চার মাযহাব
★আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।
★প্রজেক্ট- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা★
★পোস্ট নং--২৪
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
♦চার মাযহাব♦
♣কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কেয়াস দ্বারা শরীয়তের বিধানসমূহ নির্ণয় করার পদ্ধতি ও নীতিমালা নিয়ে মুজতাহিদগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও দলীলের অবস্থানুসারে শরীয়তের আমল সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে ঈমামগণের মধ্যে ইখতেলাফ বা মতানৈক্য বিদ্যমান। ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পাঠ, মোকতাদিগণ উচ্চস্বরে ‘আমিন' বলা, রুকু থেকে উঠে রফে ইয়াদাইন বা দু'হাত উঠানো ইত্যাদি। এমন অনেক বিষয় নিয়ে মুজতাহিদগণের মধ্যে মতভেদের ফলে হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী হতে অনেক মাযহাবের সূচনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মহান চার ইমাম- ইমাম আযম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহিমের চার মাযহাবই স্থায়ী হয়েছে।অপরাপর ইমাম মুজতাহিদগণের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখিত ইমামগণের কারো না কারো সাথে অভিন্ন ছিল বিধায় সেগুলো এ চার মাযহাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে।ফলে এ চার ইমাম ব্যতিরেকে অন্য কোন ইমামের মাযহাব আজ অবশিষ্ট নেই। সব গুলোই বিলুপ্ত হয়েছে।হযরত আল্লামা শেখ আহমদ মোল্লা জীবন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হানাফী, মালেকী,শাফেয়ী ও হাম্বলী-এ চার মাযহাবের অস্তিত্ব বিদ্যমান।বিশ্বব্যাপী এগুলোর অগণিত অনুসারীর অবস্থান মহান আল্লাহর নিকট এগুলোর গ্রহণযোগ্যতারই উজ্জল প্রমাণ। (তাফসীরাতে আহমদীয়া)
♣ইসলামের মৌলিক বিধান বা আকাঈদের দিক থেকে চার মাযহাবই "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের" উপর প্রতিষ্ঠিত। চার মাযহাবের অনুসারীদের মধ্যে আকীদা নিয়ে কোন মতভেদ নেই।মহান চার ইমাম একজন অপরজনের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। মহান চার ইমামের অনুপম আদর্শের প্রভাব প্রত্যেক অনুসারীদের উপর পড়েছে।ফলে,শাফেয়ী মাযহাবের অনেক বিশ্ব বরেণ্য আলেম হানাফী মাযহাবের মহান ইমাম হযরত ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাতে ইমাম আবু হানিফাকে চার ইমামের মধ্যে “ইমাম আযম" বলে অকপটে স্বীকার করেছেন।ইমাম ইবনে হাজর মক্কী হাইসামী শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “আল খায়রাতুল হেসান-ফী মানাকেবে আবি হানিফাতান নো'মান" ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “তাবয়ীযুচ্ছাহীফা মানাকেবে আবি হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি"। ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বাগদাদ অবস্থান কালে ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযার শরীফ যিয়ারতের জন্য কুফা আসতেন। অতঃপর ইমাম আযম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির উসিলা নিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। এও প্রমাণিত আছে যে, হাম্বলী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মুনাজাত কবুল হবার জন্য ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির উসীলা গ্রহণ করতেন। এতে তার পুত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বিষয় প্রকাশ করলে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বললেন, নিশ্চয়ই হযরত ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মানুষের জন্য সূর্যের ন্যায় এবং দেহের জন্য সুস্থতার মত। (আৰ্দদুরারুদ্ধানীয়া, মুদাররিসুল হারাম পৃষ্ঠা ২৮ ও ফতোয়া এ-শামী-এর মোকাদ্দমা দ্রষ্টব্য)।
