ওহাবি সম্প্রদায় কিয়াম বিরুধী।
মিলাদ ও কিয়ামের বিধান-৯*
কিয়াম বিরোধীদের অপব্যাখ্যামূলক দলীল
খন্ডনঃ
_____________________________
ওহাবী সম্প্রাদায় কিয়াম বিরোধী ।
তারা কিয়ামকে হারাম বলে. বিদাত
বলে এবং তাদের দাবীর পক্ষে কিছু হাদিস ও
পেশ করে-কিন্তু তার সঠিক ব্যাখ্যা করেনা।
যদিও ব্যাখ্যে করে তাহলে অপব্যাখ্যা করে ।
যেমনঃ
ওহাবী দলিলঃ হাদিস -১।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন.
সাহাবায়ে কেরামের নিকট নবী করিম (দঃ)
হতে আধিক প্রিয় আর কেউ ছিলেননা। যখন
তারা নবী করিম (দঃ) কে আগমন
করতে দেখতেন-তখন দাঁড়াতেননা । কেননা.
তারা অবগত ছিলেন যে. তিনি এরূপ
করা অপছন্দ করতেন (তিরমিজী শরীফ) ।
ওহাবী দলিলঃ হাদিস-২
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রাঃ)
বর্ণনা করেন. নবী করিম (দঃ) ইরশাদ
করেছেনঃ "যে ব্যাক্তি এরূপ পছন্দ করে যে ,
লোকেরা তাঁর সামনে পুতুলের মত
দাঁড়িয়ে থাকুক. সে যেন তার
ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়
" ( তিরমিজী ও আবু দাউদ)
ওহাবী দলিলঃ হাদিস (৩) ।
হযরত আবু উমমা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত-
তিনি বলেন. নবী করিম (দঃ) লাঠিতে ভর
দিয়ে ঘর থেকে বের হলেন। আমরা তাঁর
সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। হুজুর (দঃ) ইরশাদ
করলেনঃ "তোমরা পারস্য দেশিয় লোকেদের
মত কিয়াম করোনা। তারা একজন একজন
অপরজনকে যেভাবে তাজিম করে-
সে ভাবে নয় "(আবু দাউদ) ।
_______সন্দেহ খন্ডন মূলক জবাব
উপরোক্ত তিনটি হাদিস মেশকাত
শরীফে সংকলিত হয়েছে । তিরমিজি ও আবু
দাউদ উক্ত হাদীসগুলো নিজ নিজ
গ্রন্হে সংকলন করেছেন । এগুলোতে বিশেষ
ধরণের কিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে । মূল
কিয়াম নিষেধ করা হয়নি । মূল কিয়াম
যে সুন্নাত -তার প্রমান বুখারী ও মুসলিম
শরীফে আছে । একই মিশকাত
শরীফে কিয়ামের পক্ষে হযরত আবু
হোরায়রার হাদীস এবং হযরত সাআদ (রাং)
সংক্রান্ত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর হাদিস
ও বর্ণিত হয়েছে- যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম
বর্ণনা করেছেন-
"হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- হুজুর
(দঃ) মসজিদে নববীতে আমাদের
মাঝে বসে সব সময় প্রবিত্র হাদীস বয়ান
করতেন। যখন তিনি মজলিস
থেকে দাঁড়িয়ে যেতেন- তখন আমরাও তাঁর
সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যেতাম । যে পর্যন্ত
না তিনি কোন বিবির ঘরে প্রবেশ করতেন-
সে পর্যন্ত আমরা তাঁর
সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকতাম" (মিশকাত
শরীফ বাবুল কিয়াম পৃষ্ঠা -৪০৩)।
হযরত আবু সাইদ
খুদরী বর্ণনা করেনঃ মদিনার
একটি ইহুদী সম্প্রদায়স- বনু কুরাইযা হুজুরস
(দঃ) এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে খন্দকের
যুদ্ধের সময় মদিনা আক্রমন করার
অপরাধে মুসলিম বাহীনি কতৃক অবরূদ্ধ
হয়ে আত্মসমর্পনের উদ্দেশ্যে যখন হযরত
সাআদ ইবনে মাআয (রাঃ) -এর বিচার
মেনে নিতে রাজী হলো । তখন নবী করিম
(দঃ) হযরত সাআদকে আনার জন্য লোক
পাঠালেন। হযরত সাআদ ইবনে মাআয (রাঃ)
হুজুর (দঃ) এর
নিকটবর্তী স্হানে তাবুতে ছিলেন । হযরত
সাআদ (রাঃ) গাধার পিঠে করে আসলেন ।
যখন তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী হলেন
- তখন নবী করিম (দঃ) মসজিদে উপস্হিত
মদিনাবাসী আনসারগনকে লক্ষ করে বললেন-
"তোমরা তোমাদের নেতার সম্মানে দাঁড়িয়
যাও"। (বুখারী ও মুসলিম এবং মিশকাত বাবুল
কিয়াম পৃষ্ঠা ৪০৩)। ইয়াহুদিদের
আত্মসমর্পনের বিচারকাযেয় বিশদ বিবরন
বুখারীর যুদ্ধবন্দী অধ্যায়ে আছে ।
তাহলে কিয়ামের পক্ষে ও বিপক্ষে বর্ণিত
হাদীসগুলো একসাথে করে বিশ্লেষণ
না করে ঢালাওভাবে "কিয়াম নিষিদ্ধ" বলার
মধ্যে তো সততার প্রমান
পাওয়া যায়না এবং এটা কোন ঈমানদার
আলেমের কাজ হওয়া উচিত নয়।
এখন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়যে .
