ওহাবি আক্বিদা ও সুন্নি আক্বিদার তুলনামূলক পার্থক্য।
★আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।
★ প্রজেক্ট- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা★
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
♦ওহাবি আক্বিদা ও সুন্নি আক্বিদার তুলনা মূলক পার্থক্য♦
♣ আমাদের দেশে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীগণ খারেজী হিসাবেও পরিচিত। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খারেজী মাদ্রাসা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। আল্লামা শামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও ওহাবীদেরকে খারেজী ফিরকার দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করেছেন। বিশুদ্ধ হাদিসে প্রত্যেক যুগে খারেজীদের অনুসারী বাতিল দল থাকবে বলেও উল্লেখ রয়েছে। এদের সর্বশেষ দলটি কানা দাজ্জালের সাথে মিলিত হবে। (হাদিসের আলোকে খারেজী ফিরকা অধ্যায় দেখুন)। শেখ নজদীর জঘন্যতম ভ্রান্ত আক্বীদা খন্ডনে মুসলীম বিশ্বের চল্লিশের অধিক আলেম কলম ধরেছেন। তাদের নাম ও রচিত কিতাবাদীর তালিকা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। শেখ নজদীর, এসব ভ্রান্ত আক্বীদার সাথে পাক-ভারত উপমহাদেশের ওহাবীদের বেশ মিল রয়েছে। যদিও বা তারা নিজেদের জাতি লুকানোর উদ্দেশ্যে বলে থাকে, আমরা ওহাবী নই। এখানে কি ওহাবী আছে, ওহাবীতো সৌদি আরবে। ইদানিং আবার তারা এটা বলাও বাদ দিয়েছে। কারণ তাদের এ উক্তি যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরববিশ্বে পৌছে যায় তাহলে তাদের পেটে বড় ধরেণের আঘাত পড়বে, আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। বস্তুতঃ তারা শেখ নজদীর আদর্শ প্রচারের নামেই সৌদি আরব সহ আরব বিশ্বের অপরাপর রাষ্ট্রের মোটা অংকের আর্থিক অনুদান লাভ করে আসছে। এতে আরো অধিক সফলতা লাভের উদ্দেশ্যে তারা প্রকাশনার মাধ্যমে শেখ নজদীকে ইসলামের মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) ও শাইখুল ইসলাম (ইসলামের ইমাম) ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করতেও কুষ্ঠিত হচ্ছেনা। চট্টগ্রামস্থ পটিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক আততাওহীদ বর্ষ ২৭, সংখ্যা ৮, রবিউচ্ছানি ১৪১৮ হিজরী “ওহাবী কারা" শীর্ষক প্রবন্ধে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে অসাধারণ মনিষী, সংস্কারক ও তার আন্দোলন, সংস্কার আন্দোলন হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে মৌং মুহাম্মদ সোলতান জৌক সম্পাদিত, আল জামেয়াতুল ইসলামীয়া পটিয়া চট্টগ্রাম) থেকে প্রকাশিত আসসুবহুল জাদীদ (আরবী ত্রৈমাসিক পত্রিকা) ৪র্থ বর্ষ ২য় সংখ্যা রবিউসসানী-রজব ১৪০৪ হিজরী “আন শেখ মুহাম্মদ ইবনে আদুল ওহাব" প্রবন্ধে শেখ নজদীকে হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও শাইখুল ইসলাম হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে । এতে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এরাও নজদীর ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারী বিধায় তারাও ওহাবী ।
শেখ নজদীর ভ্রান্ত আকীদার আলোচনায় তার স্বরপ ফুটে উঠেছে যে, তার সংস্থার আন্দোলনের মৌলিকত্ব ও রূপরেখা কি। তার আন্দোলন দরুদ শরীফ পাঠ, নবী অলীগণের উসিলা, যিয়ারত, শাফায়াতের মত কোরআন সুন্নাহর আলোকে বৈধ প্রমাণিত ও সাওয়াবের বিষয় সমূহের বিরুদ্ধে। পাক-ভারতে ওহাবী মতবাদ প্রচারের লক্ষ্যে প্রতিটি দেওবন্দ মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট আলেমদের লিখনী দ্বারা ওহাবী মতবাদের বেশ বিস্তৃতি ঘটেছে । শেখ নজদীর ভ্রান্ত আক্বীদার সাথে আরো অনেক ভ্রান্ত আকীদার সংযোজন ঘটেছে। দেওবন্দী ওহাবীদের আক্বীদাসমূহ তাদের লিখিত কিতাবাদির নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতির আলোকে উপস্থাপন করছি।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০১
