হজ্ব সম্পর্কিত তথ্যবলী।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

★হজ্ব, ---------১ম পর্ব

★১------হজ্বের অর্থ কি এবং হজ্বকে কেন হজ্ব বলে?

উত্তরঃ-
হজ্বের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা ও সংকল্প। যেহেতু তাতেও মানুষ আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে সফর করে তাই তার নাম হজ্ব।

★প্রশ্নঃ--------ইসলামে হজ্ব কেন ফরজ?
অকারণে মুসলমানদেরকে সফরের কষ্ঠ
ও টাকা খরচে কেন ফেলা হয়?

উত্তরঃ-
হজ্বে ধর্মীয় এবং পার্থিব হাজার সুবিধা আছে।
পার্থিব সুবিদা সমূহ হলো,

★আনন্দের জন্য বাগানে ভ্রমন করতে যায়, তথাকার আবহাওয়া মস্তিস্ককে উর্বর করে। তথাকার সুঘ্রাণ তাকে সুভাসিত করে।
অনুরুপ পবিত্র হেরেমের জমিন ইমানের বাগান। সেখানকার আবহাওয়া ইমানকে সতেজ করে। যেহেতু উহা হাজার হাজার নবিদের অতিক্রমস্হল এবং লক্ষ লক্ষ নবিদের দাফনের স্হান তাই তথাকার সুঘ্রাণ ইমানকে সুভাসিত করে।

★হজ্বে জলে ও স্হলে সফর করতে হয় যাতে মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়।

★হজ্বে প্রত্যেক দেশের মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ হয়, যাতে বিশ্ব মুসলিমে একতা ও সংহতি বাড়তে থাকে।

★হজ্ব মুসলমানদের বার্ষিক কনফারেন্স।
  যাতে অনায়সে মুসলমানগণ একত্রিত হয়।

★হজ্বে সফরের মূল্যায়ন ও মুসাফিরের কষ্ঠ অনুভুত হয়। যা দ্বারা মানুষের মধ্যে মুসাফিরদের সেবার মানসিকতা ও প্রেরণা তৈরী হয়।

★হজ্ব দ্বারা মানুষ কষ্ঠ সহ্য করার অভ্যস্ত হয়। কেননা উভয় হেরেম শরীফে অবশ্যই কষ্ঠ সহ্য করতে হবর।

★★হজ্ব----২য় পর্ব

★৩- হজ্বে ধর্মীয় সুবিদা সমূহ  কি কি?

উত্তরঃ
শত শত সুবিদা আছে।

★হজ্বে মুসলমান আল্লাহর জন্য নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করে, যাতে মুহাজিরেরর সাওয়াব আছে।

★হজ্বে পয়গম্বর স্মরণ নবায়ন হয়। যা দ্বারা তাদের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। নবিদেরকে ভালবাসাই হলো ঈমানের অঙ্গ।

★হজ্বে হযরত হাজেরা,  হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিমুস সালামের অনুসরণ।  ভাল লোকদের অনুসরণই ভালো।

★হজ্বে হযরত হাজেরার অসহায়ত্ব এবং মহান প্রভুর কুদরত মনে পড়ে। যা দ্বারা মানুষের  মধ্যে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়। কেননা হযরত হাজেরার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতারর মূর্ত প্রতিক হচ্ছে।  হজ্ব দ্বারা কুরবানির প্রেরণা সৃষ্টি হয়। মিনায় হযরত খলিল নিজ সন্তানকে কিরবান দিয়েছেন যার স্মৃতিচারণে হাজীরা এখনো কুরবানি দিচ্ছেন।

★৪-------------------------হজ্বে তাওয়াফ কেন হয়?
কাবার চতুর্দিকে ঘোরা পাগলের মত মনে হয়।

উত্তরঃ-
হজ্বে প্রেমের প্রাধান্য।
পতঙ্গ বাতির জন্য পাগল, তারা চতুর্দিকে ঘোরে, হাজ্বিও প্রভু প্রেমিক, তাঁর ঘরকে বাতি মনে করে তার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে।

★৫---------হজ্বে এহরাম বাঁধা হয় কেন?

