একটি মাজহাব কেন মানব?
চার মাজহাবই যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে আমি একেক আমলের ক্ষেত্রে একেক মাজহাবের অনুসরন কেন করতে পারব না, সকল আমলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি মাজহাবেরই অনুসরন কেন করতে হবে?
কৃতঃ মুহতারাম Sayed Golam Kibrya Azhari (হাফিযাহুল্লাহ)
--------------------------------------------------------------
আলহামদুলিল্লাহ, আমার ফেইসবুক আইডিতে গত কিছুদিনের আলোচনাগুলো (ফেইসবুকে লেখা ও ভিডিওগুলো) থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, চার মাজহাবই হক্ব , আমাদেরকে চার মাজহাব মানতে হবে। চার মাজহাবের চার ইমাম যথা ইমামে আজম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রত্যেকেই মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব (স্বাধীন আইনবেত্তা) ছিলেন। এছাড়াও আরো অনেক মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব ইমাম ছিলেন, যাদের মাজহাব পরবর্তীতে বিলীন হয়ে গেছে তাঁদের অনুসারীদের অবহেলা ও লিপিবদ্ধ না করে রাখার কারনে।
ইজতিহাদ কি? মুজতাহিদ কে?
بذل الفقيه وسعه لاكتساب حكم شرعي ظني عملي من أدلته التفصيلية
ইজতিহাদ হচ্ছে, "শরীয়তের ধারনাগত (অকাট্য নয়) কোন আমলি (আকীদার কোন বিষয়ে নয়) বিষয়ে শরীয়তের বিস্তারিত দলিল আদিল্লাহ ঘেটে সমাধান বের করতে একজন ফকিহের (ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদ) প্রচেষ্টাকে ইজতিহাদ বলে।" এই কাজ যিনি করেন তিনিই মুজতাহিদ।
মুজতাহিদ মূলত ২ প্রকার:
------------------------
১.মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব (স্বাধীন আইনবেত্তা) : যিনি কুরআন শরীফ, প্রিয় নবীর ﷺ সুন্নাহ, সাহাবাগনের কথাগুলো সম্পর্কে এবং ইসলামি শরীয়তের জ্ঞানের আরো যত বিস্তারিত শাখা-প্রশাখা আছে সেসব সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান রাখেন এবং ইজতিহাদ করে শরীয়তের হুকুম আহকামগুলোর সমাধান দিয়ে গেছেন। যিনি নিজে ফিকহ বা ইসলামি আইন শাস্ত্রের কিছু উসুল (মৌলিক নীতিমালা) দিয়ে গেছেন।
২.মুজতাহিদ মুক্বাইয়াদ ফিল মাজহাব (মাজহাবের অধীন আইনবেত্তা): যিনি কুরআন শরীফ, প্রিয় নবীরﷺ সুন্নাহ, সাহাবাগনের কথাগুলো সম্পর্কে এবং ইসলামি শরীয়তের জ্ঞানের আরো যত বিস্তারিত শাখা-প্রশাখা আছে সেসব সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান রাখেন এবং ইজতিহাদ করে শরীয়তের হুকুম আহকামগুলোর সমাধান দিতে পারেন। কিন্তু তিনি নিজে ফিকহ বা ইসলামি আইন শাস্ত্রের উসুল (মৌলিক নীতিমালা) দেন নাই, বরং পূর্ববর্তী কোন একজন মুজতাহিদ মুত্বলাকের মৌলিক নীতিমালা অনুসারে শরীয়তের জন্নী বা ধারনাগত (ক্বাতয়ী বা অকাট্য নয়) কোন আমলি (আকীদার কোন বিষয়ে নয়) বিষয়ের সমাধান দিয়ে থাকেন।
মুজতাহিদ মুত্বলাক (স্বাধীন আইনবেত্তা) আর আসবেন না এ বিষয়ে এই উম্মতের ইজমা আছে। কারন নতুন করে কোন মাজহাব করার কোন সুযোগ নেই, তা ফিতনার দিকে নিয়ে যাবে উম্মতকে। তবে মুজতাহিদ মুক্বাইয়াদ ফিল মাজহাব (মাজহাবের অধীন আইনবেত্তা) কাল কেয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবেন। কারন নতুন নতুন বিষয় আমাদের সামনে কেয়ামত পর্যন্তই আসতে থাকবে, যেগুলো চার মাজহাবের কোন এক মাজহাবের উসুল বা মৌলিক নীতিমালাসমূহ অনুসারে সমাধান দিতে হবে।
মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব ও মুজতাহিদ মুক্বাইয়াদ ছাড়া আর আমরা বাকি যারা আছি আমরা সবাই মুক্বাল্লিদ (কোন নির্দিষ্ট এক মাজহাবের ইসলামি আইনশাস্ত্রের অনুসরনকারী)।
এখন প্রশ্ন আসে: মুক্বাল্লিদের ক্ষেত্রে চার মাজহাবই যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে আমি একেক আমলের ক্ষেত্রে একেক মাজহাবের অনুসরন কেন করতে পারব না, সকল আমলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি মাজহাবেরই অনুসরন কেন করতে হবে?
তার উত্তর হচ্ছে: আমরা মুক্বাল্লিদরা একসাথে চার মাজহাবের অনুসরন করতে পারব না, এতে বিশাল বড় সমস্যা আছে। কারণ প্রতিটি মাজহাবের মৌলিক নীতি বা উসুলে ফিকহ অনুসারে, শরীয়তের হুকুম আহকামের কিছু কিছু বিষয়ে কিছু "রুখসত" বা "ছাড়" আছে, যেমন হজ্জে তাওয়াফে বিদা না করলেও হজ্জ আদায় হয়, এটা মালিকি মাজহাবের মত। শাফিয়ি মাজহাব মতে দাড়ি রাখা সুন্নাহ, না রাখলে গোনাহগার হয় না। কোন কোন মাজহাবে জামাতে নামাজ আদায় ও ঈদের নামাজ সুন্নাহ বা ফরজে কেফায়া, প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক নয়। হানাফি মাজহাব মতে জুমুয়ার নামাজ শুধু শহরবাসীর জন্য ফরজ।
কোন কোন মাজহাব মতে পরিধেয় স্বর্নালঙ্কারের জাকাত ফরজ না, সব্জি ও ফলমূলের জাকাত দেয়া ফরজ না। কোন কোন মাজহাবে হজ্জের সময় ওমরা করা আবশ্যক না। কোন কোন মাজহাবে পাগল ও শিশুদের সম্পদ থেকে জাকাত আদায় আবশ্যক নয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
গবিভিন্ন মাজহাবের মৌলিক নীতি অনুসারে এরকম ছাড়ের শত শত উদাহরন দিতে পারব। ভিন্ন ভিন্ন আমলের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মাজহাবের এই ছাড়গুলো খোঁজে খোঁজে যদি কেউ সুযোগ নিতে চায়, তবে সে হবে দুনিয়ার নিকৃষ্ট সুবিধাবাদী মুসলমান। তাই সাধারন মানুষের জন্য সকল আমলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি মাজহাবের অনুসরনের বিকল্প নেই, কিন্তু চার মাজহাবের আমলকেই হক্ব মানতে হবে। এর ওপরেই উম্মতের ইজমা' বা ঐক্যমত হয়েছে।
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলইﷺ অধিক অবগত আছেন।
Comments
Post a Comment