারাস, ওয়াল জুনুন, ওয়াল জুঝাম, ওয়া মিন সায়্য়িঈল আসকাম"
আবারো এগারোবার দরুদ শরীফ পড়ুন। এভাবে সকাল-বিকাল পড়ে পানিতে ফু পান করতে পারেন।
দুইঃ আগে এবং পরে ১১ বার দরুদ শরীফ পড়ে বেশি বেশি সুরা ফাতেহা পাঠ করুন
তিনঃ তিনবার সুরা ফাতেহা, তিনবার সুরা ইখলাস এবং ১৫০ বার "হাসবুনাল্লাহু ওয়া নে'মাল ওয়াকীল, নে'মাল মাওলা ওয়া নে'মান নাছীর" পাঠ করুন।
চারঃ "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাঝ ঝোয়ালিমীন"। এই আয়াতে কারীমা বেশি বেশি পাঠ করুন
প্রশ্নঃ সরকার যদি লকডাউন করে দেই তবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর খাদ্য যোগাবে কে?
উত্তরঃ এই কাজ সরকারের একার পক্ষে আন্জাম দেওয়া সম্ভব নই। তাই প্রত্যেকেই যেই যার অবস্থান থেকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসতে হবে। এই ভাইরাসে আমাদের অনেক ধরনের পরীক্ষা দিতে হতে পারে। ধৈর্য্যের, দানশীলতার এবং অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর পরীক্ষা। দোয়া করি আল্লাহ্ তায়ালা যেন আমাদেরকে সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তরনের তাওফীক দান করেন এবং পুরো বিশ্বকে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি দান করেন।
Comments
Post a Comment