শবে বরাতের আমল ও ফযিলত।

জুমার খুতবা:
*************
১ম জুমা, মাহে শা’বান ১৪৪০হি. ১২ এপ্রিল, ২০১৯ সাল
ফযিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস- মাহে শা’বান:
=====================
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক,ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে তাঁর বান্দাদের জন্যে বছরের কোন কোন মাসকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করেছেন। আল্লাহ তাআলার কাছে বারটি মাসের মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত ও মর্যাদাশীল। সেই মর্যাদাশীল মাসসমূহে বান্দা নেক আমল করলে তার মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহ তাআলার নিকট আরও বৃদ্ধি পায়। আর হিজরী বর্ষের বার মাসের মধ্যে বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস হলো- ৮ম মাস মাহে শা’বান। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল বরাতের মতো একটি অত্যন্ত বরকতময় রজনী। এ মাসে বান্দার সারা বৎসরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বৎসরের জন্য বান্দার হায়াত, মউত, রিয্ক, দৌলত ইত্যাদির নতুন বাজেট দেয়া হয়।
অন্যদিকে মাহে শা’বান, রমযানের পূর্বের মাস হওয়ার কারণে মূলত এটি মাহে রমযানের সাধনা ও অধ্যবসায়ের পূর্ব প্রস্তুতির মাস। তাই তো প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসকে স্বীয় মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরশাদ করেন:
شعبان شهري وَفَضْلُ شَهْر شَعْبَانَ كَفَضْلِي عَلَى سَائِرِ الأَنْبِيَاءِ
( المقاصد الحسنة فيما اشتهر على الألسنة. رقم الحديث: , رقم الحديث: 706 571, والشيخ الصفوري في كتاب نزهة المجالس)
“শা’বান আমারই মাস, এ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব অপরাপর মাসগুলির উপর তেমন, যেমন আমার শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত মাখলুকের উপর।” [আল মাক্বাসিদ আল হাসানা, হাদীস নং-৫৭১] শা’বান মাসের ফযিলত সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:
رَجَب شَهْرُ اللَّهِ،‏ وَ شَعْبَان شَهْرِي، وَ رَمَضَان شَهْرُ أُمَّتِي
( المقاصد الحسنة فيما اشتهر على الألسنة: رقم الحديث: 706, 571, والشيخ الصفوري في كتاب نزهة المجالس,الحافظ في تبين العجب رواه أبو بكر النقاش المفسر ) ‘রজব আল্লাহর মাস, শা’বান আমার মাস এবং রমযান আমার উম্মতের মাস।’ [আল মাক্বাসিদ আল হাসানা, হাদীস নং-৭০৬ ] শা’বান মাসকে রমযান মাসের প্রস্তুতি ও সোপান হিসেবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে একটি বিশেষ দোয়া করতেন এবং অন্যদের তা শিক্ষা দিতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শা’বান মাসের মর্যাদা এতই বেশি যে, যখন তিনি এ মাসে উপনীত হতেন, তখন মাহে রমযানকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে অধিক হারে এই বলে প্রার্থনা করতেন, যেমন হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ, عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ، قَالَ: "اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ ".
(والحديث رواه مسند الإمام أحمد 1/259, والطبراني في الأوسط، رواه ابن السني في عمل اليوم والليلة (659) من طريق ابن منيع والبيهقي في شعب الإيمان (3/375) من طريق ابي عبد الله الحافظ، والبيهقي في فضائل الأوقات، عن أنس-رضي الله عنه- )  وأبو نعيم في الحلية (6/269). والبزار في مسنده ( مختصر زوائد البزار للحافظ 1/285، 402) من طريق أحمد بن مالك القُشيري عن زائدة به. )
হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসের শুরু থেকেই এই দোয়া পাঠ করতেন:  “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।” ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শা’বান মাসে বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ,২৩৪৬, বায়হাকি-৩৫৩৪, জামে সগির: ৫/১৩১ ও তবারানি-৩৯৩৯, ৬/২৬৯)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়ার মাধ্যমে সবার কাছে শা’বান মাসের ফযিলত প্রতীয়মান হয়। তাই মাহে রমযানের পূর্বে আমাদের প্রথম কাজ হলো রমযানকে পাওয়ার জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে বারবার দোয়া করা, যেন আল্লাহ হায়াত দীর্ঘ করে আমাদেরকে মাহে রমযানে পৌঁছে দেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,
قال رسولُ الله صلى الله عليه وسلم: ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ
( سنن النسائي: كتاب الصيام,  صوم النبي صلى الله عليه وسلم بأبي هو وأمي وذكر اختلاف الناقلين للخبر في ذلك. رقم الحديث: 2357 وراجع: شرح السيوطي لسنن النسائي: جلال الدين عبد الرحمن بن أبي بكر السيوطي.ط: دار البشائر الإسلاميةسنة النشر: 1406هـ / 1986م  # و مسند أحمد: مسند الأنصار رضي الله عنهم. حديث أسامة بن زيد حب رسول الله صلى الله عليه وسلم. رقم الحديث: 21246واللفظ لأحمد)
“মাহে রজব ও রমাদান শরিফের মাঝে এমন এক মাস রয়েছে, যার মর্যাদা সম্পর্কে মানুষের জানা নেই।” [নাসায়ী, হা-২৩৫৭, আহমদ, হা-২১২৪৬] এ মাসের ফযিলতকে মানুষ উপেক্ষা করে, মাসটি রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার ফলে এর মাধ্যমে মূলত বুঝানো হচ্ছে, শা’বান মাসকে যেহেতু দুটি সম্মানিত মাস বেষ্টন করেছে, সে জন্য মানুষ ওই দুই মাসের আমলে ব্যস্ত হয়ে শা’বান মাসকে অবহেলা করে।

