তাবলিগী জামাত।

★আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।
★ প্রজেক্ট- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা★
★ পোস্ট নং--৪৪
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

---------------------------------
♦তাবলিগী জামাত♦
---------------------------------

♣ তাবলিগ জামাত -এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মৌং ইলিয়াছ মেওয়াতি কাম্পালতী বাল্যকালে শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মৌং রশিদ আহমদ গাহীর নিকট হাজির হন। দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ তার নিকট শিক্ষা লাভ করেন। ছাত্র জীবনেই তিনি গাংগুহীর নিকট মুরীদ হন। মৌং আলী হাসান নদভী হযরত মৌং ইলিয়াস আওর উনকি দাওয়াত’ নামক কিতাবের ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেন, "হযরত যৌং ইলিয়াস জনাব গাংগুহীর সোহবত এবং তার মজলিসের সম্পদ সাত দিনে লাভ করেন। মৌং ইলিয়াস দশ বছর হতে বিশ বছর বয়স পর্যন্ত মোট দশ বছর কাল গাংগুহীর সোহবতে থাকেন। মৌং গাংগুহীর মৃত্যুর পর মৌং ইলিয়াস মৌং মাহমুদুল হাসানের নিকট মুরীদ হতে চাইলে তিনি তাকে মৌং খলীল আহমদ। আম্বটভীর নিকট মুরীদ হতে বললেন; অতঃপর তিনি মৌং খলীল আহমদের নিকট মুরীদ হলেন। (তাবলিগ দপন, পৃষ্ঠা ৫৯ ও ৬০)।

আলোচ্য উদ্বৃতি দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌং ইলিয়াস দু'জন প্রখ্যাত দেওবন্দী ওহাবী আলেমের নৈকট্য প্ৰাপ্ত শিষ্য। অনেক সময় প্রচলিত তাবলিগ জামাতের লোকজন সরলপ্রাণ মুসলমানদের নিকট নিজেদের ওহাবীয়াত গোপন করার উদ্দেশ্যে বলে থাকে, এ তাবলিগ জামাত কারো প্রতিষ্ঠিত নয়, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী জামাত। কালেমার দাওয়াত দানে লিপ্ত। তাই এখানে প্রচলিত তাবলিগী জামাতের উদ্বৃতি পেশ করা হলো।

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কবরকে আল্লাহ পাক নুরের দ্বারা পরিপূর্ণ করিয়ে দিন, হযুর পাক সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের সেই তাবলিগের কাজকে জামাতের আদলে পুনরায় নয়দিল্লীর বাস্তিয়ে নিজামুদ্দিনে শুরু করেছেন। (তাবলিগী সফর, পৃষ্ঠা ৫ কৃতঃ মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ)।

এটাও একটা চরম ধোকাবাজি। কারণ, হযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের ‘তাবলিগ” এর সাথে প্রচলিত তাবলিগের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

একঃ হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের কালেমার দাওয়াত ছিল কাফের মুশরিকদের নিকট। আর প্রচলিত তাবলিগের দাওয়াত হলো মুসলমানদের নিকট।

দুইঃ প্রথমোক্ত তাবলিগে ছয় উসুল ছিল না। ইলিয়াস তাবলিগ ছয় উসুল ভিত্তিক।

তিনঃ প্রথমোক্ত তাবলিগে “গাশত" চিল্লা ইত্যাদি ছিল না। ইলিয়াসী তাবলিগে গাশত ও বিভিন্ন প্রকারের চিল্লা রয়েছে।

চারঃ প্রথমোক্ত তাবলিগে এতো বড় বড় সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি ছিল না। যেভাবে ইলিয়াসী তাবলিগে আছে।

