সালিশী নির্ধারণ,বিভিন্ন হাদিসে খারেজিদের পরিচিতি,হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রসংশনীয় উদ্যোগ।
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
★ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা।
উভয়ের মধ্যে সমঝোতা ও মীমাংসা করার জন্য প্রস্তাব হলে, হযরত মুয়াবিয়ার পক্ষ ঝানু রাজনীতিবিদ হযরত আমর ইবনে আ'স রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর নাম পেশ করে এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর পক্ষ হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম পেশ করে। হযরত আমর ইবনে আ'সের মোকাবেলায় হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মত সহজ-সরল ব্যক্তির নাম অযৌক্তিক দেখে হ্যরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আপত্তি করেন এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহ তদস্থলে মালেক ওশতরের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু, উল্লেখিত ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর এর ফলও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর বিপক্ষে যায়। যে সব ব্যক্তি কোরআনের আহবানের প্রেক্ষিতে যুদ্ধ বন্ধ করার চাপ সৃষ্টি করে। এবং সালিশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু তাআলা
আনহুর নাম প্রস্তাব করে তারাই এ বলে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর পক্ষ ত্যাগ করে যে, “আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক মেনে নেয়া
জায়েয নয়।" এদের সংখ্যা প্রায় বার হাজারের কাছাকাছি ছিল; এরাই ইসলামের ইতিহাসে "খারেজী” নামে পরিচিত। এটিই ইসলামে প্রথম বাতিল ফিরকা। অতঃপর তারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর পক্ষ ত্যাগ করে এবং
‘হারুরানামক কুফার এক স্থানে অবস্থান করে। এ কারণে হাদিস শরীফে খারেজীদের হারুরীয়াও বলা হয়েছে।
★ বিভিন্ন হাদিসে খারেজিদের পরিচয়।
০১. এমন এক সম্প্রদায় বের হবে তারা সত্য কথা বলবে যা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। (তাবারী)।
০২. এরা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে এবং খারাপ কাজ করবে। (তাবরানী শরীফ)।
০৩. তাদের ঈমান কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। (বোখারী শরীফ)।
০৪. তারা অধিক এবাদত করবে। (তাবায়ী)।
০৫.তোমাদের কেরাত তাদের (খারেজীদের) কেরাতের তুলনায় কিছুই নয়।(মুসলিম শরীফ)।
০৬.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু খারেজীদের সাথে তার মোনাজারার বর্ণনা প্রসংগে বলেন, আমি তাদের নিকট আসলাম, অতঃপর একদলের নিকট প্রবেশ করলাম। এদের চেয়ে এবাদতে অধিক সচেষ্ট আমি কাউকে দেখিনি। তাদের হাতগুলো উটের হাটুর মত শক্ত এবং তাদের
চেহারায় সেজদার চিহ্ন ছিল। (তাবরানী শরীফ)।
০৭. তারা সৃষ্টির সর্বোত্তম কথা বলবে। অর্থাৎ কোরআনের কথা বলবে।(বোখারী শরীফ)।
০৮. তারা মানুষকে কিতাবুল্লাহর প্রতি দাওয়াত বা আহবান করবে। অথচ এরা কোন দিক দিয়ে আমার সাথে সম্পর্কিত নয়। মিশকাত শরীফ)।
০৯. তারা ঘন ঘন মাথা মুণ্ডাবে ।(মিশকাত শরীফ)।
১০. তারা সর্বদা কোরআন তেলাওয়াত করবে। ফতহুল বারী পঞ্চদশ খণ্ড , পৃষ্ঠা ৩২২, মুসলিম শরীফ)।
১১. তারা উত্তমরূপে কোরআন তেলাওয়াত করবে। (ফতহুল বারী পঞ্চদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২২)।
১২. তারা সুন্দর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করবে। (ফতহুল বারী)।
১৩. তারা সৃষ্টির সর্ব নিকৃষ্ট -(বোখারী শরীফ) তাদের বিরুদ্ধে আমার উম্মতের উত্তম ব্যক্তিগণ লড়বে। (মসনদে বায্যার)।
১৪. খারেজীগণ জাহান্নামের কুকুর সমতুল্য। (ইবনে মাজা শরীফ)।
★হযরত আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রশংসনীয় উদ্দেগ।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে খারেজীদের নিকট পাঠালেন। অতঃপর তিনি তাদের সাথে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। ফলে এদের অনেকেই হযরত ইবনে আব্বাসের সাথে চলে আসল। অতঃপর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু এদের নিকট গেলে তারা তাঁর আনুগত্য মেনে নেয় এবং তাদের শীৰ্ষ স্থানীয় দুই নেতা আবদুল্লাহ ইবনে কাওয়া আল ইয়াশকুরী ও শাবাছ আত্তামীমীকে নিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহর সাথে কুফায় প্রবেশ করে। তৎপর তারা অপপ্রচার চালায় যে, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হুকুমত থেকে তওবা করেছেন। এ কারণে তারা তার নিকট ফিরে এসেছে একথা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জানতে পেরে তিনি কুফার জামে মসজিদে এ অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করে ভাষণ প্রদান করেন। তখন তারা মসজিদের চারপার্শ্বে শ্লোগান দিচ্ছিলো “লা হুকমু ইল্লাল্লাহ"। (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হাকেম বা মীমাংসাকারী নাই)। এ ধ্বনি শুনে খারেজীদের উদ্দেশ্যে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা'আলা আনহ তিন দফা আচরণ বিধির ঘোষণা করেন।
(১) তোমাদেরকে মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া হবে না,
(২) তোমাদের খাদ্য বন্ধ করা হবে না এবং
(৩) তোমরা যদি ফাসাদ সৃষ্টি না কর তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে না। (ফতহুল বারী শরহে বোখারী পঞ্চদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১১ )।
(সংকলন- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা।
লেখকঃ- মাওলানা কাযী মঈন উদ্দিন আশরাফী)।
★ পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করার অনুরোধ রইল।
আমাদের সাথে থাকুন-
facebook.com/meitobimarenabiho
Comments
Post a Comment