নামাযে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল ধ্যান গরু-গাধার চেয়ে শতগুণে নিকৃষ্ট; বরং শিরক পর্যায়। (সিরাতে মুস্তাকিম, পৃষ্ঠা ১১৮ কৃত: মেীং ইসমাঈল দেহলভী)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত
নামাযে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আল্লাহর নেকবান্দার প্রতি সালাম পাঠ করা ওয়াজিব। “তাশাহহুদে" প্রত্যেক মুসল্লিকে বলতে হয়- আসসালামু আলাইকুম আইয়ুহান্নাবীউ ওয়ারাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহ, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সোয়ালেহীন। অতঃপর নবী করিম সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্মানিত বংশধরগণের উপর দরুদ পাঠ করা সুন্নাত বিধায় তাদের খেয়াল নিঃসন্দেহে
জায়েয।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০২
শয়তান ও মালাকুল মউতের জ্ঞান-হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞানের তুলনায় অধিক। (বারাহীনে কাতেয়া, পৃষ্ঠা ৫১ কৃতঃ মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা আত
সৃষ্টির যে কারো জ্ঞান হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান থেকে বেশী বলে বিশ্বাস রাখা কুফর। (শেফা-এ কাযী আয়ায)।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৩
হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম উর্দু বলার ক্ষমতা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে অর্জন করেছেন। (বারাহীনে কাতেয়া পৃষ্ঠা ২৬, মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
আল্লাহ তাআলা সকল ভাষাজ্ঞান হযরত আদম আলাইহিস সালামকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইলম হযরত আদম আলাইহিস সালামের চেয়ে বেশী। সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের উর্দু বলার ক্ষমতা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে অর্জিত, নিঃসন্দেহে সে বেদ্বীন।
★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-০৪
হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেয়ালের পেছনের ইলমও নেই। (বারাহীনে কাত্বেয়া পৃষ্ঠা ৫১, মৌ খলীল আহমদ আম্বিটভী)
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবা কেরামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহর শপথ। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের রুকু সিজদা ও তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে কিনা তাও দেখি। (বোখারী শরীফ)। সুতরাং হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেয়ালের পেছনের ইলম বা জ্ঞান নেই বলা তার মহান মর্যাদার চরম অবমাননা। এটাকে ওহাবীগণ হাদিস হিসেবে উপস্থাপন করতে অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এ সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের অভিমত হলো, (ওহাবীদের উক্তিটি) এটা জাল হাদিস। (ম'যুয়াতে কোবরাঃ মোরা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাদারেযনবুয়াতঃ শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-০৫
নামাযে "আত্তাহিয়াতু" পড়ার সময় "আসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবী" দ্বারা যদি এ সালাম সম্পর্কে নবী হাজের নাযের আছে বলে আক্বীদা পোষণ করে তাহলে শিরক হবে। (বারাহীনে কাতেয়া পৃষ্ঠা ২৪, মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের সালাত-সালাম শুনতে পান এবং তাঁর উত্তর প্রদান করেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হুযযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ আমাকে সালাম দাও আল্লাহ আমার মনযোগ ফিরিয়ে দেন। তখন আমি তার সালামের জবাব দিই। (মেশকাত শরীফ)। ইমাম গাযালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হে ঈমানদার! আসসালামু আলাইকা আইয়্যহান্নাবী বলার পূর্বে তোমার অন্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপস্থিতি মনে কর। (মেরকাত শরহে মিশকাত, বাবুত তাশহহুদ, মোল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৬
মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহীর শিষ্য মৌং হসাইন আলী বলেন, আমি স্বপ্নে হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি আমাকে “পুলসিরাত এর উপর নিয়ে গেলেন। কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর দেখলাম যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুলসিরাত থেকে পড়ে যাচ্ছেন। তখন আমি হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসারামকে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছি । (বুলগাতুল জিরান কৃত মৌং হুসাইন আলী, জাআলহক উর্দু পৃষ্ঠা ৪২০)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত
হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক গোলাম পুলসেরাতের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে। হুযুর পুলসেরাত থেকে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করবেন। রবে সাল্লিম (হে আল্লাহ,নিরাপদ রাখ)। যে ব্যক্তি বলবে, আমি হুযুরকে পুলসেরাত হতে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা করছি সে বেঈমান।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৭
অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলে, আর আল্লাহ যদি বলতে না পারেন তাহলে মানুষের ক্ষমতা খোদার ক্ষমতা থেকে বেড়ে যাবে । (রেসালা-এ-একরোযী কৃত:মৌং ইসমাঈল দেহলভী, দেওবন্দ কা নয়া দ্বীন কৃত: আল্লামা মোস্তাক আহমদ নিযামী পৃষ্ঠা ৬৪ )।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত
মিথ্যা নিঃসন্দেহে দোষ, আল্লাহ তা'আলার পবিত্র সত্বা সকল প্রকার দোষ ক্রটি থেকে পৃতঃ পবিত্র। মিথ্যা বলতে না পারা আল্লাহর দূর্বলতা নয় বরং পবিত্রতা। আল্লাহর কুদরাত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাই এসব ভ্রান্ত আক্বীদার কারণ।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৮
হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে ইলমে গায়ব আছে এ ধরণের ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান যায়েদ, আমর এবং প্রত্যেক শিশু, পাগল, এমন কি সকল জীব-জন্তুরও আছে। হিফযূল ঈমান কৃতঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী, পৃষ্ঠা ১৬)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
হুযুর সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন গুণকে নিকৃষ্ট বস্তুর সাথে তুলনা করা বা তার সমান বলা তার শানে স্পষ্ট ও চরম অবমাননা; তাই এটা কুফর।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৯
মীলাদ শরীফে কেয়াম করা বেদআত, শিরক। (তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫২,রেসালা-এ-হাতেফ, পৃষ্ঠা ১০ কৃত; ক্বারী আব্দু রশীদ, বাঁশখালী,চট্টগ্রাম)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
মীলাদ শরীফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমম্মানে কেয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান (তাফসীরে রুহুল বয়ান, জা'আল হক ; ইকামাতুল কিয়াম ইত্যাদি)।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১০
হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করা উচিত। (তাকবিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ৭১, আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত পৃষ্ঠা ৪)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করতে হবে মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে। এ জগতে মানুষের জন্য মাতাপিতা হলেন অন্যান্য সকল আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে অধিক সমানের পাত্র। আর নবীর মর্যাদা মাতা পিতার মর্যাদার তুলনায় অনেক অনেক বেশী। সুতরাং তার সম্মানও করতে হবে অনুরূপ। যদিও আমাদের বুঝানোর জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের জন্য ঐরূপ, যেরূপ পিতা সন্তানের জন্য। অপরদিকে তার বাণী, "তোমরা তোমাদের প্রতিপাপকের ইবাদত