পাঁচঃ প্রথমোক্ত তাবলিগের মূল বিষয় ছিল ইসলাম। ইলিয়াসী তাবলিগের আসল উদ্দেশ্য হলো মৌং আশরাফ আলী খানভীর তালীম (দর্শন) প্রচার করা। প্রচলিত তাবলিগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে মৌং ইলিয়াস বলেন, “হযরত মৌং থানভী বড় কাজ করেছেন। অতএব, আমার ইচ্ছে হলো যে, তালীম হবে তার এবং তাবলিগের পদ্ধতি হবে আমার। এমনিভাবে তার (থানভীর) তালীম ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে’ (মানুযাতে ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ৫৮ ও ৫০)।

এতে প্রমাণিত হলো যে, যদিও তাবলিগ জামাত প্রকাশ্যে বলে বেড়ায়, তাদের উদেশ্য মুসলমানদেরকে কালেমা নামায ইত্যাদির তালীম ও প্রশিক্ষণ দেয়া। কিন্তু আসলে তা নয়; মূল উদ্দেশ্য হলো মৌং আশরাফ আলী থানভীর তালীম প্রচার করা। সুতরাং এখানে থানভীর ভালীমের আংশিক আলোচনা করা প্রয়োজন। যাতে করে সরল প্রাণ মুসলমান তাবলিগ জামাতের স্বরূপ কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।

দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিশে সুরার সদস্য মৌং আহমদ সাইদ আকবরাবাদী তার মাসিক বোরহান' পত্রিকায় থানভী সম্পর্কে লিখেন, ব্যক্তিগত বিষয়াবলীতে সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা দেখেও না দেখার ভান করার চরিত্র মৌলানার (খানভীর) মধ্যে ছিল তার প্রমাণ এ ঘটনা থেকে মিলে। একদা তার মুরীদ মৌলানার (থানভীর) নিকট লিখল যে, "আমি রাত্রি বেলায় স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি শুদ্ধভাবে কলেমা-এ-শাহাদাত উচ্চারণ করতে খুব চেষ্টা করছি। কিন্তু প্ৰত্যেক বারই এভাবে উচ্চারিত হলো৷- لااله الاالله اشرف علي رسول الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসুলুল্লাহ)।

মাওলানা আহমদ সাঈদ এতে মন্তব্য করেন, অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এটা কুকরী কালেমা। শয়তানের ধোকা, নফসের প্রতারণা, তুমি তাড়াতাড়ি তাওবা করো। এবং ইস্তেগফার করো। কিন্তু থানভী এ ধরণের কোন উত্তর না দিয়ে শুধু এতটুকু বলে শেষ করলেন যে, ‘আমার প্রতি তোমার মুহাব্বত খুব বেশী, এসব তারই ফল। (মাসিক বোরহান, ফেব্রুয়ারী ১৯৫২; তাবলিগ জামাত, পৃষ্ঠা ৫৫ ও ৫৬; ইলিয়াসী জামাত, পৃষ্ঠা ৭ ও ৮)।

স্বপ্নাবস্থায় এভাবে ভুল হবার বিষয়টি জাগ্রত হবার পর মনে পড়লে তা দূরিভূত করার উদ্দেশ্যে দরুদ শরীফ পড়ছিলাম। তাও বলতেছিলাম এভাবে   الهم صلي سيدناونبيناومولانااشرف علي (আল্লাহুম্মা সারেআলা সাইয়্যেদিনা ওয়া নাবীয়্যেনা ওয়া মৌলানা আশরাফ আলী) এ বিষয়টি উক্ত মুরীদ তাকে পত্র মারফত অবগত করলে থানভী তাওবা ইস্তেগফারের নির্দেশ না দিয়ে বরং উৎসাহিত করলেন এ বলে, এ ঘটনায় এ কথার শান্তনা নিহিত যে, তুমি যার প্রতি মনোযোগী (থানভী) তিনি আল্লাহর সাহায্যক্রমে সুন্নাতের অনুসারী'। (আল এমাদ পৃষ্ঠ, ৩৪; তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা
৫৭; জাআল হক, পৃষ্ঠা ৪২৩; ইলিয়াসী জামাত, পৃষ্ঠা ৭ ও ৮)।

উপরোক্ত দু'টি উদ্বৃতি থেকে মৌং আশরাফ আলী থানভীর মনোভাব কি, তা সহজে অনুমেয়। উত্তরে তার কি বলা উচিত ছিল, আর বললেন কি!

