যাকাত সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন উত্তোর।
যাকাত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
(যা রয়েছেঃ যাকাত কি, কে দেবে, কাকে দেবে, কিসে যাকাত দিতে হয়, ট্রেইড গুডস্ এর যাকাত, ষ্টক মার্কেট শেয়ারের যাকাত, এগ্রো ফার্মের যাকাত, শাক-সব্জি ও ফল বাগানের যাকাত এবং যাকাত ক্যলকুলেটর সহ আরো অনেক কিছু। শেয়ার করে জ্ঞান বিস্তারে সহযোগিতা করুন)
---------------------------------
১| প্রশ্নঃ যাকাত কি? কুরান-সুন্নাহ্ মতে যাকাতের বিধান কি? যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী এবং যাকাত কেন ফরজ করা হলো?
উত্তরঃ
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই শব্দটি দুটি অর্থ বহন করে। একঃ বিশুদ্ধতা (কারণ এটি সম্পদকে বিশুদ্ধ ও পবিত্র করে)। দুইঃ বৃদ্ধি (কারণ এটার যথার্থ পরিশোধ সম্পদকে বৃদ্ধি করে)
শরীয়তের দৃষ্টিতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি তার সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ আবশ্যকীয় ভাবে ঐ সকল ব্যক্তিকে দিতে হয় যারা যাকাত নিতে পারবেন বলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
কুরান ও সুন্নাহর স্পষ্ট বর্ণনামতে যাকাতযোগ্য সম্পদের অধিকারী ব্যক্তির উপর যাকাত পরিশোধ করা ফরজ। যাকাতের ফরজীয়্যত বা আবশ্যকীয়তাকে অস্বীকার করা কুফর বা ধর্মহীনতা। পবিত্র কোরানে রিপিটেডলি প্রায় ৮২ বার যাকাত আদায় করার উপর হুকুম সম্বলিত আয়াত বর্ণিত হয়েছে। এভাবে হাদীছ শরীফেও অসংখ্যবার এই বিষয়ে জোর তাগাদা এসেছে।
কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিম্মোল্লিখিত শর্তগুলো পূর্ণ হওয়া আবশ্যকঃ
- মুসলমান হওয়া
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। সুতরাং শিশুদের উপর যাকাত ফরজ না।
- মানষিক ভাবে সুস্থ হওয়া
- মুক্ত হওয়া। তাই জেল হাজতে বন্দি ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ না।
- সম্পদের পূর্ণ মালিকানা
- সম্পদের পরিমাণ মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত হওয়া
- ৠনমুক্ত হওয়া। (অর্থাৎ যতটুকু পরিমাণ সম্পদ আছে সেই পরিমাণ ৠণ থাকলে অথবা মূল সম্পদ থেকে ৠণের পরিমাণ বাদ দিলে মূল সম্পদ যদি নেসাব পরিমাণ না হয় তবে যাকাত ফরজ না)
- যাকাত পরিশোধযোগ্য শুধুমাত্র সেই সম্পদের উপর যা বৃদ্ধি পায় মুল্যের দিক থেকে (যেমন স্বর্ণ) বা বাস্তবিক অর্থে (যেমন পশু বা ট্রেইড স্টক)
- সম্পদের মুল্য শরীয়ত কতৃক নির্ধারিত নেসাব পরিমান হওয়া
- নেসাব পরিমাণ সম্পদ ঐ ব্যক্তির মালিকানায় পূর্ণ এক বছর থাকা। (তাই সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলেও যদি তা মালিকানায় এক বছর অতিক্রম না করে তবে যাকাত পরিশোধযোগ্য না)
যাকাতের সম্পর্ক যেহেতু অর্থ ও ফাইনান্সের সাথে সেহেতু ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাতের ভুমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত আবশ্যক হওয়ার পিছনে অনেক হেকমতের মধ্যে নিম্নোল্লিখিত বিষয় গুলো উল্লেখযোগ্যঃ
- যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ বিশুদ্ধ ও বরকতমন্ডিত হয়।
- সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ আর্থিক ভাবে এই সিস্টেমের মাধ্যমে সহায়তা ও স্বচ্ছলতা লাভ করে।
- যাকাত দাতা অন্তরের কৃপণতা লোভ থেকে মুক্তি লাভ করে
- সম্পদের আকৃতিতে আল্লাহ্ তায়ালার করুণা লাভের পর তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দারুণ এক মাধ্যম এই যাকাত।
সুতরাং মুসলিম রাস্ট্রের উচিত যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ইকোনমিক সিস্টেম এবং সামাজিক অবকাঠামো দাড় করানো যার মাধ্যমে সব ধরনের অবৈধ উপার্জনের পথ রুদ্ধ হবে এবং বৈধ উপার্জনের হাজারো পথ উম্মোচিত হবে। ফলশ্রুতিতে রাস্ট্রের অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ইকোনমিক ডেডলকের পরিসমাপ্তি হবে।
2- প্রশ্নঃ যাকাত আদায়ে কী ফজিলত বা পূণ্য রয়েছে এবং অনাদায়ে কি ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে?
