জশনে জুলুছ।
★আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্!
★প্রজেক্ট- শরিয়তের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নাবি সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম।
★পর্ব-২
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
#জশনে_জুলুছ
~~তথ্য~সূত্র~নূর~নবী~অধ্যক্ষ~হাফেজ~এম~এ~জলিল~রহঃ~৩৯-৪১পৃঃ~~
♣প্রসঙ্গ: ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপ উপলক্ষে জুলুছ বা মিছিল বের করা:
*নবী করিম (দঃ) যখন ভূমিষ্ট হন তখন এমন কতিপয় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল যা সচরাচর দেখা যায় না। প্রথম ঘটনাটি স্বয়ং বিবি আমেনা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এভাবে-
"যখন আমার প্রসব ব্যাথা শুরু হয়, তখন ঘরে আমি একা ছিলাম এবং আমার শ্বশুর আবদুল মোত্তালিব ছিলেন কা'বাঘরে তাওয়াফরত। আমি দেখতে পেলাম, একটি সাদা পাখীর ডানা আমার কলিজায় কি যেন মালিশ করে দিচ্ছে। এতে আমার ভয়ভীতি ও ব্যথা বেদনা দূরিভূত হয়ে গেল। এরপর দেখতে পেলাম এক গ্লাস শ্বেরশুভ্র শরবত আমার সামনে। আমি ঐ শরবতটুকু পান করে ফেললাম। অতঃপর একটি উর্দ্ধগামী নূর আমাকে আচ্ছাদিত করে ফেল্লো। এ অবস্হায় দেখতে পেলাম-আবদে মোনাফ (কুরাইশ) বংশেল মহিলাদের চেহারা বিশিষ্ট এবং খেজুর বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘাঙ্গিনী অনেক মহিলা আমাকে বেষ্ঠন করে বসে আছেন। আমি সাহায্যের জন্য 'ওয়া গাওয়াছা' বলে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম-আপনারা কোথা হতে আমার বিষয় অবগত হলেন? উত্তরে তাঁদের একজন বললেন-আমি ফিরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া। আরেকজন বললেন আমি ইমরান তনয়া বিবি মরিয়ম এবং আমাদের সঙ্গিনীগন হলেন বেহেস্তী হুর। আমি আরও দেখতে পেলাম-অনেক পুরুষবেশী লোক শূণ্যে দন্ডায়মান রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে রূপার পাত্র। আরও দেখতে পেলাম-একদল পাখী আমার ঘরের কোঠা ঢেকে ফেলেছে। আল্লাহ তাআলা আমার চোখের সামনের সকল পর্দা অপসারণ করে দিলেন এবং আমি পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব দেখতে পেলাম। আরও দেখতে পেলাম-তিনটি পতাকা। একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে স্হাপিত, অন্যটি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কাবাঘরের ছাদে। এমতাবস্হায় প্রসব বেদনার চুড়ান্ত পর্যায়ে আমার প্রিয় সন্তান হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ট হরেন" (হযরত ইবনে আববাস সূত্রে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া)।
খাছায়েছে কোবরা ও তারিখূল খামিছ গ্রন্হে যথাক্রমে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রহঃ) এবং আল্লামা আবু বকর দিয়ারবিকরী (রহঃ) বিবি আমেনা (রাঃ)-এর একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন:
বিবি আমেনা বলেন- "যখন আমার প্রিয় পুত্র ভূমিষ্ট হলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম -তিনি সিজদায় পড়ে আছেন। তারপর মাথা উর্দ্ধগামী করে শাহাদাত্ অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় পাঠ করেছেন "আশহাদু আললা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি রাসূলুল্লাহ" (যিকরে জামীল সূত্রে)।