আক্বীকা, খতনা, ছেলে-মেয়েদের বিসমিল্লাখানী (সর্ব প্রথম আরবী সবকদান অনুষ্ঠান), মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফেরাত কামনাৰ্থে ফাতেহা, শবে বরাতের হালুয়া, মুহররমের অনুষ্ঠান, অলীদের ফাতেহা, নযর-নেয়ায ইত্যাদি ছেড়ে দাও। নিজেও করোনা, অন্যের ঘরে হলে তাতেও যোগদান করো না। (কাসদুসসাবীল, পৃষ্ঠা২৫ ও ২৬; তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা ৬৩)।

বেহেশতী যেওর একটি কিতাব, (থানভী কর্তৃক রচিত) এটি হয়তো নিজে পড় অথবা শুন এবং এটা অনুযায়ী চলো।

এখন দেখা যাক বেহেস্তী যেওরে কি আছে, আলী বখশ, হসাইন বখশ, আবদুন্নবী ইত্যাদি নাম রাখা, এভাবে বলা যদি আল্লাহ ও রাসুল চান তাহলে অমুখ কাজ সম্পন্ন হবে, বলা শিরক। (বেহেস্তী যেওর, প্রথম খ০ পৃষ্ঠা ৩)

হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সামান্য ইলমে গায়ব আছে এ ধরণের ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞানতো যায়েদ, আমর, এমনকি প্রত্যেক শিশু, পাগল বরং সকল জীব-জন্তুরও আছে। (হেফজুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৬)।

এ হলো মৌং আশরাফ আলী থানভীর তালীমের কয়েকটি দৃষ্টান্ত। কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, থানভীর যাবতীয় রচনাবলীতে কি কোন ভাল বিষয় নেই। হ্যা অবশ্যই আছে। কিন্তু  দ্বীন, ঈমান কোন পণ্য সামগ্রী নয় যে, ভাল-মন্দ মিলিয়ে নেয়া যায়। ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান শানে একাধিক বে-আদবী করতে হবে এমনটি নয়; বরং একটি মাত্র অবমাননাকর উক্তিই যথেষ্ট। হযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা। আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবকে চতুষ্পদ জন্তুর ইলমের সাথে তুলনা করা কি মহান রাসূল সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে চরম বেয়াদবী নয়? এতো বড় জঘন্য বেয়াদবীর পর তার ভাল দিকগুলোর কোনই গুরুত্ব নেই ।

আসল কথা হলো, যখন দেওবন্দী-ওহাবীয়াত মুসলমানদের নিকট বিতর্কিত হয়ে গেল এবং তাদের স্বরপ সকলের নিকট উন্মোচিত হলো, তখন ওহাবীয়াত প্রচারের এক সুপরিকল্পিত পন্থা উদ্ভাবন করা হলো তাবলিগ জামাত । কালিমা-নামাযের নামে ওহাবী বানানোর এক কার্যকরী উপায়। এটাকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য বড় বড় সাওয়াবের প্রতিশ্রুতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাবলিগ জামাতে এক রাকাত নামায পড়লে সাত লক্ষ রাকাতের সাওয়াব, এক চিরা দিলে সাত হজের সাওয়াব, সাত পয়সা তাবলিগে গিয়ে খরচ করলে সাত লক্ষ পয়সার সাওয়াব ইত্যাদি । (বদরপুরের বাহাস, পৃষ্ঠা ৮ ও ৯)।
____________________________________
©(সংকলন- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা।
লেখকঃ- মাওলানা কাযী মঈন উদ্দিন আশরাফী)।
★ পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করার অনুরোধ রইল।
আমাদের সাথে থাকুন।
------------------------------------------

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।