উত্তরঃ এর ফজিলত অপরিসীম যা গুনে বা বর্ণনা করে শেষ করার মত নই। আমি এখানে দু'একটি রেওয়ায়ত উল্লেখ করব যা থেকে ফজিলতের বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
- হযরত ওমাইর আল্ লাইছি (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, হুযুর (দঃ) বিদায় হজ্বের ভাষনে এরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধু তারা যারা নামাজ আদায় করেন এবং যারা আল্লাহ্ কতৃক ফরজকৃত পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ কায়েম করেন, রমযান মাসে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, খুশিমনে যাকাত আদায় করেন এবং আল্লাহ্ নিষেধ করেছেন এমন প্রত্যেক কবিরা গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকেন। (তাবরানি, আল-মু'জামুল কাবীর, ১৭:৪৭, নং ১০১, হাকেম, মুছতাদরাখ, ১:১২৭, নং ১৯৭)
- হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মুয়াবিয়া আল-গাদিরী (রাঃ) কতৃক বর্ণিত যে, হুযুর (দঃ) এরশাদ করেনঃ
যেই ব্যক্তি তিনটি কাজ সম্পাদন করবে সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণে সক্ষম হবেঃ তম্মধ্যে একটি হচ্ছে- যেই ব্যক্তি প্রত্যেক বছর স্বেচ্ছায়, স্বানন্দে যাকাত আদায় করে। (আবু দাউদ, সুনান, ২:১৬, নং ১৫৮২)
- হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) কতৃক বর্ণিত যে, হুযুর (দঃ) এরশাদ করেনঃ
দানশীলতা মানুষের পাপকে এমনভাবে মোচন করে যেমনি ভাবে পানি আগুনের নির্বাপন করে। (তিরমিঝী, আল জানে আল সাহীহ্, ৫:১৩, নং-২৬১৬)
আর যারা ফরজ হওয়ার পরেও বিভিন্ন অজুহাতে যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকে, কুরান ও হাদীছে তাদের ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরানে বর্ণনা করেনঃ
আর যারা (ঐ সম্পদ থেকে) দান করার ক্ষেত্রে কৃপণতা করে, যা
আল্লাহ্ নীজ করুনায় তাদের দান করেছেন, তারা যেন মনে না করে যে এটা তাদের জন্য মংগলজনক। না, বরং এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। অতি
শীঘ্রয় শেষ বিচারের দিন এই সম্পদ যা নিয়ে তারা কৃপণতা করছে, (তাদের গলায়) শিকলের মত করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
আর মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর মালিকানা একমাত্র আল্লাহ্র। আর আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের কৃতকর্মের ব্যপারে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। (আলে-ইমরান ৩:১৮০)
অনুরুপভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফে হুযুর (দঃ) এরশাদ করেন যা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কতৃক বর্ণিতঃ
যাকে আল্লাহ্ তায়ালা সম্পদশালী করেছেন, অতঃপর সেই ব্যক্তি যদি ঐ সম্পদের যাকাত প্রদান না করে, তবে কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুপার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ , আমি তোমার সঞ্চয়। (সহিহ্ বুখারী, ২:৫০৮, নং ১৩৩৮)
এছাড়াও পবিত্র কুরানের সুরা তাওবায় এবং মুসলিম শরীফের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, যারা স্বর্ণ –রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তার যাকাত পরিশোধ করেনা, কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট,পার্শ্ব ও পৃষ্টদেশকে দগ্ধ করা হবে। সুতরাং আমাদের উচিত হবে যাকাত আদায়ে অবহেলা না করা।
3| প্রশ্নঃ যাকাত আদায়ের উত্তম উপায় কি? কোথায় যাকাতের অর্থ ব্যয় করা তুলনামূলকভাবে উত্তম; ব্যক্তির জন্য, না অনেক মানুষের উপকার হয় এমন কোন প্রজেক্টে?
