কারবার ইতিহাস, পর্ব- ১৭-২০।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব-১৭,১৮,১৯,২০)।

হযরত ইমাম হুসাইন (র:) এর চাচাত ভাই ও সৎভাইদের শাহাদাত
--------------------------
হযরত হুরের শাহাদাতের পর হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)এর সামনে হযরত আকিলের বংশধর হযরত মুসলিমের ভাই আব্দুল্লাহ বিন আকিল (রাঃ) এসে দাঁড়ালেন এবং অনুমতি প্রার্থনা করলেন । হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কপালে চুমু দিয়ে অনুমতি দিলেন । তিনি যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে নিজেরশৌর্য বীর্য প্রদর্শন করে অনেক ইয়াযীদী সৈন্যকে হত্যা করে পরিশেষে শাহাদাত বরণ করলেন ।এবার হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর ভাইহযরত আবু বকর (রাঃ) অনুমতি নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হলেন। শেরে খোদার আওলাদ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণ করলেন যে, তাদের বাহুতে শেরে খোদার শক্তি রয়েছে । যুদ্ধের মাঠে তাঁরা যে বীর বিক্রমের পরিচয় দিয়েছেন, তা কারবালার মাটিতে চিরস্মরণীয় হয়েরয়েছে । তিনিও অনেক ইয়াযীদী বাহিনীকে খতম করে শেষ পর্যন্ত নিজে শাহাদাত বরণ করেন ।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব-১৮)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন
হাসান (রাঃ) এর শাহাদাত
---------------------------
হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর
সামনে তাঁর আপন ভাতিজা,
হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর
নয়নের মণি এবং হযরত
ফাতিমাতুয্ যুহরা (রাঃ) ও হযরত
আলী (রাঃ) এর দৌহিত্র
উপস্থিত হলেন । তিনি যুদ্ধে
গমনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা
করলেন । তিনি তাঁর(রাঃ)
ভাতিজার প্রতি অশ্রুসজল নয়নে
তাকালেন এবং বললেন, ‘তোমরা
আমার সাথে এসেছিলে এ
উদ্দেশ্যে যে, চাচার সঙ্গে
বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ভক্ত ও
মুরীদানদের বাড়িতে যাবে এবং
কয়েকদিন আনন্দ-আহ্লাদ করবে ।
আমিও তোমাদেরকে তলোয়ার ও
তীরের আঘাত খাওয়ার জন্য
সঙ্গে আনিনি । শোন! ওরা
আমার রক্তের পিপাসু, তোমাদের
রক্তের জন্য লালায়িত নয় ।
তোমাকে আমি অনুমতি দিতে
পারিনা । তুমি আশ্রয় শিবিরে
ফিরে যাও এবং তোমার মা-
বোনদের সাথে মদীনা
মুনাওয়ারায় চলে যেও। কিন্তু
ভাতিজা বার বার বলতে
লাগলেন, চাচাজান! আমাকে
আপনার হাতে বিদায় দিন এবং
আপনার বর্তমানেই জিহাদের
ময়দানে যাওয়ার অনুমতি দিন ।
আমি জান্নাতুল ফিরদাউসে
পৌঁছার জন্য অস্থির । চাচাজান!
দীর্ঘ তিন দিনের পিপাসায় খুবই
কষ্ট পাচ্ছি । এখন মন চাইছে যে,
যত তাড়াতাড়ি পারি জান্নাতুল
ফিরদাউসে পৌঁছে আপন পিতা ও
দাদাজানের হাতে হাউজে
কাওছারের পানি পান করে তৃষ্ণা
নিবারণ করি । ভাতিজার জান-
কুরবানীর জন্য এ রকম দৃঢ়
সংকল্পবোধ দেখে তাঁকে নিজের
বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন;
অতঃপর অশ্রুসজল নয়নে অনুমতি
দিলেন ।
হযরত আলী (রাঃ)এর দৌহিত্র,
হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)এর
নয়নমণি হযরত আব্দুল্লাহ বিন
হাসান (রাঃ) কারবালার মাঠে
উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত চমকাতে
লাগলেন এবং ইয়াযীদী
বাহিনীর সাথে মোকাবিলা
করে অনেক ইয়াযীদী সৈন্যকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করে
নিজে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত
হয়ে শেষ পর্যন্ত শাহাদাত বরণ
করেন ।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব-১৯)।
হযরত ইমাম কাসেম
(রাঃ) এর শাহাদাত
--------------------------
আল্লাহ ! আল্লাহ ! এবার হযরত
ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর সামনে
যিনি এসে উপস্থিত, তিনি
হলেন তার প্রিয় ভাতিজা হযরত
ক্বাসিম (রাঃ), যাঁর সাথে তাঁর
মেয়ে হযরত সখিনা আলাইহাস
সালাম উনার বিবাহের আগাম
ওয়াদা ছিল। হযরত ক্বাসিম
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন
ঊনিশ বছরের নওজোয়ান। যখন
তিনি তাঁর নওজোয়ান ভাতিজা
তথা সখিনার হবু জামাতাকে
সামনে দেখলেন, তখন তিনি
কেঁদে দিলেন এবং বললেন, বাবা!
