মঙ্গল শোভাযাত্রার এনজিওগ্রাম।
★মঙ্গল শোভাযাত্রার এনজিওগ্রাম।
কৃত: আল্লামা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক
উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রাসা
নিচের ছবিটা দেখুন। চিনতে পারছেন এটা কি? এটা মঙ্গল শোভাযাত্রার কোন এক বছরের ছবি। ১৯৭৯ সালে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিবছরের মঙ্গলময় (!) ছবিগুলোর অবস্থা প্রায় একই রকম। প্রতিমা, পশু-পাখি, জন্তুজানোয়ার ইত্যাদি। আর এটার নাম দেয়া হয়েছে সার্বজনীন উৎসবের। এ সার্বজনীন উৎসবগুলো গ্রহণ করে নেয়ার সাহস থাকলে আপনার নামের সাথে 'মুক্তমনা' লকব লাগাবার ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন আপনি। এহেন উৎসবের বিরোধিতা করা 'কূপমণ্ডূকতা', সাম্প্রদায়িকতা, যা মুক্তমনাদের অভিধানে সার্বজনীনতার বিপরীত চেতনা। সার্বজনীন চেতনার অন্যতম প্রতীক হিসেবে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
প্রদত্ত ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখলেই বুঝা যাবে এই চেতনার বাড়ী কোথায়? সীমানার ওপার থেকে ভিনধর্মের 'কালচার' এনে 'সার্বজনীন' লগো মাখিয়ে বাজারজাত করতে পারাটাই প্রগতির চেতনা! পশ্চিমাদের চশমা এরকম 'সাহসী'দেরকে হন্যে হয়ে খোঁজে। সাহসী এ সন্তানদের জন্য মুক্তমনা, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ইত্যাদি নামীদামী ভারি ভারি লকব নিয়ে বসে আছে। প্রগতির সাহসী এই সফরে যে কোন সমস্যায় ওদের জন্য উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসের টিকেট বের করতে একটা 'ক্লিক' করতে হবে মাত্র।
ওকে! ৪০ বছর বয়সের পরিণত এই শোভাযাত্রায় আসুন না এবার একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করি। মহান (!) এ শোভাযাত্রা নিয়ে আরো একটু সাহসী হই। একটু বেশি করে মুক্তমনা হই। মুখোশগুলোতে এবছর বাইতুল মোকাররম মসজিদের ছবিটা দেই, ষাট গম্বুজ মসজিদের চিত্র আঁকি, গরীব নাওয়াজের মাজারের ছবিটা দেই।
পারবেন তো! মুক্তমনগুলো এটাকে গ্রহণ করবে তো? আপনার সাম্প্রদায়িক চেতনা মুখ থুবড়ে পড়বে না তো? প্রগতির হলুদ যাত্রায় যতি নামবে না তো? পরপর পাঁচবছর মসজিদ-মাজারের ছবি দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করলে ইউনেস্কো সিদ্ধান্ত বদলাবে না তো? আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধির ঘরে আগুন লাগবে না তো?
আমি হলফ করে বলতে পারি এটা পারবে না ওরা। কারণ ওরা এতটা সাহসী হতে পারে নি। মনটাকে ওরা এতটা মুক্ত ও দরাজ করতে পারে নি। ওদের প্রগতির মাঝে এখনো অতটা গতি সঞ্চারিত হয় নি। ওদের মুক্ত 'মানস' আসলেই 'ফানুস' রয়ে গেছে। ওদের 'অসাম্প্রদায়িক চেতনা'র শ্লোগান মূলত: ভিনধর্মের সংস্কৃতি চর্চার উর্বর জমি। 'কূপমণ্ডুকতা-বিরোধী' এই পদযাত্রা অপসংস্কৃতির গভীর কুপের ভয়ঙ্কর রাস্তার দিকে 'আঁধারের শবযাত্রা'।
আমি জানি, যে হাতের শৈল্পিক বুননে উপরের ছবি নির্মিত হয়েছে, মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহারের জন্য ঐ হাতে মসজিদের ছবি সম্বলিত কোন মুখোশ তৈরি হবে না। কারণ ঐ হাতও অতটা অসাম্প্রদায়িক হতে পারেনি। অতটা মুক্তমনা বনতে পারে নি। নিজেকে অতটা সার্বজনীন করতে পারে নি।
বাংলাদেশ তো মুসলিম প্রধান দেশ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হিন্দু প্রধান দেশ। ঐ দেশের জনগণ যদি গরীব নাওয়াজের মাজারের ছবি দিয়ে প্ল্যাকার্ড তৈরি করে বছরে একটা উৎসব শুরু করে এবং চল্লিশ বছরের মাথায় সেখানে মক্কা শরীফ ও মদিনা শরীফের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডসহ ইসলামী স্থাপত্যের ছবিগুলো যুক্ত হয়, তাহলে ভারত কি এটাকে 'সার্বজনীন উৎসব' বলবে। শুধু ভারত বললাম বুঝার জন্য। এরকম উৎসবকে আমেরিকাসহ পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণের কোন রাষ্ট্রই দেবে না। তখন ওটা হয়ে যাবে সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা ইত্যাদি। তাই মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে যা হচ্ছে, এটা কোন অবস্থাতেই সার্বজনীনতা নয়। এটা অনেকাংশে অন্য ধর্মের সংস্কৃতি চর্চার একটা 'ভদ্ররূপ'। এ চর্চা মুসলমান তরুণ-তরুণীদের হতে পারে না। এটার জন্য ভিনধর্মের মানুষ আছে। তারা তাদের ধর্ম চর্চা করবে, তাদের সংস্কৃতির চর্চা করবে। কারণ আপন-আপন ধর্মচর্চায় সকলেই স্বাধীন। অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালমন্দ করতে কোরআন আমাদের নিষেধ করেছে। এটা আমাদের ধর্মের উদারতা।
Comments
Post a Comment