উত্তরঃ যাকাত অসহায়, গরীব এবং সমাজের সুবিধা বঞ্চিত লোকের অধিকার। অর্থ কষ্টের যাতাকলে পিষ্ট যে কোন ব্যক্তিকে দিলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়াটাই বেশি উত্তম। প্রথমতঃ আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতের মধ্যে যদি কেউ গরীব থাকে এবং পবিত্র কুরানে বর্ণিত আট শ্রেনীর কোন একটাতে পতিত হয়, তবে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধীকার দেওয়া উত্তম। দ্বিতীয়তঃ সমাজের মধ্যে কিছু এমন লোক থাকে যারা অসহনীয় অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করলেও সামাজিক মর্য্যাদা ও
আত্মসম্মানবোধের কারণে মানুষের কাছে চাইতে পারেনা। এই ধরনের পরিবার গুলোকে তাদের প্রয়োজন বিবেচনা করে টপ লিষ্টে রাখা উচিত।
যাকাত ব্যক্তি কেন্দ্রীক বা সামষ্টিক, উভয় রুপেই প্রদান করা যায়। যেভাবেই প্রদান করা হোক না কেন, তাতে অসহায় লোকের উপকার হয়। তবে সুদুরপ্রসারী ফলাফল বিবেচনা করলে ব্যক্তির চেয়ে সামষ্টিক উপকার হয় এমন প্রজেক্টে যাকাত প্রদান করা উত্তম। ঠিক যেমন একজন ব্যক্তিকে দেওয়ার চেয়ে একটা পরিবারকে প্রদান করলে তা বেশি উপকারী হয়। ইসলাম দ্বীন হিসাবে ইনডিভিজুয়েল প্রাকটিসের চেয়ে কালেকটিভ প্রাকটিসে বেশি গুরুত্ব দেয়। যদি রাস্ট্রের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্লান করে যাকাতের অর্থ সংগ্রহ করে গরীব, অসহায় লোকের কর্মসংস্হানের ব্যবস্থা করা যেত তবে এতে তাদের গরীবি দূর হতো এবং তারা স্বাবলম্বি হতে পারত। যেমন: প্রোপার প্লানিংয়ের মাধ্যমে যদি গরীব মহিলাদের সেলাই শিখিয়ে একটা সেলাই মেশিন এবং সংগে কিছু টাকা দিয়ে দেওয়া যেত তবে এতে গরীব পরিবার গুলো স্ববলম্বি হওয়ার সুযোগ পেত। এই সিস্টেমে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা হলে আমাদের সমগ্র জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে অনেকটা সহায়ক হবে। যেটা হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাঃ) এর সময়কালে সাধিত হয়েছিল। বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের কয়েক বছরের মধ্যে দেশে যাকাত নেওয়ার লোক খোজে পাওয়া যায়নি। আর এই কাজটা এখনো সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা এবং 'করতেই হবে' মেনটালিটির।
4| প্রশ্নঃ "মাছারিফুয যাকাত" কি এবং কোন্ শ্রেণীর লোক যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন? বিষয়টা একটু ব্যখ্যা করে সংক্ষিপ্তাকারে জানাবেন।
উত্তরঃ 'মাছারিফ' শব্দটি 'মাছরাফের' বহুবচন। 'মাছারিফুয যাকাত' বলতে ঐ শ্রেণীর লোককে বুঝায় যাদের জন্য যাকাতের অর্থ খরচ করা যাবে এবং যারা যাকাত নিতে পারবে। পবিত্র কুরানের আলোকে আট শ্রেণীর লোক যাকাত নিতে পারবেঃ
নিশ্চয়ই যাকাত কেবলমাত্র গরীব, মিসকীন, যাকাত আদায় করার নিমিত্তে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং ঐ সমস্ত ব্যক্তি যাদের (অর্থ সহায়তা দিলে) তাদের অন্তরে (ইসলামের প্রতি) এট্রাকশন সৃষ্টি হবে তাদের অধিকার। এবং তা মানুষকে দাসত্বের শৃংখল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, ঋণের ভোজায় নুয়ে পড়া ব্যক্তির ঋণ মুক্তির জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবা ৯:৬০)
