ইমাম আলা হযরত- মুসলিম সমাজ যার কাছে ঋণী।
ইমাম আলা হযরত: মুসলীম সমাজ যার কাছে ঋণীঃ
-----------------------------------------
যখন এ উপমহাদেশে ইসলামী সালতানাতের সূর্য অস্তমিত হচ্ছিলো, অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছিলো, হৃদয় সূর্য ড়ুবন্ত প্রায় হলো এ বুকের সাহস দ্রুত হ্রাস পাচ্ছিলো, ঠিক তখনই আল্লাহর রহমতের সমূদ্র ঢেউ খেললো। পুনরায় একটি সূর্য উদিত হলো। সেটা আবার আকাশকে আলোময় করলো। ডুবন্ত হৃদয়কে উঠে আসার অবল্বন দিলো। সকলের মনে নতুন করে সাহস যোগালো। অন্ধকার আকাশে উদিত এ সূর্য কে ছিলেন? তিনি হলেন ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন মিল্লাত আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলবী (রহঃ)। আরব ও আজম যার মহত্ব ও সম্মানের পক্ষে সাক্ষ্য দিলো, যিনি নিজের খোদা-প্রদত্ত অসাধারণ যোগ্যতা, নাম ও খ্যাতিকে দ্বীন-ইসলাম ও ইসলামের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তের প্রসার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উত্সর্গ করেছিলেন এবং যার অসাধারণ ও ফলপ্রসূ অবদানগুলো গোটা মুসলিম সামাজের তার প্রতি চিরঋণী করে রেখেছে। ইমাম আহমদ রেযা বেরলবী (রহঃ)র বিশাল কর্মময় জীবনী পর্যালোচনা করলে উপরিউক্তি সত্ মধ্যাহৃ সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুখের বিষয় যে, এ ক্ষুদ্র পরিসরে তার জীবনী বিস্তারিতভা আলোচনা করা সম্ভব না হলেও বিভিন্নভাবে এ মহান ইমামের জীবনের উপর আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে, আগামীতেও হতে থাকবে (ইনলাআল্লাহ)। আ
জ এদেশের প্রায় সবার নিকঠ একথাটি স্পষ্ট হয়েছে যে, শতাব্দির এ মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদ জন্মগতভাবে অসাধরণ প্রতিভাবান (আবক্বারী) ও পঞ্চান্নটি বিষয়ে সহস্রাধিক অকাট্য ও প্রমাণ্য গ্রন্হ- পুস্তকের প্রণেতা ছিলেন। তিনি বেলায়তেরেও উচ্চাসনে আসীন ছিলেন তিনি সাইয়্যেদ আ-লে রাসূল, মারহারা শরীফের হাতে বায়আত গ্রহন করেন। ২১ বছর বয়সে আপন পিতার সাথে হজ করতে গেলে ওলামা-ই হিজায তার ব্যক্তিত্বের প্রতি প্রভাবিত হয়ে তাকে যিয়াউদ্দীন আহমদ (দ্বীনের আলো আহমদ রেযা/হুজুর আহমদ মুজতাবার দ্বীনের আলো) উপাধিতে ভুষিত করেছিলেন। প
পাক-ভারত উপমহাদেশের বৃহত্তর দ্বীনী প্রতিষ্টান মানযারুল ইসলাম কায়েম করেছেন। ১৯১১ ইংরেজীতে ১৩৩০ হিজরী মুসলীম উম্মাহর জন্য বিশুদ্ধতম উর্দু তরজুমা ই কোরআন কানযুন ঈমান প্রণয়ন করেন। এ মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদের প্রবিত্র জন্ম ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিজরি, ১৪ জুন ১৮৫৬ ইংরেজিতে এবং ওফাত ২৫ সফর, ১৩৪০ হিজরিতে, নভেম্বর ১৯২১। আ
