ওহাবি মতবাদ প্রচারে রচিত গ্রন্হ সমূহ।
★আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।
★ প্রজেক্ট- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা★
★ পোস্ট নং--৪০
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
__________________________________
♦ওহাবি মতবাদ প্রচারে রচিত গ্রন্হসমূহ ♦
__________________________________
♣ ১. তাহযীরুন্নাসঃ মৌং কাশেম নানুতভী, প্রতিষ্ঠাতা, দেউবন্দ মাদ্রাসা, ইউ, পি, ভারত
২. ফতোয়া -এ-রশীদিয়াঃ মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী
৩. বারাহীনে কাতিয়াঃ মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী
৪. হিফযুল ঈমানঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী
৫. আল ইফাযাতুল ইয়াওমীয়াঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী
৬. তাকবীয়াতুল ঈমানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী
৭. তাযকীরুল ইখওয়ানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলতী
৮. ইযাহুল হকঃ মৌং ইসমাঈল দেহলজী
৯. রেসালা-এ-একরোযীঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী
আকাঈদ পর্বে উপরোল্লেখিত কিতাবগুলোর উদ্ধৃতির আলোকে দেওবন্দী ওহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদাগুলোর উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব কিতাব লিখার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি। তন্মধ্যে মৌং ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত তাকবীয়াতুল ঈমান সম্পর্কে স্বয়ং লিখকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। মৌং ইসমাঈল দেহলভী তাকবীয়াতুল ঈমান লেখার পর বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জমায়েত করলেন। তন্মধ্যে সৈয়দ সাহেব, মৌং আবদুল হাই, শাহ ইসহাক, মৌং মুহাম্মদ ইয়াকুব, মৌং ফরিদুদ্দীন মুরাদাবাদী, মোমেন খাঁ, আবদুল্লা খাঁ আলাভী উল্লেখযোগ্য। অতঃপর তাদের সম্মুখে তাকবীয়াতুল ঈমান উপস্থাপন করে বললেন, আমি এ কিতাব লিখেছি এবং আমি জানি যে, এতে কোন কোন স্থানে সামান্য কঠোর ভাষা আরোপিত হয়েছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন, ঐ সব বিষয় যেগুলো শিরকে খাফী (অস্পষ্ট শিরক) এথলোকে শিরকে জ্বলী (স্পষ্ট শিরক) বলা হয়েছে। এ সব কারণে আমার ভয় হচ্ছে যে, এর প্রকাশনা দ্বারা অবশ্যই (মুসলমানদের মধ্যে) বিশৃংখলা দেখা দেবে। যদি আমি এখানে হিন্দুস্থানে) অবস্থান করতাম তাহলেও আলোচ্য বিষয়গুলো আট-দশ বছরে ধীরে ধীরে বর্ণনা করতাম। কিন্তু এখন আমার হজ্জে গমনের ইচ্ছা। এর প্রকাশনায় বিশৃংখলা দেখা দেবে, কিন্তু আমার বিশ্বাস ঝগড়া বিভেদ হয়ে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে। এ হলো আমার ধারণা। যদি আপনারা এটা প্রকাশ করার পক্ষে মত দেন তাহলে প্রকাশ করা হবে, অন্যথায় এটা ছিঁড়ে ফেলা হবে। এতে উপস্থিত একজন বললেন, প্রকাশ তো অবশ্যই হওয়া চাই, কিন্তু কিছু সংশোধন করা উচিত । তখন মৌং আবদুল হাই, শাহ ইসহাক, আবদুল্লাহ খাঁ ও মোমেন খাঁন এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে।বললেন, সংশোধনের প্রয়োজন নেই। অতঃপর পরস্পরের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, “সংশোধনের প্রয়োজন নেই, যেভাবে আছে, সেভাবেই প্রকাশ করা হোক।" অতএব সেভাবেই প্রকাশিত হলো। (হেকায়াতে আউলিয়া পৃষ্ঠা ৮০ ও ৮১ সংকলনে মৌং আশরাফ আলী থানভী ও মৌং কারী মুহাম্মাদ তৈয়ব মুহতামিম দেওবন্দী মাদ্রাসা।)
তাকবীয়াতুল ঈমান যে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখা হয়েছে তাতো উপরোক্ত উদ্ধৃতির আলোকেই প্রমাণিত। বাস্তবিকই তা হয়েছে। কারণ এ কিতাব দ্বারা মুসলমানদেরকে মুশরিক বানানোর পথ সুগম হয়েছে। এতে কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কেয়াস ও উম্মতের ইমাম মুজতাহিদের মতামতের