এই আয়াতের আলোকে নিম্মোল্লিখিত আট শ্রেণীর লোক যাকাত গ্রহণ করতে পারবেঃ
১- ফকির বা গরীব। ইসলামী আইনবিদদের মতে, ফকির বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যার নিকট কিছু সম্পদ আছে যা দিয়ে মোটমোটি তার প্রয়োজন মিটে যায়, তবে তা নেসাবের তুলনায় কম।
২- মিসকিন বা সহায় সম্বলহীন। এরা ফকির থেকেও অসহায়।
৩- যাকাত সংগ্রহকারী অর্থাত্ সেই সমস্ত কর্মকর্তা যাদেরকে যাকাত এবং 'উশর্' (উৎপাদিত ফলনের উপর ট্যক্স) সংগ্রহ করার জন্য নিয়োগ করা হয়। তারা ধনী হোক অথবা গরীব, তাদের বেতন যাকাত ফান্ড থেকেই বহন করা হবে।
৪- 'মুআল্লাফাতুল কুলুব' বা ইসলামের প্রতি এট্রাক্ট করার জন্য অমুসলিমদেরকে যাকাত ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান। কিছু অমুসলিম রয়েছে যারা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তীব্র ঘৃণা পুষে রাখে। তাদের ঘৃনা প্রশমনের নিমিত্তে যাকাত ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা করা যাবে। ঐতিহাসিক ভাবে এটি প্রমাণিত যে, এমন অসংখ্য অমুসলিম শুধু এই কারণেই ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাদের ঘৃণা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। আবার কিছু লোক এমন রয়েছে যারা অমুসলিম হলেও মুসলমানদের ভালোবাসে। হয়ত কিছুটা আর্থিক সহায়তা পেলে তারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করবে। এজন্য তাদেরকেও যাকাত গ্রহীতার লিষ্টে স্হান দেওয়া হয়েছে। হুযুর (দঃ) এর সময়কালে এমন অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যেখানে তিনি (দঃ) অনেক অমুসলিম গোষ্ঠী এবং পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন ইসলামের প্রতি তাদেরকে এট্রাক্ট করানোর জন্য। (তিরমিঝি, আল-জামে আল-সাহীহ্, ৩:৫৩, নং- ৬৬৬, মুসলিম, সাহীহ্, ৪:১৮০৬, নং- ২৩১২)
৫- দাস (রিকাব)
একথা সকলের জানা যে, প্রাক-ইসলামী যুগে পৃথিবী ব্যপি ব্যপক হারে দাস প্রথার প্রচলন ছিল। সমাজের অসহায়, গরীব ও দূর্বল শ্রেণীকে প্রভাবশালী গৌষ্টি ক্রীতদাসে পরিণত করত। তাছাড়া যুদ্ধ-বিগ্রহে পরাজিতদেরকে বিজীতরা ক্রীতদাস হিসেবে গ্রহণ করত। ইসলাম ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপায়ে নৈতিক এবং আইনানুগভাবে এই প্রথার বিলুপ্তি সাধন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলাম সম্পদশালী মুসলমানদের যাকাত ফান্ড থেকে অর্থ ব্যয় করে ক্রীতদাসদের মুক্ত করতে উৎসাহিত করেছে।
৬- ৠণগ্রস্হ (গারিমীন)
ৠণগ্রস্হ ব্যক্তি ৠণ থেকে মুক্তির জন্য যাকাত নিতে পারবে। হযরত আনাছ বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, হুযুর (দঃ) এরশাদ করেনঃ
"শুধুমাত্র তিন ধরনের ব্যক্তির জন্য ভিক্ষা করা বৈধ। একঃ নিঃস্ব এবং দারিদ্রের যাতাকলে পিস্ট নিরাবলম্ব ব্যক্তি। দুইঃ ৠনের ভারে নুয্য। তিনঃ রক্তের মুল্য দিতে হচ্ছে এমন ব্যক্তি।
