শাওয়ালের ছয় রোযা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
শাওয়ালের ছয় রোযার গুরুত্ব।
★সমস্ত প্রসংশা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আপন বান্দাদের কে নৈকট্য দান করেন এবং অসংখ্য দরূদ সালাম ঐ নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যিনি শাওয়ালের ছয় রোযার উপর আপন উম্মতকে উত্সাহিত করেছেন, তাঁর সাথে তাঁর পরিবাব ও আসহাবের উপর যাঁরা শাওয়াল মাসের রোযাকে যথাযত গুরুত্ব দিতেন।
★বর্তমান যুগের মুসলমান নফলতো দূরের কথা ফরজকেও গুরুত্ব দেয় না অথচ ফরজ-ওয়াজিব,সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করার পর , বান্দা যখন নফল আদায় করে , ঐ বান্দাকে প্রভু খুব বেশি ভালবাসেন, এমনকি ঐ বান্দার প্রতিটি অঙ্গের মাধ্যমে আল্লাহ উনার কুদরত প্রকাশ করেন।
যেমনঃ হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
★সর্বদা বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমি আল্লাহর নিকটতম হয়ে যায়, এমন কি আমি তাকে ভালবাসি, আর আমি তাকে ভালবাসলে , আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে, আমি তার পা হয়ে হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে, এমনকি সে যা চায় আমি তা অবশ্যই দিয়ে থাকি। (বুখারি ও মুসলিম)
★অর্থ্যাত্ আল্লাহর কুদরত তার প্রত্যেক অঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ঐ বান্দার কাজ মূলত আল্লাহর কাজ। এই মর্যদা হাসিল হয় বেশি নফল ইবাদত করার মাধ্যমে। তাই অধম ইচ্ছা করলাম, রমজানের ফরজ রোজার পরে ছয়টি নফল রোযা রাখার ফজায়েল বর্ণনা করব। যাতে এটা পড়ে আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করেন, আমিন।
★পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
★যে বান্দা একটি নেক কাজ করবে, তার সাওয়াব দশগুন পাবে, আর খারাপ কাজ করলে একটির বদলা একটি গুনাহ হবে। তাদেরকে জুলম করা হবে না।
★উল্লেখিত আয়াত দ্ধারা বুঝা যায় , একটা নেককাজের বদলা দশ গুন সাওয়াব হবে, বেশি হবে না আসলে তা নয়" বরং একনিষ্টতার মাধ্যমে নেক কাজ করলে একের বদলা আল্লাহ তায়ালা সাতশত গুণ এবং এর চেয়েও বেশী দান করবেন। কমপক্ষে একের বদলা দশটা হবে। বছরে রমযান মাসে ত্রিশ রোযা ফরজ কয়া হয়েছে। আমরা উল্লেখিত আযসাতের মাধ্যমে ত্রিশকে দশ দিয়ে গুণ করলে পাই তিনশত। আরবি হিসাব অনুযায়ী বছরে ৩৬০দিন। রমযানে রোযা হিসাব করলে ৬০দিন বাকি থাকে, সে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরলাদ করেন,
★যে বান্দা রমযানের রোযা রাখার পরে শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে ব্যাক্তি সারা বছর রোযাদার হিসাবে গন্য হবে। (বুখারি,মুসলিম,মিশকাত,১৭৯)
★রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা আসমান জমিনকে সৃষ্টি করেছেন শাওয়াল মাসের ছয় দিনে, আর যে বান্দা ঐ ছয় দিন রোযা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর যত সৃষ্টি তত সংখ্যক পূণ্য ঐ বান্দার আমলে লিখে দেবেন। তত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন, এবং তত মর্যদা বাড়িয়ে দিবেন। (দুররাতুন নাসিহিন)
★রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন,