আমি তোমাকে কিভাবে বিদায়
দিতে পারি? তোমাকে কিভাবে
আমি তীর খাওয়ার অনুমতি দিতে
পারে ? তোমাকে কি আমি
তলোয়ারের আঘাত খাওয়ার
অনুমতি দিতে পারি? প্রিয়
ভাতিজা! দেখ, আমার ভাইয়ের
এটা একান্ত আশা ছিল যে,
সখিনার বিবাহ যেন তোমার
সাথে হয়। ওগো আমার প্রিয়
ভাতিজা! তুমি মদীনা
মুনাওওয়ারায় ফিরে গিয়ে আমার
মেয়ে সখিনার সাথে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আমার ভাইয়ের
আশা পূর্ণ করো। কিন্তু হযরত
ক্বাসিম (রাঃ) বললেন,
চাচাজান! আমার আব্বাজানের
আরও একটি আশা ছিল, সেটা
হলো, আমার আব্বাজান আমার
গলায় একটা তাবিজ দিয়েছিলেন
এবং ওসীয়ত করে গিয়েছেন যে,
বাবা! এ তাবিজটা তখনই খুলে
দেখিও, যখন কোন বড় মুছীবতের
সম্মুখীন হও এবং সেই মতে আমল
করিও।
তাই আমি এ মুহূর্তে তাবিজটা
খুলে দেখলাম। কারণ এর থেকে বড়
মুছীবত আর কী হতে পারে!
তাবিজ খুলে যা লিখা দেখলাম
তাহলো-
ওহে আমার প্রিয় বৎস ক্বাসিম!
এমন এক সময় আসবে, যখন আমার
ভাই কারবালার মাঠে শত্রু
পরিবেষ্টিত হবে। শত্রুরা উনার
জানের পিপাসু হবে, বৎস! তুমি
যদি সত্যিকার আমার ছেলে হও,
তখন নিজ জানের কোন পরওয়া
করো না। বরং নিজের জান
চাচার জন্য উৎসর্গ করে দিও।
কারণ, সেই সময় হুসাইনের জন্য যে
জান কুরবানী দেবে, আল্লাহ
তায়ালার দরবারে সে খুবই উচ্চ
মর্যাদা লাভ করবে।
তাই চাচাজান! আমাকেও
আপনার হাতে বিদায় দিন। আমি
আপনার পরে জীবিত থাকতে চাই
না। আমাকে বিদায় দিন, আমি
যাতে সহসা জান্নাতুল
ফিরদাউসে পৌঁছে তৃষ্ণা নিবারণ
করতে পারি এবং আব্বাজানকে
গিয়ে বলতে পারি, আব্বাজান!
আমি আপনার আশা পূর্ণ করে
এসেছি।’
হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) শেষ
পর্যন্ত তাঁকেও বুকে জড়িয়ে ধরে
যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে বিদায়
দিলেন। হযরত ইমাম ক্বাসিম
(রাঃ) ইয়াযীদী বাহিনীর বড় বড়
যোদ্ধাকে টুকরো-টুকরো করে
ফেললেন। ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত
হওয়া সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে
যে বাহাদুরী দেখিয়েছিলেন, তা
দেখে ইয়াযীদী বাহিনীর
জাদরেল সৈন্যরাও হতভম্ব হয়ে
গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এ
বাহাদুরও আঘাতের পর আঘাতে
ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ঘোড়া থেকে
পড়ে গেলেন এবং জান্নাতুল
ফিরদাউসে পৌঁছে গেলেন ।
এভাবে হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)
এর চারজন ভাতিজা শহীদ হন।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব-২০)
হযরত ইমাম হুসাইন (র:) এর ভাতিজাদ্বয়ের শাহাদাত
-------------------------
চার ভাতিজার শাহাদাতের পর তাঁর আপন বোন হযরত যয়নাব (রাঃ) তাঁর দুইঅবুঝ সন্তান হযরত মুহম্মদ এবং হযরত আউনকে নিয়ে তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, ভাইজান! আপনারএ ভাগিনাদ্বয়ও আপনার জন্য জান কুরবান করতে প্রস্তুত। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) বললেন, বোন! এদেরকে তীরের আঘাত খাওয়ার জন্য সাথে আনা হয়নি। আমার সামনে তাঁদেরকে বর্শার অগ্রভাগে ঝুলানো হবে, তা আমার সহ্য হবে না। তুমি তাঁদেরকে নিয়ে যাও এবং আশ্রয় শিবিরে গিয়ে অবস্থান করো।’ বোন বললেন, ভাইজান! কক্ষনো তা হতে পারে না, আমিচাই আমার সন্তানদ্বয় আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি যেন জান্নাতুল ফিরদাউসে গিয়ে আমার আব্বাজানকে বলতে পারি, আমার দু’টি ছেলেকেও আপনার সন্তানের জন্য কুরবানী দিয়েছি। তাই আপনি এদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরুন এবং বিদায় দিন।বোনের বার বার আকুতি-মিনতির কারণে তিনি তাঁদেরকেও যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠালেন। হযরত যয়নাব (রাঃ) তাঁর নয়নমণি ও জানের জান সন্তানদের প্রতি নিজের অগাধ মায়া-মমতাকে ধামাচাপা দিয়ে সন্তানদ্বয়কে বিদায় দিলেন। এ কঁচি ছেলেদ্বয় বেশি দূর অগ্রসর হতে পারল না। ইয়াযীদী বাহিনীর যালিমেরা এসে তাঁদেরকে বর্শার অগ্রভাগে উঠিয়ে নিল।হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এ দৃশ্য দেখে দৌঁড়ে গেলেন এবং ভাগিনাদ্বয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে আশ্রয় শিবিরের কাছে এনে রাখলেন এবং বোনকে ডাক দিয়ে বললেন, ওহে জয়নাব! তোমার আরজু পূরণ হলো। তোমার সন্তানদ্বয় জান্নাতুল ফিরদাউসে পৌঁছে তৃষ্ণা নিবারণ করছে। মা শহীদ ছেলেদ্বয়ের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেললেন এবং ছেলেদের মাথার চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে বুলিয়ে বললেন, বাবারা! তোমাদের প্রতি তোমাদের মা খুবই সন্তুষ্ট। তোমরা তোমাদের মামার জন্য জান-কুরবান করেছ এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে পৌঁছে গেছ।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।