(আহমদ বিন হাম্বল, মুছনাদ, ৩:১২৬, নং- ১২৩০০, আবু দাউদ, সুনান, ২:১২০, নং-১৬৪১)
৭- আল্লাহর রাস্তায় আছেন এমন ব্যক্তি (ফী ছাবিলিল্লাহ্)
পবিত্র কুরানের ভাষ্যমতে যেই আটজন ব্যক্তি যাকাতের অর্থ গ্রহণ করতে পারবে তম্মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় নিয়োজিত ব্যক্তি অন্যতম। তবে এর এরিয়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামি আইনবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষন করেছেন। অর্থাত্ 'আল্লাহর রাস্তায়' বলে ঠিক কাদেরকে বুঝানো হয়েছে এই নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। হানাফি মাজহাবের অন্যতম ইমাম, কাছানি আল হানাফি বলেনঃ
"'ফি ছাবিলিল্লাহ্' বা 'আল্লাহর রাস্তায়' কথাটি এমন প্রত্যেক ভালো কাজকে নির্দেশ করে যা দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এটা এমন প্রত্যেক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে যারা নেক আমল বা পুণ্যের কাজ এবং স্রষ্টার আনুগত্য বজায় রাখতে পরম কষ্ট স্বীকার করে।" (ইমাম কাছানি, বাদা'এয়ুছ ছানায়ে', ২:৪৫)
৮- পথিক (ইবনে ছাবীল) অর্থাত্ ভ্রমণে আছে এমন ব্যক্তিও তার প্রয়োজন স্বাপেক্ষে যাকাতের অর্থ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে। হতে পারে সেই ব্যক্তি তার দেশে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী। কিন্তু জার্নিতে সেই তার প্রয়োজন যাকাতের অর্থ থেকে মিটাতে পারবে। ইমাম কাছানি বলেনঃ এখানে 'ইবনে ছাবীল' বা পথিক বলে ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যেই ব্যক্তি সফরের কারণে তার ঘর এবং সহায়-সম্পত্তি থেকে দুরে অবস্থান করছে। যদিও সেই ব্যক্তি তার দেশে বা এলাকায় অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী হয়, কিন্তু সফরের কারণে সাময়িকভাবে সৃষ্ট সংকট যাকাতের অর্থ দিয়ে দুর করতে বাঁধা নেই। (ইমাম কাছানি, আল বাদায়ে' ২:৪৬)
5| প্রশ্নঃ যাকাত প্রদানকালে নিয়্যত করা কি আবশ্যক? যাকাত কি বছর সমাপ্তির পর এক সাথে আদায় করতে হবে, না বছর জুড়ে ছোট ছোট ইন্সলমেন্টের মাধ্যমেও প্রদান করা সম্ভব? কোন্ কোন্ ধরনের সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় এবং যাকাত হিসাব করার নিয়ম কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাতের নিয়্যত করা আবশ্যক। যাকাত ফরজ হয়েছে এমন ব্যক্তি ইচ্ছা করলে পুরো বছর মাসিক হারে ছোট ছোট ইনসটলমেন্টে যাকাত আদায় করতে পারে। তবে বছর শেষে হিসাব করে দেখতে হবে যাকাত সম্পূর্ণ আসায় হয়েছে কিনা। যদি কিছু অনাদায়ি থেকে যায় তবে তা পরবর্তীকালে পরিশোধ করে দিতে হবে।
চার ধরনের সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয়ঃ
• স্বর্ণ, রোপা এবং নগদ অর্থ
• পশুসম্পদ, যেমনঃ গরু, ছাগল এবং উঠ ইত্যাদি
• সকল প্রকার ব্যবসায়ীক পণ্য (ব্যবসার উদ্দেশ্য ক্রয়কৃত প্রোপার্টি বা ফ্লাটও এটার অন্তর্ভুক্ত)