★যে ব্যাক্তি রমযানের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, তার থেকে গুনাহ বা পাপ এমন ভাবে বের হয়ে যায়, শরীরে আর কোন পাপ থাকে না, যেমন ভাবে ছিল, ঐ দিধ যেই দিন তাকে তার আম্মা জন্ম দিয়েছিলেন।
★শাওয়াল মাসে ছয় রোযা রাখার বরকত।
★হযরত সুফিয়ান সুরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি তিন বছর অনবরত মক্কা শরীফে অবস্হান করলেন, একজন মানুষকে দেখলেন, প্রত্যেক দিন সে জুহুরের সময় এসে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করে নামাজ আদায় করত, এবং আমাকে সালাম দিয়ে চলে যেত। এভাবেই তার সাতে আমার আন্তরিক মুহব্বত সৃষ্টি হয়, এক দিন সে অসুস্হ হয়ে পড়ে এবং আমাকে খবর দেয়। আমি যখন তাকে দেখার জন্য যাই, সে বল্ল হুজুর আমি যখন মারা যাব, আপনি নিজের হাতে আমাকে গোসল করাবেন, কাপন পড়াবেন এবং জানাজার নামাজ পড়ায়ে দাপন করবেন, দাপন করে চলে আসবেন না, একরাত আমার কবরের পার্শ্বে থাকবেন এবং তাওহিদ রিসালতের তলকিন করবেন, যাতে আমি মুনকির নাকিরের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি। আর ঐ মানুষ যখন মারা যায়, তাঁর অছিয়ত মোতাবিক আমি কাজ করে, রাত ভর তার কবরের পার্শ্বে বসে রইলাম। হঠাত্ আমি নিদ্রা ও তন্দ্রার মাঝা-মাঝি ছিলাম অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এল, হে সুফিয়ান তাকে তুমি হেফাজত তলকিন করার দরকার নেই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন? উত্তরে বল্ল, এই ব্যক্তি রমজানের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাযে ছয়টি রোযা রাখত। যার কারনে তাকে কেউ হেফাজত করার প্রয়োজন নেই এবং তলকিন বা কবরের প্রশ্নের উত্তর শিখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমি জাগ্রত হওয়ার পর কোন মানুষকে দেখলাম না। অতপর অযু করে নামাজ আদায় করে আবার শুয়ে পড়লাম, ঘুমাবার পর তিন বার উল্লেখিত স্বপ্ন দেখলাম এবং দৃঢ় বিশ্বাস করে নিলাম নিশ্চয় এ স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে । শয়তানের পক্ষ থেকে নয়। আমি একটি দোয়া করে তাঁর কবর থেকে ফিরে আসলাম। দোয়াটি ছিল-
★হে আল্লাহ আমাকে রমযানের রোযা ও তার পরপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখার তৌফিক দিন। অতপর মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে তৌফিক দিলেন। (বদরুদ দুরর)
★হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ) বর্ণনা করেন, রাসল (দঃ) এরশাদ করেন,
রমযানের পর রোযা রাখা মানে , যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে এসে আবার ফিরে গিয়ে হামলা করা।
★অর্থ্যাত্ - রমযান শরীফে রোযা রাখা মানে নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করা, রমযান মাস চলে গেলে যুদ্ধ থেকে বিরতি হয়ে যায়। আবার শাওয়াল মাসে রোযা রাখলে আবার যুদ্ধে ফিরে যাওয়া হয়। সেই জন্যে ইমাম শা'বী (রঃ) বলতেন,
★রমযানের একটি রোযা আল্লাহ তায়ালার কাছে সারা বছর রোযা রাখার চেয়ে উত্তম (মুনাবি)
★শাওয়াল মাসে রোযা রাখার উদাহরনঃ