করো এবং তোমাদের ভাইয়ের সম্মান করো।" (আল হাদিস) । এর ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদগণ বলেছেন, এটা হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নম্রতার বহিঃপ্রকাশ।(আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত, পৃষ্ঠা -৬১-৬৭)।
★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-১১
যে কোন ব্যক্তি যত বড়ই হোক বা নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেস্তাই হোক আল্লাহর কাছে তাঁর মর্যাদা চামার (জুতা প্রস্তুতকরক ও মেরামতকারী) এর চেয়েও নিকৃষ্ট।(তাকবিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ২৩ কৃতঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী; অনুরূপভাবে উক্ত কিতাবের ৬৬ পৃষ্ঠায় লিখেন, সকল নবী আলাইহিমুস সালাম ও অলীগণ আল্লাহর কাছে অতি ক্ষুদ্র বালি কণা থেকেও নিকৃষ্ট। (নাউযুবিল্লাহ)
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
এ ধরনের আক্বীদা কোরআন হাদিসের পরিপন্থী; কারণ, সৃষ্টির মধ্যে শ্রেণী ভেদে অনেক সৃষ্টির আল্লাহর নিকট বিশাল মর্যাদা রয়েছে। নবী, রাসুল, সাহাবা কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, শহীদান, আউলিয়া কেরাম ও ঈমানদারগণ আল্লাহর নিকট মর্যাদা সম্পন্ন। আল্লাহর মহত্ব বর্ণনার এ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে বর্জনীয়। কারণ, নবী রাসুলগণের মৰ্যাদা আল্লাহর মহত্বের প্রমাণ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত, "নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরহেযগার।"
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে -
العزة لله و لرسوله و للمؤمنین
অর্থাৎ সম্মান আল্লাহর, তাঁর রাসুল ও ঈমানদারগণের জন্য। (অল কোরআন)।
বিস্তারিত দেখুন, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ কোরআন মে (উর্দু); খোদার ভাষায় নবীর মর্যাদা বাংলা; শানে হাবীবুর রহমান।
আলোচ্য আয়াতে মুত্তাকীর সম্মান বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং যিনি যত বেশী মুত্তাকী বা খোদাভীরু হবেন। তিনি আল্লাহর নিকট ততো বেশী সম্মানী হবেন। এ হলো আল্লাহর ঘোষণা। আর ওহাবীদের নেতা মৌং ইসমাঈল দেহলভীর ঘোষনা হলো কোন ব্যক্তি যত বড়ই হোক (নবী অলীগণ) অথবা নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা আল্লাহর সামনে জুতা প্রস্তুতকারীর চেয়েও নিকৃষ্ট এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্র বস্তু থেকেও হীন। (নাউযুবিল্লাহ)।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১২
হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন ক্ষমতা নেই। তিনি দূর থেকে শুনতে পান না। অনুরূপ এ ক্ষমতা কোন অলী বুযুর্গেরও নেই। আছে বলে বিশ্বাস করা শিরক। (তাকবিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩ কৃতঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
নবী রাসুলগণের ঈমাম হিসেবে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা রয়েছে। মোজেযা বা অলৌকিক ক্ষমতা। সাধারণ মানুষ কোন মাধ্যম ছাড়া দূর থেকে শুনতে পারেনা। নবীগণ দূর থেকে শুনতে পান। এটা তাদের মোজেযা। হযরত সোলাইমান আলাইহিস সালাম তিন মাইল দূর থেকে শুনতে পান এটা তাঁর কারামাত। হযরত সারিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহ নেহাবন্দে (মদীনা শরীফ থেকে এক মাসের দূরত্বের জায়গা) যুদ্ধাবস্থায় হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মদীনা শরীফ থেকে কৃত হুশিয়ারী
শুনতে পেরেছেন। (শরহে আহাঈদ-এ-নাসাফী)।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৩
বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারাও মীলাদ মাহফিল করা নাজায়েজ এবং সর্বাবস্থায় নাজায়েয। (ফতোয়া এ রশিদিয়া কৃত: মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী, দেওবন্দী আকাঈদ, পৃষ্ঠা ১৬; আততাহযীরু মিনাল বিদআ কৃত: আবদুল আযীয বিন বা য)
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
