গাউছে পাকের জিবনী
আজ রাতে আউলিয়াকুল শিরোমণি হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি রাঃআঃ (বেলাদত শরীফ/ আর্বিভাব)
♥ততকালীন পারস্য বর্তমানে ইরানের অন্তর্গত কাস্পিয়ান সাগরের তীরে অবস্থিত জিলান বা গীলান শহরে ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দে, ৪৭০ হিজরির ১ রমজান (২৯ শাবান দিবাগত রাতে ) সূবহে সাদিকের সামান্য পূর্বে সোমবার দিন মায়ের উদর মোবারক হতে হযরত বড়পীর গাউসুল আযম দস্তগীর জমিনে আর্বিভূত হন । আরবীতে ''গাফ'' কে ''জীম'' দ্বারা পরিবর্তন করে জিলান উচ্চারণ করা হয় । তাই গীলান শহরকে অনেকে জিলান শহর ও বলে । আর এই জিলান শহরের সংক্ষিপ্ত রুপ হলো ''জীলী'' ।
♥তিনি ''জিলানী'' নামে ভুষিত প্রধানত দুটি কারণে-
১. তিনি জিলান শহরে আভির্ভূত হন।
২. তিনি এত উচ্চ মর্যাদার যে, আউলিয়া-কেরামের কেউ তার ধারের কাছেও নেই । এজন্য ফেরেশতাজাতির কাছে তিনি ''জিলানী'' নামে ভূষিত।
♥৪০ হিজরির শাবান মাসের ২৯ তারিখ জিলানের/গিলানের আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা অন্ধকারাছন্ন। লোকজন রমজানের চাঁদ দেখতে না পেয়ে পরদিন অনেকে সাবধানতা বশত: সেহেরী খেয়ে এবং অনেকে সেহেরী না খেয়ে ছুটে আসলেন জিলানের বিখ্যাত শায়েখ হযরত বড়পীরের আব্বাজান কেবলা হযরত সৈয়্যেদেনা ওয়া মাওলানা সৈয়দ শাহ আবু সালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত আলা জাদ্দিহি নাবিয়ানা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের দরবারে। লোকেরা জানতে চাইলেন- হযরত! আজকে রমজান শুরু হয়েছে কিনা? আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় আমরা কেউই চাঁদ দেখতে পারি নি।
হুজুর সৈয়্যেদেনা আবু সালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত আলা জাদ্দিহি নাবিয়ানা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম তাদের বলেন- ''আজকে সুবহে সাদিকের সময় আমার ঘরে একটি পবিত্র ফুটফুটে শিশু আগমন করেছে কিন্তু শিশুটি জন্মের পর হতেই মায়ের দুধ পান হতে বিরত রয়েছে। সুতরাং রজমান আজকে শুরু হয়েছে।''
অনেকে হুজুর পাকের কথা বিশ্বাস করলেন এবং অনেকে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে লাগলেন।
কিন্তু অবাক কান্ড!! পবিত্র এই শিশু সারাদিন কিছুই পান করলো না। মাগরিরের পরে মায়ের দুধ পান করলেন। এ খবর যখন জিলানের অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়ল তখন সবাই একবাক্যে বিশ্বাস করলো আজকে রমজান শুরু হয়েছে।
হযরত বড়পীরের আম্মাজ্বান কেবলা হযরত সৈয়দা উম্মুল খায়ের ফাতিমা আলাইহাস সালাম বর্ণনা করেন- ''আমার বেটা আব্দুল কাদের জিলানী(আ.) রমজানের প্রথম রাতে জন্মগ্রহণ করেছেন। জন্মদিন হতেই দিনের বেলায় তিনি আমার দুধ পান করেন নি। ইফতারের সময় হলেই তিনি দুধ পান শুরু করতেন এবং সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত সে দুধ পান করতেন।''(মানাকেবে গাউসিয়া)
অতি অল্প সময়ের মধ্যে গাউসে পাকের এই কারামত জিলান নগর হতে সমগ্র পারস্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল।