আলোকে বৈধ ও সাওয়াব জনক অসংখ্য বিষয়কে স্পষ্ট শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোন বৈধ ও সাওয়াবের কাজকে অবৈধ, শিরক, ও বিদআত বললে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা অবশ্যম্ভাবী। এটাই ভয় করছিলেন স্বয়ং লিখক মৌং ইসমাঈল দেহলভী। এ কারণে সে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের সম্মতিক্রমে কোন প্রকার সংশোধন ছাড়াই উক্ত কিতাব প্রকাশ করেছে। যা মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির ক্ষেত্রে জঘন্য ভূমিকা পালন করে। তাকবীয়াতুল ঈমানের প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশুদ্ধ প্রমাণিত এমন সব আকীদাকে শিরক ফতোয়া দেয়া হয়েছে। ফলে উক্ত কিতাব প্রকাশিত হবার পর পাক-ভারতের মুসলমানদের মধ্যে বিশৃথলা দেখা দেয়। পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কের অবতারণা হয়। পাক-ভারতে সুন্নী ওলামা কেরাম তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে কলম ধরেন এবং কোরআন-সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যার আলোকে ওহাবী নেতা মৌং ইসমাইল দেহলভীর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। উল্লেখ্য যে, তাকবীয়াতৃল ঈমানকে ওহাবী মতবাদের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর কিতাবুত তাওহীদ -এর অনুবাদ বললেও অত্যুক্তি হবে না।
★তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে লিখিত কিতাবসমূহের তালিকা
০১. মুঈদুল ঈমানঃ হযরত মাওলানা মাখমুসুল্লাহ, মৌং ইসমাঈল দেহলভীর আত্মীয়।
০২. তাহকীকুল ফতোয়া ফী এবতালিততাগওয়াঃ আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদী, ১৭৫৭ এর আযাদী আন্দোলনের অগ্রদূত (রহ) মৌং ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক উভয়ের মধ্যে সমুখ তর্কও হয়েছে
০৩. হুজ্জাতুল আমল ফী এবতালিল হিয়ালঃ হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মুসা দেহলভী, মাওলানা মাখমুসুল্লাহর ভাই
০৪. সাইফুল জব্বারঃ হযরত আল্লামা ফযলুর রসুল ওসমানী বাদামুনী, মৌং ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক
০৫. তাকদীসুল ওয়াকীল আন তৌহিনির রশীদ ওয়াল খলীলঃ হযরত আল্লামা গোলাম দস্তগীর কসুরী। এতে হারামাঈন শরীফাইন (মকা ও মদীনা শরীফ) এর ওলামা কেরামের অভিমত ও স্বাক্ষর রয়েছে
০৬. আল কাউকাবুশ শাহাবীয়া ফী কুফতীয়াতে আনিল ওহাবীয়াঃ ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি
০৭. সাললুস সুয়ুফীল হিন্দীয়াঃ ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
০৮. হসামুল হারামাইন আলা মানহারিল কুফরে ওয়াল মায়নঃ ইমাম আহমদ রেযা খান ফায়েলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
০৯. আসসুয়ুফুল বারেকা আলা রুউসিল ফাসেকাঃ হযরত আল্লামা আবদুল্লাহ খোরাসানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১০. তানযীহর রহমান আন শায়েবাতিল ফিকরে ওয়ান্নোকসানঃ হযরত আল্লামা আহমদ হাসান কানপুরী খলীফা হযরত খাজা এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১১. আর রুমহুদায়্যানী আলা রাসুল ওয়াওয়াসিশ শায়তানীঃ হযরত আল্লামা মোস্তফা রেযা খাঁ ইবনে ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১২. শরহুচ্ছুদুর ফী দাফয়ীশশুরুরঃ হযরত আল্লামা মোখলেসুর রহমান ইসলামাবাদী, চট্টগ্রাম
১৩. মীযানে আদালাত ফী এসবাতে শাফায়াতঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ সোলতান কাটকী
১৪. হাদীল মুদিল্লীনঃ হযরত আল্লামা করিমুল্লাহ দেহলভী
১৫. এযালাতুশশাকুকঃ হযরত আল্লামা হাকিম ফখরুদ্দীন ইলাহবাদী
১৬. সহীহুল ঈমানঃ হযরত আল্লামা আহমদ হুসাইন
১৭. শরহে তোহফায়ে মুহাম্মদীয়া ফী রদে ফিরকা-এ মুরতাদ্দিয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ আশরাফ আলী গুলশানাবাদী
১৮. যুলফাকারে হায়দারীয়া আলা আনাকে ওহাবীয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ হায়দার শাহ
১৯. রেসালায়ে তাহকীকে তাওহীদ ও শিরকঃ হযরত আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ হাসান পেশোয়ারী
২০. রেসালায়ে হায়াতুন্নবীঃ হযরত আল্লামা শেখ মুহাম্মদ আবেদ সিন্দি
২১. গুলযারে হেদায়াতঃ হযরত আল্লামা মুফতী সিবগাতুল্লাহ, মাদ্রাজ