উল্লেখিত হাদিস সমূহে নবী করিম (দঃ)
নেতার সম্মানে দাড়ানোর নির্দেশ করেছেন
এবং হুজুরের সম্মানে সাহাবীগণের দীর্ঘ
কিয়ামের বিষয়ে হুজুরের কোন প্রকার
নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। তাহলে বাকী তিন
হাদীসে তিনি কি কারণে কিয়াম নিষেধ
করলেন? কোন পরিবেশে তিনি সাহাবীদের
দাঁড়ানো অপছন্দ করেছেন এবং কোন
ধরনের কিয়ামকে তিনি নিষিদ্ধ করেছেন-
তা খতিয়ে দেখলেই সব পরিস্কার
হয়ে যাবে যে. কি কারণে তিনি ঐ বিশেষ ধরনের
কিয়াম অপছন্দ করেছেন ।
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদিসের জবাবঃ
কিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত হাদিসে বুঝা যায়
যে. সাহাবীগন হুজুরের আগমনে কিয়াম
করতেননা . কেননা তিনি "এরূপ কিয়াম"
অপছন্দ করতেন। "এরূপ কিয়াম-এর ধরন
সম্বন্ধে মোল্লা আলী ক্বারী (রাহঃ)
মিরকাত গন্হে বর্ণনা করেছেন- নবী করিম
(দঃ) সাহবীদের ঐ ধরনের কিয়ামকেই
অপছন্দ করতেন-যে ধরনের চরম বিনয়মূলক
কিয়াম আল্লাহর জন্য করা হয়।
অহংকারী ব্যাক্তিদের জন্য যে ধরনের
বিনয়মূলক কিয়াম করা হয়-ঐ ধরনের
কিয়ামও তিনি নিজের জন্য অপছন্দ করতেন
এবং ঐ ধরনের কিয়ামের বিরোধিতা করতেন
।
হযরত মুয়াবিয়া বর্ণিত হাদীসের জবাবঃ
কিয়ামের বিরুধীদের পেশকৃত ২য় হাদীসের
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে .
কারে সম্মানে মূর্তিবত্ দাঁড়িয়ে থাকাকেই
হুযুর (দঃ) নিষিদ্ধ করেছেন. মূল কিয়ামকে নয়
। হাদীসখানা স্বব্যাখ্যাত । তদুপরি-
হাদিসখানা হুজুরের বেলায় প্রযোজ্য নয় ।
অহংকারী ও দাম্ভিক ব্যাক্তির ক্ষেত্রেই
প্রযোজ্য। হুযুরের এই নিষেধ ছিল শর্ত
সাপেক্ষ।অর্থাত্ মুর্তিবত্ কিয়াম নিষিদ্ধ-
মূল কিয়াম নিষিদ্ধ নয়।
হযরত আবু উমমার হাদীসের জবাবঃ
কিয়াম বিরুদের পেশকৃত ৩য় হাদীসের
ব্যাখ্যা হচ্ছে- পারস্যবাসীর ন্যায় নতজানু
হয়ে মূর্তিবত্ রাজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার
মত কিয়াম অবশ্যই নিষিদ্ধ । নবী করিম (দঃ)
তাদের অনুরূপ মূর্তিবত্ নতজানুর কিয়ামকেই
নিষিদ্ধ করেছেন- মূল কিয়াম নিষিদ্ধ
করেননি ।
তিনি একথা বলেননি "তোমরা কিয়াম
করোনা" - বরং বলেছেন-
"পারশ্যবাসী অগ্নি পূজকের ন্যায় কিয়াম
করোনা" । যেমন কে বললো- "গরুর মত
পানি পান করোনা" এর অর্থ হলো -
পানি পান করো- তবে গরুর মত নয়" । অনুরূপ
ভাবে হাদীসের অর্থ হবে- কিয়াম করো-
তবে পায়স্যবাসী অগ্নি উপাসকদের মত
নতজানু হয়ে নয়" । কিয়াম
বিরুধীরা ব্যাখ্যা না করেই শাব্দিক
অর্থে হাদীস বয়ান করায় ভুলের
সৃষ্টি হয়েছে।তারা হাদিসকে ঢাল স্বরূপ
ব্যাবহার করে মাত্র।যদি তারা সত্য গ্রহন
করতো এবং সঠিক জিনিষ মেনে নিতো-
তাহলে হযরত সাআদ ও হযরত আবু
হোরায়রার হাদীস দুটিও বর্ণনা করতো।
কিন্তু তা তা করেনা। দুটিকে গোপন
করে তাদের স্বপক্ষের বাহ্যিক সহায়ক
তিনটি হাদীস তারা আক্ষরিক অর্থে প্রচার
করে।এটা আমানতধারী নয় বরং রাসূলের
হাদীস গোপন করার অপরাধ।
Comments
Post a Comment