♣উপরোক্ত বর্ণনায় কয়েকটি বিষয় প্রমানিত হলোঃ
(১) নবী করিম (দঃ)এর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে বেহেস্ত ও আকাশ হতে পবিত্র নারী ও হুর ফিরিস্তাগন জুলুছ করে বিবি আমেনার (রাঃ) কুটিরে আগমন করেছিলেন এবং নবীজির সম্মানার্থে দন্ডয়মান হয়ে কিয়াম করেছিলেন। আর ফিরিস্তাদের হয়ে এই জুলুছ ছিল আকাশ ছোঁয়া জুলুছ। তাই আমরাও নবীজির সম্মানে কিয়াম ও জুলুছ করি।
(২) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরের আলোতে বিবি আমেনা (রাঃ) পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন। যাদের অন্তরে নবীজির নূর বিদ্যমান, সেসব অলীগণেরও দিব্যদৃষ্টি খুলে যায়। তাঁরা লওহে মাহফূযও দেখতে পান (মাসনবী শরীফ)।
(৩) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম উপলক্ষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্হান আলো ও পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা উত্তম। ইহা আল্লাহ ও ফিরিস্তাদের সুন্নাত।
(৪) কোরআন নাযিলের ৪০ বছর পূর্বেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বপূর্ণ দুটি আদর্শ-'কালেমা ও নামায' বাস্তবায়ন করেছিলেন। মূলত: থিউরিটিক্যাল কোরআন নাযিলের পূবেই প্রাকটিক্যাল কোরআন (নবী) নাযির হয়েছিলেন। কোরআন হলো হাদিয়া- আর নবী হলেন সেই হাদিয়ার মালিক। হাদিয়ে ও তার মালিকের মধ্যে যে সম্পর্ক-তা সর্বজন বিদিত।
(৫) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে জুলুছ এবং শুকরিয়ার আনন্দ মিছিল বের করা ফিরিস্তাদের অনুকরণ (আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত)।
মাওয়াহেব গ্রন্হের বর্ণনায় আকাশ হতে জমিন পর্যন্ত ফেরেস্তাদের জুলুছ বা মিছিল পরিস্কার ভাবে প্রমানিত হয়েছে। আল্লাহপাক বলেন, "তোমরা আল্লাহর ফযল ও রহমত সরূপ নবীকে পেয়ে আনন্দ উল্লাস করো" (সূরা ইউনুস ৫৮ আয়াতের তাফসীর দেখুন -রূহুল মাআনীতে)।
জালালুদ্দীন সুয়ূতী তাঁর আল হাভী লিল ফাতাওয়া গ্রন্হে ঈদে মিলাদুন্নাবীর দিনে সব রকমের আনন্দ আল্লাসকে বৈধ বলেছেন।
#পূর্ব_যুগের_জুলুছ
♣প্রাচীংকালে ১০৯৫-১১২১ খৃষ্টাব্দে মিশরে ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে ধর্মীয় জুলুছ বের করা হতো। গর্নমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে অংশ গ্রহন করতেন। উযির আপযালের যুগে এ আনন্দ মিছিল বের করা হতো। এ সময় রাজপথসমূহ লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো । পরবর্তীতে এ উত্সবের প্রসার ঘটে আফ্রিকার অন্যান্য শহরে, ইউরোপের স্পেনে এবং ভারতবর্ষে। (মাকরিজী,ইবনে খাল্লেকান)।
সুতরাং যারা জশনে জুলুছকে নতুন প্রথা , শিরিক ও বিদাত বলে-তারা অতীত ইতিহাস সম্পর্কে সম্পর্ণ অজ্ঞ এবং ইসলামি জ্ঞানের ক্ষেত্রে মূর্খ। নবীবিদ্বেষ তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে। (বিস্তারিত ইতিহাস জানার জন্যে দৈনিক জনকন্ঠ ৩০শে আগষ্ঠ '৯৬ 'মিলাদের ইতিহাস পড়ুন)। জশনে জুলুছ বের করা কোরআনী আয়াত দ্বারাই প্রমানিত।
#চলমান
Comments
Post a Comment