লা হযরতের উপরিউক্ত সহস্রাধিক গ্রন্হ-পুস্তকের মধ্যে ফতোয়ায়ে ই আলমগীরীর পর হানাফী ফিক্বহের মহাক্বীর্তি হচ্ছে ফতোয়ায়ে ই রেজভিয়্যাহ। তার এর ফাতওয়া গ্রন্হ ইসলামী আইন শাস্ত্রের অন্যতম প্রধান ও নির্ভরযোগ্য উত্স্য-গ্রন্হ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ড়ঃ মুহাম্মদ ইকবারলফিকহ শ্রাস্ত্রে ইমাম আহমদ রেযার (রহঃ) দক্ষতা, তীক্ষ্ম দৃষ্টি, মেধা ও গবেষণার গভীরতার স্বীকৃতি স্বরূপ বলেছেন- ভারতে এ শেষ যুগে হযরত আহমদ রেযার (রহঃ) মত সুস্হ-স্বভাব ও মেধাসম্পন্ন ফকীহ (ফিকহশাস্ত্রবিদ ) আর পয়দা হয়নি। আমার এ মন্তব্য তার ফতোয়া গ্রন্হ পাঠ - পর্যালোচনা করে স্হীর করেছি, যা তার মেধা, তীক্ষ্মবুদ্ধি উন্নত স্বভাব, পূর্ণ অনুধাবন ক্ষমতা ও দ্বীনী জ্ঞানের গভীরতার জ্বলন্ত সাক্ষী। ই
মাম আহমদ রেযার (রহঃ) মহান জ্ঞানগত প্রচেষ্টা ও সঃস্কারমুলক কর্মতত্পরতার প্রতি গভীরভাবে দেখা হলে, তাকে ইমাম গাযযালী, ইমাম মুহিউদ্দীন ইবনুল আরবী, ইমাম আবুল হাসান শারানী. ইমাম আবুল মানসুর মা তুদীদী, আল্লামা আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে তাইয়্যেব বাকিল্লানী ও হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সান (রহঃ) এর মতো মহান জ্ঞানী, রূহানী ও সংস্কারক ব্যক্তিবর্গের কাতারেই দেখা যায়।
এভাবে বিশ্ববরেণ্য জ্ঞানী- গুনী ব্যক্তীর্গের মন্তব্যাদি ও বাস্তবতার নিরিখে ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) মুসলিম সমাজের জন্য একটি মহা নিয়ামত ও গৌরবময় ব্যক্তিত্ব। তার প্রতি চিরদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবেনা।
পক্ষান্তরে, অকৃতজ্ঞ, ঈর্ষাপরায়ণ ও স্বার্থপর লোকেরা তার বিরোধিতা করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। আমাদের বাংলাদেশেও আক্বীদাগত এবং আদর্শগত বেয়াদব বিরোধীরাও সুযোগ বুঝে এ মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদের বিরুদ্ধে মূখ খোলতে চাচ্ছে। কিন্তু সূখের বিষয় যে, প্রতিটি যুগে এ বিরুদ্ধবাদীদেরও দাঁত ভাঙ্গা জাবাব দেওয়া হচ্ছে বরং তাদের ভ্রান্ত মুখোশ একের পর জাতির কাছে ক্রমাগত প্রকাশিত হচ্ছে। এহেন পরিস্হিতিতে আল্লামা মুহাম্মদ শরফ কাদেরী এক অবিবেচক ও মিথ্যাচারী লেখক 'ইহসান-ই ইলাহী যহীরের আল বেরলভিয়্যাহ'র দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে আল বেরলভিয়্যাহ কা তাহক্বীক্বী আওর তানক্বীদী জায়েযাহ' নামক যে পুস্তকটি লিখেছেন তার ভূমিকায় ড়. মুহাম্মাদ মাসউদ আহমদ (রহঃ) একটি প্রামাণ্য প্রতিবেদন লিখেছেন। বর্তমানকার অবস্হার পরিপ্রিক্ষিতে আমি সেটা সংক্ষিপ্তকারে উপস্হাপন করা সমীচীন মনে করছি। তা নিম্মরূপ-