উত্তরঃ-
যেভাবে নামাযে প্রবেশ তাকবির তাহরিমার মাধ্যমে হয় অনুরুপ হজ্বে প্রবেশ এহরাম পরিধান দ্বারা হয়। এহরামের কাপড়ে কাফনের কথা মনে পড়ে, আগামিতে আমাকে এভাবে সেলাই বিহীন কাপড় পরে কবরে যেতে হবে, এহরামে আমির ফকিরকে একই রকম করা হয়েছে। এহরামে প্রেমিক সাজিয়ে প্রভুর দ্বারে ´পসস্হিত করা হয়েছে। এলোমেলো চুল, লম্বা নখ, কাফনের কাপড় গলায় ঢেলে আশেক ´পসস্হিতিরর ধ্বনি তুলতে হাজির হয়েছে।

★★★৩য় পর্ব---

★প্রশ্নঃ- হজ্বের জন্য মরুভুমিকে কেন নির্ধারণ করা হলো? সবুজ শ্যামল উদৌানে হওয়া উচিৎ ছিলো?

উত্তরঃ-
কা'বার অবস্হান স্হল আবাদ ভূমির মধ্যবর্তী স্হানে অবস্হিত। তা থেকে ভূমি সম্প্রসারিত হয়েছে। মধ্যবর্তী স্হানে প্রত্যেক দেশের মানুষ পৌঁছা সহজ।
এ ভূমিতে ঐ সব নবীদের পবিত্র আগমন হয়েছে
হজ্ব যাঁদের স্মৃতিচারণ।

★প্রশ্নঃ- তাহলে তো ঐ স্হানকে সবুজ শ্যামল করে দেয়া উচিত্ ছিল। মরুভুমি করে রাখা হলো কেন?

উত্তরঃ-
যাতে হাজ্বী কেবল প্রভুর রেজামন্দির জন্য এখানে আসে,পার্থিব অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে। সবুজ শ্যামল দেশে ভ্রমন, ব্যবসা, বিশ্রাম ও বিলাসিতা ইত্যাদি উদ্দেশ্য হতে পারে। এ অনাবাদী ও মরুভুমিতে ইবাদত ব্যাতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য হতে পারে না। তাই হাজ্বীকে সেলাই করা কাপড় খুলে সেলাইবিহীন কাপড় পরানো হয়। যাতে বাহ্যত বিলাসিতাও শেষ হয়ে যায়। বিলাসিতা করতে চাইলে লন্ডন প্যারিস যাও। ইবাদত করতে চাইলে আরবে পসস্হিত হও।

★প্রশ্নঃ-
হুজুর আলাইহিস সালামের অবস্হান মক্কা মুয়াজ্জামায় কেন হলো না? এত দূর পবিত্র মদিনাতে হয়েছে।

উত্তরঃ-
যাতে হজ্বের উসিলায় যিয়ারত না হয়, যিয়ারতের জন্য পৃথক সফর হয়। যাতে পর্যটকের কাছে জিয়ারতের সম্মান সৃষ্টি হয়। তাই হুজুর  আলাইহিস সালামের জন্ম কোন প্রসিদ্ধ মাস রমজান ইত্যাদিতে হয় নাই, না কোন প্রসিদ্ধ দিন শুক্রবারে হয়েছে। কেননা হুজুরের সংস্পর্শে অন্যরা সম্মানিত হয়েছে। প্রভু ব্যাতীত অন্য কোন জিনিস দ্বারা হুজুরের সম্মান হয় নাই।
(মদিনায় রাসূল গিয়েছেন বলেই মদিনা পূণ্যভূমি হয়েছে,)

★★★★হজ্ব------৪র্থ  পর্ব।

প্রশ্নঃ- আরাফা, মুযদালিফা ও মিনা প্রয়োজন কেন?