• মাটি থেকে উৎপাদিত শস্য। যেমনঃ শাকসব্জী, ফলমুল, মিনারেলস্ ইত্যাদি।
যাকাত যেভাবে হিসাব করবেনঃ
• সম্পদ
- স্বর্ণ ও রোপার পরিমাণ এবং বাজার মুল্য
- নগদ অর্থ (হাতে, ব্যংকে, সেভিংস্)
- ব্যবসায়ীক এসেট (স্টক মুল্য)
এবার টোটাল এসেট নির্ধারণ করেন।
• লাইয়াবিলিটি
- ৠণ
- কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন
- ট্যাক্স, ভাড়া এবং ইউটিলিটিজ
এবার এটার টোটাল করেন। এটার টোটাল করার পর মূল সম্পদ থেকে এটা মাইনাস করে যা বাকি থাকবে সেই নেট এসেটের উপর ২.৫% যাকাত প্রদান করেন।
6| প্রশ্নঃ 'নেসাব' বলতে কি বুঝায়? কী পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের উপর যাকাত ফরজ হয়? স্বর্ণ-রৌপ্য ছাড়া অন্যান্য মুল্যবান পাথরের উপর যাকাত দিতে হবে? মহিলাদের ব্যবহার্য্য জুয়েলারীর উপর যাকাত আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ যেই সমস্ত সম্পদের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ তার একটা স্পেসিফিক এমাউন্ট বা 'নির্দিষ্ট পরিমাণ' শরিয়ত কতৃক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অতিক্রম করলে যাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। ঐ স্পেসিফিক এমাউন্ট বা পরিমাণকে 'নেসাব' বলে।
যেমনঃ আধুনিক পরিমাপ অনুযায়ী স্বর্ণের উপর যাকাত আবশ্যক হওয়ার জন্য নেসাব হচ্ছে- ৮৭.৪৮ গ্রাম। কারো নিকট এই পরিমাণের চেয়ে কম স্বর্ণ থাকলে যাকাত ফরজ হবেনা। হযরত আলী (রাঃ) কতৃক বর্ণিত যে, হুযুর (দঃ) এরশাদ করেন:
"বিশ দিরহামের চেয়ে কম পরিমাণ স্বর্ণে তোমাকে যাকাত দিতে হবেনা। যদি তোমার নিকট বিশ দিরহাম পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং এক বৎসর অতিবাহিত হয় তবে আধা দিনার যাকাত প্রদান করতে হবে। যদি পরিমাণ বেশি হয় তবে এই হিসাবে বাড়তি অংশ থেকে যাকাত প্রদান করবে। (আবু দাউদ, সুনান, ২:১০০, নং- ১৫৭৩)
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) ও হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, হুযুর (দঃ) ২০ দিনার পরিমান স্বর্ণের যাকাতে আধা দিনার নিতেন এবং ৪০ দিনারে ১ দিনার নিতেন। (ইবনে মাজাহ্, সুনান, ১:৫৭১, নং-১৭৯১)
অনুরুপভাবে, রোপার নেসাব হচ্ছে- ৬১২.৩৬ গ্রাম। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কতৃক বর্ণিত যে, হুযুর (দঃ) এরশাদ করেনঃ
"পাঁচ আওকিয়ার চেয়ে কম পরিমান রৌপার উপর যাকাত দিতে হবেনা। (পাঁচ আওকিয়া হচ্ছে ৬১২.৩৬ গ্রাম)"
(বোখারী শরীফ ১৩৯০ ও মুছলিম শরিফ ৯৮০)
মনে রাখতে হবে যে, ওজন হোক কিংবা মুল্য, যাকাত ২.৫% হারে প্রদান করতে হবে।
সোনা-রোপা ছাড়াও অনেক সময় অনেকের কাছে মুল্যবান পাথর থাকে এবং অনেক দামীও হয়। ঐ পাথর গুলো যদি ব্যক্তিগত ব্যবহারের হয় তবে যাকাত দিতে হবেনা আর যদি ব্যবসার জন্য হয় তবে শর্ত পূরণ স্বাপেক্ষে যাকাত দিতে হবে।
মহিলাদের ব্যবহার্য্য জুয়েলারীর উপর যাকাত দিতে হবেনা।
7| প্রশ্নঃ স্টক মার্কেটের শেয়ারের উপর যাকাত আদায়ের বিধান কি এবং যাকাত আদায়ের জন্য শেয়ারের মুল্য কিভাবে নির্ণয় করতে হবে?