মীলাদ শরীফ এর মাহফিল জায়েয বরং সাওয়াবের কাজ। হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং মীলাদ বা তাঁর বেলাদাত শরীফের বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী শরীফে মীলাদুন্নবী নামে পৃথক অধ্যায় রয়েছে। মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহীর পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ মাহফিল করতেন এবং এতে কেয়ামও করতেন। আরও বলেছেন যে, আমি এতে সাধ পাই। (ফয়সালাএ-হাফত মাছয়াল)।
★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-১৪
নামাযের পর ইমাম ও মুকতাদি সবাই মিলে হাত তুলে মোনাজাত করা বেদআত। (আহকামুদ্দাওয়াতিল মুরাওয়াজা, পৃষ্ঠা ১০ ও ১১ কৃত: মুফতী ফয়জুল্লাহ হাটহাজারী, চট্টগ্রাম)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
নামাযের পর ইমাম ও মুকতাদি সবাই মিলে হাত তুলে দোয়া করা এবং সম্ভাব্য মুহুর্তে দোয়ার বেলায় হাত তোলা মোস্তাহাব। ( আল মোনাজাত (বাংলা), আত তোহফাতুল মাতলুবা ইত্যাদি)
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৫
খাদ্য সামগ্ৰী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ভাত পূজা, গোমরাহদের কাজ । (রেসালা-এ-হাতেফ, পৃষ্ঠা ১১; তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৯০ ও ৯৩)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
খাদ্য সামগ্ৰী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ও ইসালে সাওয়াব নিঃসন্দেহে জায়েয। খাদ্য সামগ্ৰী সামনে নিয়ে স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেহা দিয়েছেন। (বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড ও মেশকাত শরীফ)। বিস্তারিত দেখুন কানযুল ইরফান; সুবুতে ফাতেহা ও এসবাতে ফাতেহা উর্দু; দিওয়ানে আযীয ফার্সী; জা’আল হক।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৬
রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুষ্ঠান করা ও রবিউসসানী মাসে গিয়ারবী শরীফ করা বেদআত।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহফিল করা নিঃসন্দেহে জায়েয ও সাওয়াবের কাজ। স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সোমবার দিনকে তাঁর বেলাদাত শরীফের দিন হিসেবে নফল রোযার মাধ্যমে শোকরিয়া আদায় করতেন। (মিশকাত শরীফ ও নাসায়ী শরীফ)। বিস্তারিত দেখুন আদদুররুসসামীন; জা'আল হক, মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ; হুসনুল মাযহাদ ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাংলা)। অনুরূপভাবে 'গিয়ারযী শরীফ' অর্থাৎ হযুর গাউসে আযম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বার্ষিক ফাতেহা শরীফও জায়েয এবং সাওয়াবের কাজ। (মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, কৃত: শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ।)
★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-১৭
হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘হাযির-নাযির" মনে করা শিরক। (তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ২৭)
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
হাযির শব্দের অর্থ উপস্থিত আর ‘নাযীর' শব্দের অর্থ দ্রষ্টা তথা দেখা। পৃথিবীর যে কোন স্থানে হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখনো উপস্থিত হতে পারেন। এবং সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। অনুরূপভাবে রওজা শরীফে অবস্থান করে উম্মতের যাবতীয় অবস্থা অবলোকন করতে পারেন। এ হলো হাযির-নাযিরের ব্যাখ্যা। নামাযে প্ৰিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপস্থিত ব্যক্তির ন্যায়ই সম্বোধন পূৰ্বক সালাম দিতে হয়। এটাও তাঁর অন্যতম প্রমাণ। বিস্তারিত দেখুন কানযুল ইরফান, তাসকীনুল খাওয়াতীর (উর্দু); ফুৃয়ুযুল হারামাইন (উর্দু-আরবী)। কৃতঃ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, জাআল হক (উর্দু ও বাংলা)।
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৮
আবদুন্নবী,আলী বখ্শ, হুসাইন বখ্শ, পীর বখশ, মাদার বখশ, গোলাম মুহিউদ্দীন ও গোলাম মুঈন উদ্দীন নাম রাখা শিরক। (তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১২)।
★আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত
আবদুন্নবী,আবদুর রাসুল, গোলাম মোস্তফা, আবদুল আলী ইত্যাদি নাম রাখা জায়েয। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'আলা হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর উম্মতদের -یا عبادی হে আমার বান্দাগণ! বলে আহবান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বান্দা অর্থ অনুগত। পূর্ণ আয়াত-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (53)
অর্থাৎ হে প্রিয় রাসূল! আপনি বলুন, হে আমার ঐসব বান্দাগণ যারা নিজেদের আত্মার উপর সীমাতিক্রম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ হইওনা। (আল কোরআন)
হযরত সৈয়্যদুনা ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু মিম্বরে উপবিষ্ট হয়ে খোতবায় বলেছিলেন-
قد کنت مع رسول الله صلی الله علیه وسلم فکنت عبده و خدمه-
অর্থাং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমি তাঁর আবদ অর্থাৎ বান্দা ও খাদেম ছিলাম। এ হাদিসটি হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দদিস দেহলভী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুও এযানায়াতুল খাফা নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন। নির্ভরযোগ্য ফিকাহর কিতাব দূররে মোখতারের ভূমিকায় সংকলক বলেন-
فانی ارویه عن شیخنا الشیخ عبد النبی الخلیلی-
অর্থাৎ আমি এটা আমার শেখ আবদুন্নবী খলীলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছি। দেওবন্দীদের শাইখুল হিন্দ মৌং মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী তার পীর মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহীর মৃত্যুতে রচিত 'মারসীযা়এ রশিদ' (কবিতা)
নামক কিতাবে লিখেন-
قبولیت اسے کهتے هیں مقبول ایسے هوتے هیں عبید سودکا ان کے لقب هے یوسف ثانی-
অর্থাৎ গ্রহণযোগ্যতা একেই বলে, মাকবুল (আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য)এমনিই হয়ে থাকে। যার কালো বান্দাদের উপাধিও ইউসুফে সানী বা দ্বিতীয় ইউসুফ আলাইহিস সালাম। এটাকে গদ্যাকারে লিখলে এভাবেই লিখতে হবে
انکے عبید سودا کا لقب یوسف ثانی هے-
অর্থাৎ মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহী আল্লাহর নিকট এমন মকবুল বান্দা যে, তার কালো বান্দাদের উপাধিও দ্বিতীয় ইউসূফ, না জানি তার ফর্সা বান্দাদের উপাধি কি হবে; এখানে عبید শব্দটি এর বহু বচন। এতে প্রমাণিত হলো দেওবন্দীদের মতে আবদুন্নবী শিরক কিন্তু আবদুর রশিদ অর্থাৎ মৌং রশীদ আহমদ গাংওহীর বান্দা বলা শিরক নয়; বরং জায়েয। এটাই হলো তাদের স্বরূপ। (জা'আল হক, উর্দু, পৃষ্ঠা ৭৯ ও ৩৮ ওহাবী চিন্তাধারা (বাংলা)।
দেওবন্দী ওহাবীদের অন্যতম পেশোয়া মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহীর বংশ তালিকায় মৌং ইসমাঈল দেহলভীর ফতোয়ানুসারে কয়েকটি শিরকী নাম বিদ্যমান, তার বংশ তালিকা মৌং রশিদ আহমদ ইবনে মৌং হেদায়াত আহমদ ইবনে কাযী পীর বখশ ইবনে কাযী গোলাম হাসান ইবনে কাযী গোলাম আলী। মাতার দিকেও অনুরূপ মৌং রশীদ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ করীমুন্নেসা বিনতে ফরীদ বখশ ইবনে গোলাম কাদের মুহাম্মদ সালেহ ইবনে ইবনে গোলাম মুহামদ। (উভয় তালিকায় ছয়টি নামই ইসমাঈল দেহলভীর মতে শিরক)। (তাযকেরাতুর রশীদ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা১৩; আকাবেরে দেওবন্দ কা তাকফিরী আফসানা, পৃষ্ঠা ১০)।
পাক-ভারত উপ মহাদেশে ওহাবী মতবাদ প্রচারে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তারা হলেন মৌং কাসেম নানুতভী, প্রতিষ্ঠাতা দেওবন্দ মদ্রাসা, ইউ, পি; মৌং রশীদ আহমদ, মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী, মৌং আশরাফ আলী থানভী ও মৌং ঈসমাঈল দেহলভী।
(সংকলন- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা।
লেখকঃ- মাওলানা কাযী মঈন উদ্দিন আশরাফী)।
★ পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করার অনুরোধ রইল।
আমাদের সাথে থাকন।
Comments
Post a Comment