উত্তরঃ-
যেখানে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অতিক্রম হয় অথবা যে স্হানে কোন প্রিয় বান্দার উপর প্রভুর ফজল অবতীর্ণ হয়, ঐ স্হানটি কিয়ামত অবধি রহমত অবতনের স্হান হয়ে যায়। একই অবস্হা তারিখও দিনসমূহেরও।  মিনাতে আদম আলাইহিস মালামের তাওবা কবুল হয়েছে। আনাফাতে হযরত আদম ও হাওয়ার সাক্ষাৎ হয়েছে। মুযদালিফায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম তাওবা কবুল হওয়ার পর অবস্হান করে আল্লাহর ইবাদত করেছেন। মিনাতে হযরত খলিলুল্লাহ ছেলের কুরবানি দিয়েছেন। এ কারণে এ স্হানগুলো কিয়ামত অবধি বরকতময় হয়ে গেল। যেহেতু এ কাজগুলো উক্ত তারিখ সমূহে হয়েছিল তাই তারিখও ঐগুলোই নির্ধারিত রইল।

★প্রশ্নঃ- পবিত্র মদিনাতে উপস্হিত কেন দেয়া হয়?

উত্তরঃ-
নিঃসন্দেহে তাঁর রহমত প্রত্যেক স্হানে আছে তবে প্রত্যেক স্হানে পাওয়া যায় না। পবিত্র মদিনাও বুজুর্গদেন আস্তানা প্রভুর রহমত পাওয়ার স্হান।  ট্রেন সমস্ত লাইন দিয়ে অতিক্রম করে তবে তা পাওয়ার জন্য স্টেশনে যেতে হয়। বিদ্যুতের স্রোত সব তারে আছে তবে জ্যোতি ঐখানে পাওয়া যাবে যেখানে বাল্ব থাকবে। এ স্হানগুলো প্রভুর রহমতের স্টেশন অথবা বৈদ্যুতিক বাতি। প্রভু প্রত্যেক স্হানে রিযিক দেন। প্রত্যেক স্হানে রোগ থেকে মুক্তি দেন। তবে রিযিক অন্বেষণে ধনীদের দ্বারে আরোগ্যতা লাভের জন্য ডাক্তারদের কাছে যেতে হয়। অনুরুপ পবিত্র মদিনা আধ্যাত্মিক রিযিক ও আরোগ্যতা লাভের স্হান।

★★★★★হজ্ব-------৫ম পর্ব

প্রশ্নঃ- মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারকে এবং সাহাবাগনের মাজার শরিফে সালাম কেন পড়া হয়?

উত্তরঃ
ভিক্ষা প্রার্থী দাতার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ঘর ও ঘরের বাসিন্দাদের দোয়া করেন। এ দোয়াগুলো যেন ভিক্ষা চাওয়ার প্রন্হা। আমরা ভিক্ষুক তাঁদের দরজায় আহবান করার জন্য সালাত ও সালাম আরজ করি। যাতে ভিক্ষা পাওয়া যায়।তাছাড়া আল্লাহ ইরশাদ করেন-
" যখন তোমাদের কেউ সালাম করে তা থেকে উত্তম জওয়াব দাও অথবা কমপক্ষে তার অনুরুপ দাও।"
আমরা অধমদের দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে হযরত সাল্লাল্লাহু  তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সালামের অবশ্যই উত্তর দেবেন।বলবেন,
"হে আমার উম্মত! তোমরাও শান্তিতে থাক।"হুজুরের দোয়া কবুলই হয়।যদি একবারই নিরাপদ থাকার দোয়া দেয় তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা উভয় কুলের বিপদ থেকে নিরাপদে থাকব।এ সালাত ও সালাম দোয়া নেয়ার কৌশল।

★★★★★★হজ্বের আলোচনা--------পর্ব--- ৬

★★★প্রশ্নঃ-
মদিনা শরিফের মাটিতে আরোগ্য লাভের মাটি বলা হয় কেন?
যমযমের পানি ঔষধ ও বরকত লাভের উদ্দেশ্যে কেন ব্যবহার করে?