এভাবে অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে জন্মের মুহুর্ত হতে গাউসে পাকের জাহিরি জীবনকাল শুরু হয়েছে এবং পরবর্তী জীবনকালের কমবেশি আমরা সবাই জানি।
বেলায়েতে মওলা শেরে খোদা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত- প্রিয় নবী আকাঁ ও মওলা মোহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কোন এক সময় মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত উঠিয়ে আরোজ করলেন- ''ওগো দয়াময় প্রভু ! তুমি আমার সেই প্রতিনিধির উপর রহমত ও করুণা বর্ষণ করো, যে আমার পরে পৃথিবীতে আগমন করবে এবং আমার হাদিস যথার্থ ও সঠিকভাবে বর্ণনা করবে। আমার মৃতপ্রায় দ্বীন ইসলামকে নবজীবন দান করবে।''
দয়াল নবীজীর ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী তারই পবিত্র বংশে তারই রেসালতের প্রতিনিধি হিসাবে মৃতপ্রায় দ্বীন ইসলামকে নবজীবন দান করেন বা মহিউদ্দিন নামে আর্ভিভূত হন হযরত গাউসুল আযম বড়পীর সৈয়্যদেনা শায়েখ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী আলা জাদ্দিহি নাবিয়্যানা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম।
তিনি সকল পীরদের পীর এজন্য উনাকে পীরানে পীর বলা হয়।
তিনি সকল কুতুবের কুতুব। এজন্য তিনি কুতুবুল আযম বা কুতুবে রব্বানী।
আউলিয়াদের মধ্যে আল্লাহ পাকের কাছে সবচেয়ে মুহিব্বিন আউলিয়া এজন্য তিনি মাহবুবে সোবহানী।
তিনি সকল আউলিয়ার সাহায্যকারী, এজন্য তিনি দস্তগীরে আফজালুল আউলিয়া।
তিনি সকল জ্বীন-ইনসান জাতির সাহায্যকারী, এজন্য তিনি গাউসুস সাকালায়েন।
তিনি সকল গাউসদের গাউস, এজন্য তিনি গাউসুল আযম ও গাউসুল আগওয়াস ।
তিনি পাক-পাঞ্জাতনের নুরে ধরায় প্রকাশিত, এজন্য তিনি নুরে ইয়াজদানী।
এভাবে সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হযরত গাউসে আযম দস্তগীরের আরোও অনেক গুণবাচক নাম বা উপাধি রয়েছে।এখানে শুধু উনার কয়েকটি মোবারক গুণবাচক নাম/উপাধি উল্লেখ করা হলো।
আমি অধম নালায়েক গাউসে পাকের আর কি প্রশংসা করবো যার প্রশংসায় লিপ্ত স্বয়ং আল্লাহ পাক সুবহান, রাসুলে খোদা ও মওলা আলী(আ.) এবং দুনিয়ার সমস্ত হক্কানী আউলিয়া-কেরাম, ইমামগণ, মুহাদ্দিসগণ ও উলামায়ে হক। বিভিন্ন দেশের যুগ শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুণি,উলামা-মুহাদ্দিস, ইমাম ও আউলিয়াগণ হযরত গাউসে পাকের এতো বেশি প্রশংসা লিখে গেছেন যার কারণে তারা নিজেরাই প্রশংসিত ও উচ্চ মর্যাদার হয়ে রয়েছেন। সারা বিশ্বের মুসলিম জাতির বিভিন্ন দলমতের কাছে তথা শিয়া-সুন্নী,ওহাবী, লা-মাযহাবী, সালাফি, দেওবন্দী,কওমী, জামাতি,তবলিগী ইত্যাদি দল-মত সকলের কাছে গাউসে পাকের শিক্ষা-দীক্ষা, চরিত্র ও উচ্চ মর্যাদার এতো বেশি সুপরিচিত রয়েছে যে নতুন করে পরিচয়ের কোন প্রয়োজন পড়ে না । এমনকি হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান জাতির জ্ঞানী-গুনিদের কাছেও হযরত বড়পীর গাউসে পাক অত্যন্ত সুপরিচিত।