এ মাসে আল্লাহর অপরিমেয় রহমত ও করুণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, যাতে বান্দাগণ স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে। বিশেষত: এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ‘শবে বরাত’ হিসেবে পরিচিত। হযরত আবু উমামা বাহিলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, যখন শা’বান মাস উপস্থিত হতো তখন হুযুর পাক সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, “এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তরকে পাক-পবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নাও।” [তবারানি-৫০৪] হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা’বান মাসের চাঁদের কথা অধিক যতেœর সঙ্গে স্মরণ রাখতেন, যা অন্য মাসের বেলায় হতো না।’ [মুসনাদে আহমাদ২/১০১]।

এ মাসকে কেন শা’বান মাস নামে নামকরণ করা হয়েছে: এ মাসকে শা’বান বলা হয়েছে এ জন্যই যে, এতে অফুরন্ত কল্যাণের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। “লিসানুল আরব” নামক কিতাবে বলা হয়েছে- শা’বানকে এ নামে অভিহিত করার কারণ হলো- কেননা আরবরা এ মাসে কল্যাণের সন্ধানে ছড়িয়ে পড়তো। ছা’লব বলেন- কারো কারো মতে শা’বানকে শা’বান নামকরণ করা হয়েছে- কেননা এ মাসটি দু’টি বরকতময় মাস তথা রজব ও রমযান মাসের মধ্যবর্তী একটি শাখা।(ইবন মনযুর: লিসানুল আরব, ১/৫০১)