★★★উত্তর

যমযমের পানি একজন পয়গম্বরের চরণের স্পর্শে সৃষ্টি হয়েছে।মনে হয় তাঁর চরণের ব্যবহত পানি।
পবিত্র মদিনার বালু কনা হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চরণের স্পর্শ পেয়েছে।
তাই তাতে আরোগ্য দেয়ার যোগ্যতা এসেছে।
মৌমাছির মুখে ফুলের হালকা পাতলা রস গাঢ় মধুতে রুপান্তর হয়।রেশমি পোকার মুখের সংস্পর্শে শাহতুত ফল বৃক্ষের পাতা রেশম বনে যায়।হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামের ঘোড়ার খুরের স্পর্শে মাটির মধ্যে জীবন দানের শক্তি সৃষ্টি হয়।যা দ্বারা সামেরীর গোবাছুর জীবিত হয়ে যায়।অনুরুপ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চরণের সপর্শ পেয়ে মদিনা শরীফের মাটি আরোগ্য দানকারী হয়ে গেছে।স্বয়ং নবী মদিনা শরীফের মাটিতে আরোগ্য দানকারী বলেছেন- মদিনা শরীফের মাটির এ বৈশিষ্ট্য কিয়ামত অবধি বিদ্যমান থাকবে।

★★★প্রশ্নঃ-
যমযমের পানিকে যমযমের পানি কেন বলা হয়?

★★★উত্তরঃ

যমযম থেকে নির্গত যার অর্থ "গুণগুণ করে গান করা "যেহেতু হযরত হাজেরা প্রথমবার এই পানি সানন্দে গুণগুণ করে পান করেছিলেন তাই তার নাম যমযম রাখা হয়।
অথবা এ শব্দটি যমযম ছিলো যার অর্থ থাম থাম।
হযরত হাজেরা এই পানি দেখে তার চতুর্দিকে দেয়ালের মত তৈরি করে দেন এবং বলেন,হে পানি থাম থাম।
তাই তার নাম যমযম রাখা হয়।
হাদিস শরীফে আছে,যদি ঐ পানিকে বাঁধা দেয়া না হতো তাহলে পূর্ব পশ্চিম সাগরের মত হয়ে যেত।

★প্রশ্নঃ-
কুরবান কেন করা হয়?জন্তুর জীবন নেয়াও কি ইবাদত?

★উত্তরঃ
কুরবান দ্বারা প্রভুর উপর কুরবান হওয়ার শিক্ষা অর্জিত হয়।কেননা প্রত্যেক নিম্ন ব্স্তু উচ্চ বস্তুর উপর,অধস্তন উর্ধ্বস্তনের উপর উৎসর্গিত হয়। শষ্য ক্ষেতের উপর  যে জমিনে   ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে, শষ্য জন্তুর জন্য উৎসর্গিত যে জন্তু শষ্য দানা আহার করেছে। জন্তু মানুষের উপর উৎসর্গিত যাকে যবেহ করে দেয়া হয়েছে। এ  মূলনীতি অনুযায়ী উচিৎ হচ্ছে মানুষ প্রভুর উপর উৎসর্গিত হওয়া। যখন ধর্মের তার জীবনে প্রয়োজন হবে তখন পেশ করবে। যেমন খলিলুল্লাহ নিজ সন্তানের কুরবানি আল্লাহর নির্দেশে পেশ করেছেন। তাছাড়া যবেহ করার দ্বারা জিহাদ ও শাহাদাতের প্রেরণা তৈরী  হবে। যে সম্প্রাদায় রক্ত দেখে নাই সে সম্প্রাদায় কখনো যিদ্ধ করতে পারে নাই। যেমন ভীতু ও ভামুন।
যে মরতে পারে সে বাঁচতেও পারে। যে জাতির মধ্যে মরণের প্রেরণা নেই ঐ জাতির পৃথিবীর বেঁচে থাকার হকও নেই। মনে হয় কুরবানী দাতা জন্তু কুরবান দিয়ে নিজে কুরবান হয়ে যাওয়ার শিক্ষা অর্জন করে।

(সূত্র--- আসরারুল আহকাম,
লেখকঃ হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহঃ)।

অনলাইন সংকলনঃ-

মুহাম্মদ আরাফাত হোসাইন।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।