মেহরাজের দ্বিতীয় পর্যায়- পর্ব- ৩-৪।
*বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম*
#মিরাজের_দ্বিতীয়_পর্যায়-আগের_আলোচনার_পর_থেকে_ (পর্ব-৩-৪)
#মিরাজের ২য় পর্যায় শুরু হয় বায়তুল মোকাদ্দাছ থেকে এবং শেষ হয় সিদরাতুল মোন্তাহাতে গিয়ে। ১ম আকাশে গিয়ে জিব্রাইল (আঃ) ডাক দিলেন উক্ত আকাশের ভারপ্রাপ্ত ফেরেস্তাকে এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। উক্ত ফেরেস্তা পরিচয় নিয়ে হুজুর (দঃ) এর পরিচয় খুলে দিলেন। প্রথমেই সাক্ষাত হল হযরত আদম (আঃ)-এর সাথে। হুজুর (দঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। কেননা ভ্রমন কারীকেই প্রথমে সালাম দিতে হয়। হযরত আদম (আঃ) নবীগণের আদি পিতা। তাই তাঁকে দিয়েই প্রথম অভ্যর্তনা শুরু হল। হযরত আদম (আঃ)-এর নেতৃত্বে অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং ১ম আকাশের ফেরেস্তারা অভ্যর্থনার যোগ দিলেন। এমনিভাবে ২য় আকাশে হযরত ইছা,হযরত যাকারিয়া ও হযরত ইয়াহ্ইয়া (আঃ) ও অন্যান্য নবী ও ফেরেস্তারা অভ্যার্থনা জানালেন। হযরত যাকারিয়াও উক্ত অভ্যার্থনায় শরীক হলেন। নবী করিম (দঃ) তাঁকে জিজ্ঞেসা করলেন "যখন আপনাকে করাত দ্বারী দ্বিখন্ডিত করা হচ্ছিল-তখন আপনার কেমন অনুভব হচ্ছিল? উত্তরে যাকারিয়া (আঃ) বললেন- তখন আল্লাহ তায়ালা ডাক দিয়ে বলেছিলেন "আমি তোমার সাথে আছি"। এতদশ্রবণে আমি মউতের কষ্ঠ ভুলে গিয়েছিলাম। প্রকৃত আশেকগনের মউতের সময় নবীজির দিদার নসিব হয়। তাই তাদের মউতের কষ্ঠ অনুভুত হয়না।(আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া:যাকারিয়া অধ্যায়)
৩য় আকাশে হযরত ইউনুস (আঃ)-এর নেতৃত্বে অন্যান্ন নবী ও ফেরেস্তাগণ নবী করিম (দঃ) কে অভ্যার্থনা জানান এবং সালাম-কালাম বিনিময় করেন। চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিছ (আঃ),৫ম আকাশে হযরত হারুন (আঃ) ফেরাস্তাগণ সহ অভ্যর্থনা জানান। ৬ষ্ঠ আকাশে হযরত মুছা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হয়।তিনি অভ্যর্থনা জানিয়ে বিদায়কালে আশ্চর্য হয়ে বলেন, "এই যুবক নবী শেষ কালে এসেও আমার আগে বেহেস্তে যাবেনে এবং তাঁর উম্মতগণ আমার উম্মের আগে বেহেস্তে প্রবেশ করবে।" হযরত মুছা (আঃ) নবী করিম (দঃ) ও তাঁর উম্মতের বিশেষ মর্যাদা দেখে আনন্দাশ্রু কান্না কেদেছিলেন। যেমান মা সন্তানের কোন সুসংবাদ শুনতে পেলে আনন্দে কেদে ফেলেন। তাঁর এই আপসোস ছিল আনন্দ সূচক ও স্বকৃতি মূলক। -বিদ্বেষমূলক নয়-এটাকে গিবতা বলে।গিবত বা ঈর্ষা করা শরীয়তে জায়েজ॥কিন্তু হাসদ বা হিংসা করা জায়েজ নয়।(মিশকাত)
#হযরত মুছা (আঃ) সে সময় নবী করিম (দঃ)-এর কাছে ১টি হাদিসের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। হাদিসটি হলো -নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেন-
"আমার উম্মতের জাহেরী-বাতেনী এলেম সম্পন্ন আলেমগন বনী ইসরাঈলের নবী গণের ন্যায়(এলেমের ক্ষেত্রে)। নবী করিম (দঃ)-উক্ত হাদিস যথার্থতা প্রমাণের জন্য রূহানী জগত থেকে ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) কে হযরত মুছা (আঃ)-এর সামনে হাজির করলেন।হযরত মুছা (আঃ) বললেন, আপনার নাম কি? উত্তরে ইমাম গাজ্জালী নিজের নাম-পিতার নাম-দাদার নাম পরদাদার নামসহ ছয় পুরুষের নাম বললন। হযরত মুছা (আঃ) বললেন, আমি শুধু আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি, আপনি এত দীর্ঘ তালিকা পশ করলেন কেন? ইমাম গাযালী (রঃ) আদবের সাথে জবাব দিলেন "আড়াই হাজার বছর পূর্বে আপনিওতো আল্লাহ্ তায়ালার ছোট্ট একটি প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘ করে দিয়েছিলেন। ইমাম গাযালি (রঃ) এলেম ও প্রজ্ঞা দেখে হযরত মূছা (আঃ) মুগ্ধ হয়ে গেলেন। এবং হুজুর (দঃ)-এর হাদিস খানাল তাত্পর্য স্বীকার করে নিলেন। (রুহুল বয়ান-৩য় পারা২৪৮পৃঃ)