উত্তরঃ বৈধ উপায়ে ব্যবসা করে এমন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ট্রেইড করা ইসলামী শরিয়তে অনুমোদিত। এটা ট্রেইডের একটা বৈধ ধরন। সুতরাং যাকাত ক্যলকুলেইট করার সময় অন্যান্য সম্পদের সাথে শেয়ারকেও যোগ করতে হবে যদি কারো শেয়ারের ব্যবসা থাকে। নেসাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। শেয়ার সাধারণত দুই পারপাজে কেনা হয়। উভয় ধরনের শেয়ারে যাকাত প্রদানের নিয়মও ভিন্ন ভিন্ন ধরনেরঃ
এক- প্রফিট এবং লসের ভিত্তিতে কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ঃ
যদি কেউ কোম্পানির মুনাফা লাভের আশায় শেয়ার ক্রয় করে তবে সেই ক্ষেত্রে এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর টোটাল শেয়ার থেকে বিল্ডিং এবং মেসিনারীর অংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট শেয়ার যা ব্যবসায়ীক সামগ্রি, পণ্যদ্রব্য এবং পুজির সাথে সংশ্লিষ্ট, তার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে।
দুই- যদি কেউ শেয়ারকে ট্রেইড গুডস্ বা পণ্যদ্রব্যের মত ক্রয় করে এবং মুল্য বৃদ্ধি হলেই বিক্রি করার পরিকল্পনা থাকে, তবে সেই ক্ষেত্রে শেয়ারের পূর্ণ মুল্যের উপর যাকার প্রদান করতে হবে।
উভয় ক্ষেত্রেই যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের ক্রয় মুল্য নই, বরং মার্কেট ভেল্যু বা বাজার মুল্য অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।
কোন মুসলিম ব্যবসায়ীর মালিকানায় যদি মুদ্রা, ব্যংক একাউন্ট, বোন্ড, ডেপোজিট, সোনা-রোপা, মুল্যবান পাথর বা পণ্যসামগ্রী থাকে, তবে যাকাত ক্যলকুলেইট করার জন্য ক্রয়মুল্য নই, বরং যাকাত প্রদানের সময়কার বাজারমুল্য অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।
8| প্রশ্নঃ যদি কারো কাছে ক্যশ টাকা থাকে এবং তা নেসাব পরিমাণ হয় তবে যাকাত আদায়ের বিধান কি?
উত্তরঃ কারো কাছে যদি নেসাব পরিমাণ নগদ অর্থ থাকে তবে যাকাত আদায় করতে হবে। ইসলামি আইনবিদগণ নগদ অর্থের উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিম্মোল্লিখত শর্তগুলো উল্লেখ করেছেনঃ
- নগদ অর্থের পরিমাণ স্বর্ণ বা রোপার মুল্য অনুসারে নেসাব পরিমাণ হওয়া
- মালিকানায় এক চন্দ্রবর্ষ অতিক্রান্ত হওয়া
- ৠণমুক্ত হওয়া
- নগদ অর্থের পরিমাণ ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের তুলনায় অধিক হওয়া। (মৌলিক প্রয়োজন বলতে যেমন: নিত্য দিনের খরচাপাতি, থাকা-খাওয়া, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি)
9| প্রশ্নঃ নিজের থাকার ঘর, ফ্ল্যাট বা জমির উপর যাকাতের বিধান কি? এগুলো যদি ব্যবসায়িক পারপাজে রাখা হয় তবে যাকাত কিভাবে আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ নিজের প্রয়োজনে ব্যবহৃত ঘর-বাড়ি, ফ্ল্যাট, যমি-যমা বা ঘাড়ির উপর যাকাত দিতে হয়না। কিন্তু যদি এগুলো ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা হয় বা ভাড়া দেওয়া হয় তবে বাৎসরিক প্রফিট থেকে খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকাটা যদি নেসাব পরিমাণ তবে যাকাত প্রদান করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ঘর-বাড়ি, ফ্ল্যাট, যমি-যমা বা ঘাড়ির ভেল্যু বা মুল্যের উপরও যাকাত আদায় করতে হবে। আর আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, এই ক্ষেত্রে কেনা মুল্য নই বরং যাকাত প্রদানকালীন বাজার মুল্য বিবেচনা করে যাকাত প্রদান করতে হবে।
10| প্রশ্নঃ 'ট্রেইড গুডস্' বা ব্যবসায়িক সামগ্রী বলতে কি বুঝায়? ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইকুইপমেন্টস্ বা মেশিনারীজের উপর কি যাকাত আদায় করতে হবে? যদি আদায় করতে হয় তবে ক্যলকুলেশনটা কিভাবে করতে হবে?
উত্তরঃ যখন কোন আইটেম প্রফিট করার জন্য রিসেইল বা পুন:বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় সেটাকে 'ট্রেইড গুডস্' বলা হয়। যেমনঃ শস্য, গৃহাস্হালি যন্ত্রপাতি, কাপড় বা বিভিন্ন ধরনের পশু ইত্যাদি। এগুলোর উপর পূর্বোল্লিখিত উপায়ে যাকাত প্রদান করতে হবে। অর্থাত্ এই পণ্যসামগ্রীর বাৎসরিক মুল্য স্টিমেইট করে সেটাকে ব্যক্তির অন্যান্য এসেটের সাথে যোগ করে যাকাত ক্যলকুলেইট করতে হবে।
তবে এই জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরন্জাম বা যন্ত্রপাতির উপর যাকাত দিতে হবেনা। শরীয়ত কতৃক ব্যবসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরন্জামাদী এবং যন্ত্রপাতিকে যাকাতের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ এগুলো আয়ের মাধ্যম।
12| প্রশ্নঃ কাউকে যাকাত দেওয়ার সময় এটা উল্লেখ করা জরুরী যে এটা যাকাতের টাকা?