♣চার মাযহাবের সম্মানিত ইমামগণ ও তাদের অনুসারীগণ আক্ৰীদাগত দিক থেকে এক ও অভিন্ন হওয়ার ফলে পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ আজও অবশিষ্ট রয়েছে। এক মাযহাবের অনুসারী ইমামের পেছনে "ইকতেদা" করতে অন্য মাযহাবের অনুসারীদের কোন সংকোচ নেই, নেই দ্বিধা দ্বন্দ। চার মাযহাবের পারস্পরিক মতভেদের ফলে ইসলামের কোন প্রকার ক্ষতি হয়নি; বরং এর ফলে কোরআন-সুন্নাহর চার্চা ও গবেষণার ক্ষেত্র প্রশস্থ হয়েছে। সাধারণ মুসলমানগণ ইসলামের বিধি-বিধান পালনের এক একটা সুন্দর পদ্ধতি ও তরীকা লাভ করেছে।অন্যথায় প্রত্যেকে স্থান, কাল ও পাত্র অনুসারে আমল করে ইসলামকে হাসির খোরাক বানাতো।চার মাযহাবের সম্মানিত চার ইমাম অক্লান্ত পরিশ্রম করে খোদাপ্রদত্ত প্রতিভাবলে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে যাবতীয় বিষয়ে নীতিমালা ও সুষ্ট সমাধান উদ্ভাবন করে ইসলাম ও মুসলমানদের জীবন পরিচালনার কল্যাণে অপরিসীম অবদান রেখে গেছেন। তাঁরা “চার মাযহাব হক” এর উপর ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন এবং বলেছেন, যে মুসলিম চার মাযহাবের কোন একটির "তালীদ” অনুসরণ করবে না, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আল ঈমান ওয়াল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৮৫)। চার মাযহাব থেকে বহির্ভুত ব্যক্তি গোমরাহ (তাফসীরে সা'বী) । (বিস্তারিত জাআল হক প্রথম খও দেখুন)।
♣কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কেয়াসের আলোকে তাক্বলীদ ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মৌং মওদুদীর মন্তব্য কতো জঘন্য! তিনি বলেন, “ইসলামী শরীয়তে এইরূপ হানাফী, শাফেয়ী,আহলে হাদিস প্রভৃতি আলাদা আলাদা দল গঠন করিবার কোন অবকাশ নাই। এইরূপ দলাদলি মূর্খতার কারণেই হইয়া থাকে।” (ইসলামের হাকীকত পৃষ্ঠা ৮০)।
♣এখানে তিনি হানাফী, শাফেয়ী ও ‘আহলে হাদিস কে একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচার করলেন। আর ঢালাওভাবে সবাইকে মুর্খতার শিকার বলে অভিহিত করলেন। তিনি পরোক্ষভাবে মহান চার ইমামকেই মূর্খ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। (নাউযুবিল্লাহ)। মাযহাবী মতভেদের ফলে মুসলমানদের মধ্যে কোন প্রকার দলাদলি বিদ্যমান দ নেই।তবে ‘আহলে হাদিসের কারণে দলাদলি বিদ্যমান। হাদিসের মহান ইমামগণের মধ্যে যারা “মুজতাহিদে মুতলাক" (পরিপূর্ণ বা সর্বোচ্চ মানের মুজতাহিদ) ছিলেন না তাঁরা সবাই চার মাযহাবের কোন না কোন একটির অনুসারী ছিলেন। এমতাবস্থায় এ যুগের সাধারণ আলেম ও মুসলমান কিভাবে খেয়াল-খুশী মোতাবেক হাদিস অনুসরণ করে চলবে? সত্য কথা হলো, মৌং মওদুদীর এ ধরণের মন্তব্য আজ মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে দলাদলির জন্ম দিচ্ছে। কোন না কোন একজন ইমামের অনুসরণ ব্যতিরেকে শরীয়তের বিধি-বিধান পালন আদৌ সম্ভব নয়, বিধায় চার মাযহাবের কোন না কোন একটির অনুসরণ ওয়াজিব।
♣চার মাযহাব আক্বীদাগত দিক দিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের উপরই প্রতিষ্ঠিত।আমলের ক্ষেত্রে পদ্ধতি ও পর্যায়গত পার্থক্যের ফলে এ যাবৎ কোন প্রকার বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়নি। চার মাযহাবের ইমামগণ ও অনুসারীগণ আকীদাগত ভাবে এক ও অভিন্ন হওয়ার ফলে পারস্পরিক কোন হিংসা-বিদ্বেষও নেই; বরং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিধায় চার মাযহাবের পৃথক পৃথক অবস্থান ইসলামী ঐক্যের ক্ষেত্রে অন্তরায় নয় । ইসলামী বা মুসলিম রাষ্ট্রে চার মাযহাবের সহাবস্থানও সমস্যার নয়। আক্বীদাগত মতভেদই মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি ও অনৈক্যের মূল ও একমাত্র কারণ ।
♣ইসলামী ঐক্যের দোহাই দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপনকারী মৌং মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদের ফলে পাক-ভারত উপমহাদেশে আজ মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। তার ঈমান বিধংসী ভ্রান্ত মতবাদ সমাজের প্রতিটি স্তরে দলাদলির জন্ম দিচ্ছে, ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে ঐক্যের প্রাচীরে।এ দলাদলি পরিবার থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত হতে চলেছে। অনেক পরিবারে মওদুদী মতাবলম্বী ভাইয়ের সাথে সুন্নী আকীদা পোষণকারী ভাইয়ের সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন হতে দেখা যাচ্ছে। অনেক সুন্নী পিতা মওদুদী মতাবলম্বী ছেলের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক রাখতে পারছেন না। এ ভ্রান্ত মতবাদের ফলে অনেক মসজিদ,মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছে।এ হলো মওদুদীর তথাকথিত ঐক্যমন্ত্রের কুফল।
♥সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, বিচার করুন! দলাদলি কি চার মাযহাবের ফলে, না মওদুদীর মতো ইসলাম বিকৃতকারীদের ঘৃণ্য মতবাদের ফলে ?
©(সংকলন- ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা।
লেখকঃ- মাওলানা কাযী মঈন উদ্দিন আশরাফী)।
★পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করার অনুরোধ রইল।
আমাদের সাথে থাকুন-
Comments
Post a Comment