[এখানে একটি বিষয় তাত্পর্যপূর্ণ-হযরত মুছা (আঃ)-এর ইন্তাকালের আড়াই হাজার বত্সর পরে মক্কার জমিনে প্রদত্ত হুজুর (দঃ)-এর ভাষণ তিনি শুনতে পেয়েছিলেন-আপন রওযা থেকে। অপর দিকে দুনিয়াতে আসার পূর্বে আলমে আরওয়াহ্ থেকে ইমাম গাযালী (রঃ)-এর মত একজন বিজ্ঞ অলি আড়াই হাজার বত্সর পূর্বে তূর পর্বতে ঘটে যাওয়া মুছা (আঃ)-এর ঘঠনা সম্পর্কেও অবগত ছিলেন। এতে প্রমাণিত হলো-আল্লাহর নবী ও অলিগণকে আল্লাহ্ তায়ালা বাতেনী প্রজ্ঞাদান করেছেন। যাকে নূরের নযর বা ফিরাছত বলা হয়। আল্লাহর অলিগন আল্লাহর প্রদত্ত কাশপ দ্বারা অনেক সময় মানুষের মনের গোপন কথাও বলে দিতে পারেন। ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কুফায় এক মসজিদে জনৈক মুছল্লিকে ওযু করতে দেখে বলেছিলেন-
"তুমি যিনা করে এসেছ- লোকটি অবাক হয়ে বল্ল -আপনি কিভাবে জানলেন? ইমাম আবু হানিফা (রঃ) বললেন,তোমার ওযুর পানির সাথে যিনার গুণাহ ঝড়ে পড়েছিল।"
হাদাসেও ওযুর পানির সাথে গুণাহ ঝরে পড়ার কথা উল্লেখ আছে। লোকটি ইমাম আজমের বাতেনী এলেম দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলো এবং সাথে সাথে ইমাম সাহেবের হাতে তাওবা করলো। বড়পীর হযরত গাউছুল আ'যম আবদুল কাদের জিলানীস(রাঃ) বাহজাতুল আসরার কিতাবে বলেনঃ
"দুনিয়ার নেককার ও বদকার-সকলকেই আমার দৃষ্টি পেশ করা হয় লওহে মাহ্ফুজে"। লওহে মাহফুজে নেককার-বদকার সকলেরই তালিকা রয়েছে। হযরত বড়পীর (রাঃ)-এর নযরও দুনিয়া থেকে লওহে মাহফুজ নিবদ্ধ । এজনই মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী (রঃ) মসনবী শরীফে বলেছেনঃ
"লওহে মাহ্ফুজ অলী-আল্লাহ্ গণের নযরের সামনে। একারণেইস তাঁদের দিব্যদৃষ্টি সমস্ত ক্রটি থেকে মুক্ত"।
*হযয়ত মুছা (আঃ) থেকে বিদায় নিয়ে নবী করিম (দঃ) জিব্রাইল (আঃ) সহ ৭ম আকাশে গেলেন। সেখানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ফেরেস্তাগন অভ্যর্থনা জানালেন। নবী করিম (দঃ) ইরশাদ করেন- "আমি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে ১টি কুরছিতে বসে বাইতুল মামুর মসজিদের গায়ে হেলান দিয়ে বসা অবস্হায় দেখতে পেয়েছি"(রুহুল বয়ান)।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) দুনিয়াতে আল্লাহর ঘর কা'বা শরীফ তৈরী করেছিলেন। তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সপ্তকাশে বাইতুল মামুর মসজিদে মোতাওয়াল্লীর সম্মান দান করেছেন।দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে-বায়তুল মামুরে হুজুর (দঃ)-এর সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন সাদা পোষাকধারী একদল উম্মত -যাদের মধ্যে গাউসুল আযমও ছিলেন।(আ'লা হযরতের ইরফানে শরীয়তের তৃতীয় খন্ড)।......পবিত্র মিরাজের পরবর্তী আলোচনা ৪র্থ পর্ব ইনাশাআল্লাহ্ কাল আবার করব। আমাদের সাথেই থাকুন।
(উপরের আলোচনার তথ্যসুত্রঃ-নূর নবী (দঃ)-লিখক:অধ্যক্ষ হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল জলিল (রহঃ) পৃঃ-৯৫-৯৮)
#বিসমিল্লাহির_রাহমানির_রাহিম
#পবিত্র_মিরাজ_শরীফের_আলোচনা-
(পর্ব-৪)।
মিরাজের দ্বিতীয় পর্যায়ের বাকি অংশ।
আগের আলোচনার পর থেকে-.....