আ'লা হযরতের তিরোধানের পর তার প্রতি সত্যপন্হীদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাকে নিয়ে ব্যাপক চর্চা. পক্ষান্তরে বাতিলপন্হী হিংসুকদের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দি কাল অতিবাহিত হয়ে গেলো। হঠাত্ ইসলামী গুলশানে নতুন বসন্তের মনোরম হাওয়া বইতে লাগলো। প্রকৃত ইসলামী বৃক্ষের ড়ালগুলো আন্দোলিত হচ্ছিল। ফুল ফুটতে আরম্ভ করলো। বুলবুলিগুলোর গুঞ্জন শুরু হলো। আজ থেকে ২৮ বছরাধিক কাল পূর্বে পাকিস্তানের লাহোর কেন্দীয় মসজিদে রেযা' (মারকাযী মজলিসে রেযা) নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কায়েম হলো। এটা ইমাম আহমদ রেযার জীবন ও চিন্তাধারার উপর বহু পুস্তকের লক্ষ লক্ষ কপি প্রকাশ ও প্রচার করলো। এক যুগাধিকাল পুর্বে করাচীতে 'ইদারাহ- ই তাহকীকাত-ই ইমাম আহমদ রেযা প্রতিষ্টিত হলো। এটাও তার প্রকাশিত বহু লেখনী গোটা দুনিয়ায় প্রচার করে যাচ্ছে। অর্ধযুগ পূর্বে লাহোরে 'রেযা একাড়েমী, লাহোর' প্রতিষ্ঠালাভ করে দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া রেযা একাড়েমী, ইউ-কে, রেযা একাড়েমী মুম্বাই, সুন্নী রেযভী সোসাইটি (দক্ষিণ আফ্রিকা), রেযা ইন্টারন্যাশনাল একাড়েমী (সাদিক আবাদ), আল মুজাম্মাঊল ইসলামী (ইসলামী কমপ্লেক্স, মুবারকপূর) , ইত্যাদি ইমাম আহমদ রেযার জীবন ও চিন্তাধারার উপর অবিরাম গতিতে গ্রন্হ-পুস্তক প্রকাশ করে যাচ্ছে। সুন্নী দারুল ইশাআত, মুবারকপুর 'ফতোওয়া ই রেযভিয়াহ' প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গেক্রমে উল্লেখ্য, আমাদের বাংলাদেশেও ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাড়েমী, চট্টগ্রাম। আ'লা হযরত ফাউন্ড়েশন বাংলাদেশ এবং রেযা ইসলামিক একাড়েমী বাংলাদেশ ইত্যাদি ইমাম আহমদ রেযা ফাজেলে বেরলভী (রহঃ) র জীবন ও কর্মের উপর এবং তার মূল্যবান কিতাবগুলোর অনুবাদ, প্রকাশনা ও প্রচারের ক্ষেত্রে কাজ করে আসছে। আলহামদু লিল্লাহ! এ সব প্রতিষ্টানের প্রচেষ্টার সুফলও বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে উঁচু পর্যায়ের বুদ্বিজীবী মহেলও ইমাম আহমদ রেযার চর্চা হচ্ছে। পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার প্রশ্নগুলোতে ইমাম আহমদ রেযার উপর প্রশ্ন করা হচ্ছে। পাক ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গু লোতে 'এম ফিল' ও 'পি এস ড়ি' এর জন্য গবেষণামূলক প্রবন্ধ (Thesis) লেখা হচ্ছে, ড়িগ্রী পাওয়া যাচ্ছে।
উপমহাদেশের ১৯৯১ ইংরেজি পর্যন্ত, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ জন স্কলার গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখে 'এম ফিল' ও 'পি এস ড়ি' ডিগ্রী লাভ করেছেন। এগারজন স্কলার পবেষণারত আছেন, আরো অনেকে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আসুন আমরা আলা হযরতকে নিয়ে চর্চা করি।
Comments
Post a Comment