এমনকি গাউসে পাকের কঠোর সমালোচকরাও গাউসে পাকের প্রশংসায় লিপ্ত থাকেন। কঠোর সমালোচনাকারীরাও গাউসে পাকের চরিত্র ও শিক্ষা-দীক্ষার কাছে সব সময় নত হয়ে থাকেন। শরিয়ত ও তরিকতের দৃষ্টিতে হুবহু রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের ও আধ্যাত্তিকতার পরিচয় তিনি বহন করেন বিধায় পৃথিবীর সকল দল-মতের জ্ঞানী-গুণীরা কখনও তার মধ্যে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি খুজে পায় না। এজন্য তামাম পৃথিবীর জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের কাছে গাউসে পাক পরম শ্রদ্ধেয় মহান ব্যক্তিত্ব। আউলিয়া-কেরামের মধ্যে সমগ্র বিশ্বে তিনি ছাড়া আর কেউ এই মর্যাদায় পরিপূর্ণভাবে সুপরিচিত নন।
সুতরাং হুজুর গাউসে পাকের শান ও মান লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই গাউসে পাকের প্রশংসায় লিখিত তারই পবিত্র বংশধর হযরত মওলা পাকের কাসিদার বাণী দিয়ে আজকের লেখা শেষ করতে যাচ্ছি। হযরত বড়পীর গাউসে পাকের শান ও মান নিয়ে তারই কাদেরীয়া তরিকার কাদেরীয়া গগনের সূর্য তথা শামসুল-কাদেরী হযরত সৈয়্যেদেনা ওয়া মাওলানা সৈয়দ শাহ মুরশিদ আলী আল কাদেরী আল জিলানী আল বাগদাদী ওয়াল মেদিনীপুরী আলা জাদ্দিহি নাবিয়্যানা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম ওরফে হযরত মওলা পাক বলেন-
নুরে খোদা হো তুম বা খোদা গাউসে কিবরিয়া
তুম সে খোদা নেহি হ্যায় জুদা গাউসে কিবরিয়া।
অর্থ: তুমি খোদার নুর হতে বা খোদা হতে গাউসে কিবরিয়া
তুমি খোদা হতে পৃথক নও গাউসে কিবরিয়া।
মেহরে কদম কে তুম হো যিয়্যা গাউসে কিবরিয়া
তুম হো যহুর নুরে খোদা গাউসে কিবরিয়া।
অর্থ: তোমার ''মেহরে কদম'' তো নিদর্শন গাউসে কিবরিয়া
তুমি খোদার নুরে প্রকাশিত গাউসে কিবরিয়া।
হ্যায় ফাওকে আউলিয়া পে বেলায়েত মে আপকো
আ'লা হ্যায় সব সে মরতবা ইয়া গাউসে কিবরিয়া।
অর্থ: আপনি আউলিয়াদের শিরোমণি বেলায়েতের ভিক্তি
উচ্চতম আপনার সমস্ত পদ মর্যাদা হে গাউসে কিবরিয়া। (দিওয়ান-ই-পাক)
হযরত গাউসে পাকের আগমন উপলক্ষে আজকে বাদ মাগরির বড় হুজুর পাক কেবলা হযরত সৈয়দ শাহ রশিদ আলী আল কাদেরী ওয়াল বাগদাদী ওয়াল মেদিনীপুরির ''আঞ্জুমান-ই কাদেরিয়া'' প্রচালিত ভারত,বাংলাদেশ,বার্মা তথা সমগ্র ভারতবর্ষে হযরত মওলা পাকের 'খানকায়ে কাদেরিয়া মসজিদগুলোতে এবং হযরত মওলা পাকের খলিফা পীরের সকল দরবারগুলোতে হযরত বড়পীরের মাহফিল উতযাপিত হবে। গাউসে পাকের সকল আশেক এবং পীর-ভাই বোনদের উক্ত গাউসিয়া মিলাদ-মাহফিলে হাজির হয়ে অথবা যে যেখানেই থাকুন গাউসে পাককে স্মরণ করুন। এছাড়া আজকে রাতে সকল তরিকতপন্থীকে হযরত বড়পীরের স্মরণ করার আহবান রইলো।
ইয়া গাউসে আযম দস্তগীর। আপনার বেলায়েত ও গাউসিয়াতের ফয়ুজাত আমাদের উপর নসীব করুন । আমাদের সকল মুসিবতে আপনার নেগাহ দৃষ্টি অর্পন করুন। আমাদের যেকোন বেয়াদুবি এবং নফসের বদরিপুর অপকর্মের ক্ষমা প্রদান করুন। আপনার বংশধর হযরত মওলা পাকের দামানে থাকার তৌফিক দিন। আপনার কাদেরীয়া ফুল বাগিচার গোলামী নসীব করুন। আমীন । সুম্মা আমীন। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ।
লেখক: মোহাম্মদ তফিজ উদ্দিন কাদেরী
Comments
Post a Comment