উত্তরঃ যাকাত আদায়কালীন কোন ব্যক্তির কাছে এটা উল্লেখ করা আবশ্যক না। এমনকি যাকাতের অর্থ গরীবদের মাঝে অন্য শিরোনামেও দেওয়া যায়। যেমনঃ ঈদ গিফট্ ইত্যাদি
13| প্রশ্নঃ পার্টনারশিপ ব্যবসায় যাকাত কিভাবে আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ পার্টনারশিপ ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রত্যেক পার্টনার নীজ নীজ শেয়ারের যাকাত আদায় করবে। যেমনঃ কোন ব্যবসায় যদি দুজন পার্টনারের সমান শেয়ার থাকে, তবে এক চন্দ্রবছর অতিবাহিত হওয়ার পর প্রত্যেকেই যার যার শেয়ারের যাকাত প্রদান করবে। এভাবেই হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রাঃ) পার্টনারশিপ ব্যবসায় যাকাত আদায়ের রুল জারি করেছেন বলে বর্ণনা করেছেন হযরত আনাছ বিন মালিক (রাঃ)। (বোখারী শরীফ, সহীহ্, ২:৫২৬, নং-১৩৮৩)
14| প্রশ্নঃ ইনকাম ট্যক্স পরিশোধ করলে কি যাকাত আদায় হয়ে যাবে?
উত্তরঃ ইনকামট্যক্স পরিশোধ করলেও যাকাতের বাধ্যবাধকতায় কোন শীতিলতা বা হেরফের হবেনা। কারণ যাকাত শরীয়ত কতৃক নির্ধারিত একটি 'ফরজ এবাদত' যার জন্য 'নিয়্যত' অপরিহার্য। ইনকামট্যক্স বা অন্যকোন উপায়ে যাকাতকে ডিসরিগার্ড বা নিগেইট করার কোন সুযোগ নেই। কারণ ইনকামট্যক্স না ফরজ, না এবাদত, না এটার জন্য নিয়্যতের কোন অপরিহার্যতা রয়েছে। এটার আদায়যোগ্য 'এমাউন্ট' শরীয়ত কতৃক নির্ধারিত। ট্যক্স সেই ধরনের কোনকিছু না। যাকাতের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্র পবিত্র কোরানের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ট্যক্সের টাকা সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে ব্যয় করা হয়। যাকাতের রয়েছে আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক এবং সামস্টিক উৎকর্ষসাধনের এক মহামহিম উদ্দেশ্য যা ইনকামট্যক্সের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক।
15| প্রশ্নঃ মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্রদের কি যাকাত দেওয়া যায়?
উত্তরঃ মা-বাবা তাদের সন্তানদের যাকাত দিতে পারবেনা। কারণ কারো দায়িত্বে কেউ থাকলে তার ভরনপোষনের দায়িত্ব সেই ঝিম্মাদার ব্যক্তির উপর বর্তায়। অনুরূপভাবে, কোন ব্যক্তি তার ডিপেন্ডেন্টস, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী, দাদা-দাদী এবং নাতী-নাতনীদের যাকাত দিতে পারবেনা। এছাড়া অন্যান্য সম্পর্কের লোক এবং আত্মীয়স্বজনদের যাকাত দেওয়া যাবে। যেমন: ভাই-বোন, চাচা-চাচী, ফুফা-ফুফু, খালা-খালু, মামা-মামী এবং তাদের সন্তানরা, যদি গরীব হয়। অধিকন্তু, এই ধরনের আত্মীয়স্বজনদের যাকাতের অর্থ প্রদান করা অপেক্ষাকৃত উত্তম এবং অধিক সাওয়াবের।
(প্রিপেয়ার্ড বাইঃ মোহাম্মাদ ছাইফুল আজম বাবর আল-আজহারী
মূল আইডিয়াঃ শাইখুল ইসলাম ডঃ তাহিরুল কাদেরীর একাডেমিক ওয়ার্ক থেকে কমপাইলড্ কৃত গুরুত্বপূর্ণ কিতাব "যাকাত এন্ড চ্যরিটি" থেকে নেওয়া)
Comments
Post a Comment