★একজন মানুষ ফল খাওয়ার নিয়তে গাছ রোপন করল, অতঃপর নিয়মিত পানি ও সার দিয়ে গাছের শিখরে ভিজা রেখে গাছটা তরুতাজা রাখল, আর যখন কয়েক দিন পানি সার দিল না , তখন শিখর শুকনা হয়ে যায়, তখন গাছের পাতা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়, আবার যখন পানি দিনে শিখরে সাইরাব করে দেয়া হয়, পাতার রং পুনরায় সবুজ হয়ে যায়, ঠিক তদ্রুপ রমযান ও শাওয়ালের রোযা । রমযান মাসে বান্দা রোযা ও বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে তার ঈমানের গাছে পানি দিয়ে তরুতাজা করে, আবার মধ্যখানে ঈদের আনন্দে ডুব দেয়, সেই গাছের শিখর শুকনা করে ফেলে , পুনরায় শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখলে ঈমানের গাছটা তরুতাজা হয়ে যায় এবং আখিরাতে তার ফল খাওয়া যায়। (হায়াতুল কুলুব)
★শাওয়াল মাসে রোযা রাখার হিকমত।
★কিছু কিছু আলেম সমাজ বলেন, নামাজ যেমন ওয়াজিব তরক হলে সাহু সিজদা আদায়ের মাধ্যমে নামাজ কে পরিপূর্ণ করা হয়, ঠিক তদরূপ রোযা পরিপূর্ণ করার জন্য , শাওয়ালের রোযার প্রতি রাসূল (দঃ) তাগিদ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, রমজান মাসে রোযা রাখার মাধ্যমে বান্দা, আল্লাহ তায়ালার মধ্যখানে নৈকট্যতা সৃষ্টি হয় এবং পর্দা উঠে যায়। আর ঈদের আনন্দে বান্দা যখন মেতে উঠে বান্দাদের সাথে আনন্দ করে আল্লাহও তার মধ্যে খানে পর্দা এসে যায়। আর যখন শাওয়াল মাসে রোযা রাখে, আবার পর্দাটা দূর হয়ে যায়। বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে চলে যায়। মধ্যখানে পর্দা পুনরায় সরে যায়।
শাওয়ালের রোযার মাধ্যমে ছাকরাতুল মওতসহজ হয়ে যায়।
★রাসূল (দঃ) এরশাদ করেন,
★যে ব্যাক্তি এই ছয়েটি রোযা রাখবে, রাব্বুল আলামীন তার মৃত্যুর কঠোরতা সহজ করে দেবেন, যেমনি ভাবে পিপাসার্ত মানুষের জন্য ঠান্ডা পানি। রাসূল (দঃ) আরও এরশাদ করেন,
★নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির ছয়শতটি অঙ্গ আছে এবং প্রত্যেক অঙ্গে শত দঃখ পেরেশানী আছে, কলব ছাড়া, কেননা কলব আল্লাহর মারেফাতের স্হান। সে জন্য শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখলে ছয়শত অঙ্গের রূহ বের হওয়াটা সহজ হয়ে যায়। (যুবদাতুল ওয়ায়েজীন)
★শাওয়ালের রোযার ধারাবাহিক কি শর্ত?
★কিছু সংখ্যক আলেম বলেন, শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা ধারাবাহিক রাখার দরকার, কারণ ধারাবাহিকতার মাধ্যমে অন্তরের ময়লা পরিস্কার করতে অধিকতর কার্যকরী। সেই জন্য মাওলা আলী (রঃ) বলতেন, শাওয়াল মাসের রোযা রমজানের রোযার মত গুরুত্ব দিয়ে রাখা প্রয়োজন, কেননা এই রোযা গুলো রমজানের রোযার অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণতার রূপ দেয়। হ্যা, আলাদা-আলাদা বা ধারাবাহিক ছাড়া রাখার মধ্যে
না-জায়েজ হওয়ার কোন কারণ নেই। পরিশেষে রাব্বুল আলামীনের দরবারে আকুল আবেদন , তিনি যাতে তাঁর বান্দাদের কে শয়তানের ওয়াছওয়াছা থেকে রক্ষা করে শাওয়াল মাসে রোযা রাখার তৌফিক দিয়ে সারা বছর রোযা রাখার সাওয়াব অর্জন করার তাওফিক দেন। আমিন।
(তথ্যসূত্র- রোজা,যাকাত ও শবে বরাতের গুরুত্ব।
(মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভী)
Like page-
facebook.com/meitobimarenabiho
Comments
Post a Comment