২২. সালাহুল মোমেনীন ফী কাতয়ীল খারেজীনঃ হযরত আরামা সৈয়দ লুৎফুল হক বাতালতী
২৩. তোহফাতুল মোসলেমীন ফী জানাবে সাইয়্যেদিল মুরসালীনঃ হযরত আল্লামা আবদুল্লাহ সাহারানপুরী
২৪. রসমূল খায়রাতঃ হযরত আল্লামা খলীলুর রহমান হানাফী মোস্তফাবাদী
২৫. সাবীবুন্নাজাহ ইলা তাহসীলিল ফালাহঃ হযরত আল্লামা তোরাব আলী
২৬. সাফিনাতুন্নাজাতঃ হযরত আল্লামা মৌং মুহাম্মদ আসলামী, মাদ্রাজ
২৭. নেযামুল ইসলামঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ওজীহ ছাহেব, মুদাররিস মাদ্রাসা-এ-কলকাতা
২৮. তাম্বিহুদোয়াল্লীন ওয়া হেদায়াতুস সালেহীনঃ দিল্লী ও হারামাইন শরীফাইনের ওলামাকেরামের ফতোয়ার সমষ্টি
২৯. এহকাকুল হকঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ বদরুদ্দীন হায়দরাবাদী
৩০. খায়রুয্যাদ লেইয়াওমিল মাআদঃ হযরত আল্লামা আবুল আলা মুহাম্মদ খায়রুদ্দীন মদ্রাজী
৩১. আল ইত্তেবাহ লে-দাফয়ীল এশতেবাহঃ হযরত আল্লামা মুয়াল্লিম ইব্রাহীম, খতিব বোম্বাই জামে মসজিদ
৩২. সুবহানুসসুবুহু আন আইবে কিবে মাকবুহঃ ইমাম আহমদ রেয়া বেরেলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৩. দাফউল বোহতানঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুস
৩৪. হেদায়াতুল মোসলেমীন ইলা তারিকীল হক্বে ওয়াল ইয়াকীনঃ হযরত আল্লামা কাযী মূহাম্মদ হুসাইন কুফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৫. আফতাবে মুহাম্মদীঃ হযরত আল্লামা ফকীর মুহাম্মদ পাঞ্জাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৬. গুফতাগু-এ-জুমাঃ হযরত আল্লামা কাজী ফযল আহমদ সুন্নী, হানাফী
৩৭. মীযানুল হকঃ হযরত আল্লামা কাযী ফজল আহমদ সুন্নী, হানাফী নকশবন্দী
৩৮. আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাতঃ হযরত আল্লামা কাযী ফযল আহমদ, হানাফী নকশবন্দী
৩৯. কুওয়াতুল ঈমানঃ হযরত আল্লামা কারামত আলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৪০. আদদুরাবসানীয়া ফীররফে আলাল ওহাবীয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ ইবনে যি'নী দাহলান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
পাক-ভারতসহ মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওলামা কেরাম তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে কলম ধরেছেন এবং চল্লিশটির মত কিতাব লিখেছেন। উক্ত কিতাব সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ধ্বংসে কত বেশী কার্যকরী তা সহজে অনুমেয়। ঈমান বিধ্বংসী মৌং রশীদ আহমদ গাওগুহীর কিতাবটি সম্পর্কে মন্তব্য হলো "তাকবীয়াতুল ঈমান প্রত্যেকের নিকট রাখা, পড়া ও তার। আমল করাই হচ্ছে সত্যিকার ইসলাম এবং সাওয়াবের কাজ। (ফতোয়া রশিদীয়া ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০)। এমনি করেই-ওহাবী আলেমগণ মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে আসছে। সহজ সরল মুসলমান ওহাবী-সুন্নী ভেদাভেদকে উড়িয়ে দেয়। তাদের সমীপে একান্ত অনুরোধ, ওহাবী আীদা ও সুন্নী আকীদাকে পাশাপাশি করে বুঝতে চেষ্টা করুন এবং উপস্থাপিত বিষয়গুলো প্রয়োজনে আরো যাচাই দেখুন। অতঃপর নিজ ঈমান-আকীদা রক্ষায় সচেতন হোন যদি কোন ওহাবী আলেম "ওহাবী আকীদা পর্বে" উপস্থাপিত আকীদাসমূহ মিথ্যা ও বলে উড়িয়ে দিতে চায়, তখন তার সাথে আমাদের পক্ষে চ্যালেঞ্জ গ্রহন করুন এবং উদ্ধৃতিতে উল্লেখিত কিতাবসমূহ নিয়ে "মোনাযারার" (সম্মুখ তর্ক) আহবান করুন। তখন যদি সম্মত হয় ভালো; অন্যথায় তাদের ভ্রান্তিতে নিশ্চিত হোন এবং তাদের বাহ্যিক আকর্ষণীয় চাল-চলনের ধোকা থেকে নিজে বাচুন, অপরকেও বাঁচাতে এগিয়ে আসুন । ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের। আকীদায় দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ইসলামী আদর্শে জীবন গড়ায় সচেষ্ট হোন।
©(সংকলন- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা।
লেখকঃ- মাওলানা কাযী মঈন উদ্দিন আশরাফী)।
★পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করার অনুরোধ রইল।
আমাদের সাথে থাকুন।
Comments
Post a Comment