#আসমানে ভ্রমণের সময়ই নবী করিম
(দঃ) বেহেস্ত ও দোজখ প্রত্যক্ষ
করেন। পরকালে বিভিন্ন পাপের কি রকম
শাস্তি হবে,তার কিছু
নমুনা তিনি মেছালী ছুরতে প্রত্যক্ষ
করেছেন।সুদ,ঘুষ,অত্যাচার,নামাজ
বর্জন,ইয়াতিমের মাল ভক্ষন,প্রতিবেশী
র উপর যুলম,স্বামীর অবাধ্যতা,বেপর্দ
া ও অন্য পুরুষকে নিজের রূপ
প্রদর্শন,যিনা,ব্যাভিচার ইত্যাদির
শাস্তি নবী করিম (দঃ)
স্বচক্ষে দেখেছেন।
বেহেস্তে হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর জন্য
সংরক্ষিত প্রাসাদ, হযরত ওমরের (রাঃ)
প্রাসাদ, হযরত বেলালের (রাঃ)পাদুকার
আওয়াজ-এসব দেখেছেন এবং শুনেছেন।
বেহেস্তের চারটি নহরের উত্সস্হল
নবী করিম (দঃ) কে দেখানো হয়েছে।
বিছমিল্লাহর চারটি শব্দের শেষ
চারটি হরফ থেকে (মিম/হা/নূন/মিম)
চারটি নহর প্রবাহিত
হয়ে হাউযে কাউছারে পতিত
হতে দেখেছেন। দুধ, পানি, শরবত,ও মধু -
এই চার প্রকারের পানীয়
বেহেস্তবাসীকে পান করানো হবে।
যারা ভক্তি ও ঈমানের সাথে প্রত্যেক
ভাল কাজ বিছমিল্লাহ বলে শুরু করবে,
তাদের জন্য এই নেয়ামত রাখা হয়েছে।
(তাফসীরে রুহুল বয়ানে বিছমিল্লাহর
ব্যাখ্যায় এর বিস্তারিত বিবরণ
দেয়া হয়েছে)।
#সপ্ত আকাশে ভ্রমণের পর জিব্রাইল
(আঃ) খাদেম হিসাবে নবী করিম (দঃ)
কে সিদরাতুল মোন্তাহা বা সীমান্তের
কুলবৃক্ষের নিকট নিয়ে যান।
হাদিসে এসেছে- "এ বৃক্ষ পাতা হাতির
কানের মত বড় এবং ফল ওহোদ পাহাড়ের
ন্যায় বড়। শহীদগণের রূহ মোবারক
সবুজ পাখীর ছুরতে উক্ত বৃক্ষের ফল
ভক্ষণ করেছেন।" নবী করিম (দঃ)
স্বচক্ষে তা দর্শন করেছেন।
সিদরা বৃক্ষ পৃথিবীর সপ্ত তবক নীচ
থেকে চৌদ্দ হাজার বছরের রাস্তার
উপরে অবস্হিত। সিদরাতুল
মোন্তাহা থেকে আরশের দূরত্ব ছত্রিশ
হাজার বছরের রাস্তা। সর্বমোট
পঞ্চাশ হাজার বছরের
দূরত্বে আরশে মোয়াল্লা।
(ইবনে আব্বাস)।
#আরশে মোয়াল্লা থেকেই আল্লাহ
তায়ালার যাবতীয় নির্দেশ ফিরিস্তাগণের
নিকট আসে। হযরত জিব্রাইল (আঃ)
সিদরাতুল মোন্তাহা থেকেই আল্লাহ
তায়ালার যাবতীয় নির্দেশ গ্রহন
করে থাকেন। এখানে এসেই জিব্রাইলের
গতি শেষ হয়ে যায়।।
#মিরাজের দ্বিতীয় পর্যায় এখানেই
সমাপ্ত।
(তথ্যসুত্রঃ নূর নবী (দঃ)-অধ্যক্ষ
হাফেজ আবদুল জলিল (রহঃ)-পৃঃ-৯৮)
মাইতোঁ বিমারে নবীহোঁ।
Comments
Post a Comment