শা’বান মাসের রোযার ফযিলত: মাহে রমযানের প্রস্তুতিকল্পে ইসলামে শা’বান মাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাহে রমযানে দীর্ঘ ৩০টি রোযাপালনের কঠিন কর্মসাধনা সহজ ও নির্বিঘেœ আদায় করার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শা’বান মাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
عن عَائِشَةَ تَقُولُ كَانَ أَحَبَّ الشُّهُورِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَصُومَهُ شَعْبَانُ ثُمَّ يَصِلُهُ بِرَمَضَانَ " 
( أخرجه أحمد في المسند وسنن أبي داود » كتاب الصوم » باب في صوم شعبان, 2431)
হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় মাসের একটি হলো শা’বান। এ মাসে নফল রোযা আদায় করেই তিনি মাহে রমযানের রোযা পালন করতেন।’ [আবু দাউদ-২৪৩১]।
এ সম্পর্কে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَيُّ الصَّوْمِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : " صَوْمُ شَعْبَانَ تَعْظِيمًا لِرَمَضَانَ "
( الحديث رواه  الترمذي (663) وقال: هذا حديث غريب، وصدقة بن موسى -يعني الدقيقي. والبيهقي في الشعب، عن أنس-رضي الله عنه-، وقال الترمذي: غريب، وضعفه السيوطي لطائف المعارف: صـ188 المصنف » كتاب الصيام » ما قالوا في صيام شعبان ص9856: 514-)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আরয করা হলো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছে মাহে রমযানের পর কোন্ মাসের রোযা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমযান মাসের সম্মান প্রদর্শনকল্পে শাবানের রোযা উত্তম।’ [তিরমিযি- হা-৬৬৩]।
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ، وَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ قَطُّ إِلا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ فِي شَهْرٍ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ
( صحيح البخاري: كتاب الصوم،  باب صوم شعبان. رقم الحديث: 1868# صحيح مسلم: كتاب الصيام، باب صيام النبي صلى الله عليه وسلم في غير رمضان واستحباب أن لا يخلي شهرا عن صوم. رقم الحديث: 1156. واللفظ للبخاري. # وراجع: فتح الباري شرح صحيح البخاري: أحمد بن علي بن حجر العسقلاني. ط: دارالريان للتراث. سنة النشر: 1407هـ / 1986م)

হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেন, শাবানের তুলনায় অন্য কোন মাসে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এত অধিক হারে রোযা পালন করতে দেখিনি। তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই রোযায় অতিবাহিত করতেন। কিছু অংশ ব্যতীত তিনি পুরো শা’বান মাস রোযা রাখতেন। [মুসলিম : ১১৫৬]।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, “শা’বান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত অধিক হারে নফল রোযা আদায় করতেন না।” [বুখারি- হা-১৮৬৮]

বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ، وَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ قَطُّ إِلا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ فِي شَهْرٍ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ
( صحيح البخاري: كتاب الصوم،  باب صوم شعبان. رقم الحديث: 1868# صحيح مسلم: كتاب الصيام، باب صيام النبي صلى الله عليه وسلم في غير رمضان واستحباب أن لا يخلي شهرا عن صوم. رقم الحديث: 1156. واللفظ للبخاري. # وراجع: فتح الباري شرح صحيح البخاري: أحمد بن علي بن حجر العسقلاني. ط: دارالريان للتراث. سنة النشر: 1407هـ / 1986م)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিকভাবে এতোবেশী নফল রোযা রাখতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোযা ছাড়বেন না, আবার কখনও এতো বেশী রোযা থেকে বিরত থাকতেন যে, আমরা বলতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোযা (নফল) রাখবেন না। তাই আমরা তাঁকে রমযান মাস ছাড়া আর অন্য কোন মাসে পূর্ণ মাস রোযা রাখতে দেখিনি এবং সবচেয়ে যে মাসে সর্বাধিক নফল রোযা রাখতেন তা হলো শা’বান মাসে। [বুখারী-১৮৬৮ ও মুসলিম-১১৫৬]

নাসায়ী ও মুসনদ-এ আহমদ শরীফে বর্ণিত আছে:
عن أسامة بن زيد، قَال: قُلتُ: يا رسول الله، لمْ أرَكَ تصوم شهْرًا من الشهور ما تصوم مِنْ شعْبان، قال: ذلك شهْرٌ يغْفُل الناس عنْه بيْن رجب ورمضان، وهو شهْرٌ تُرْفَع فيه الأعْمال إلى ربِّ العالمين، فأحبّ أنْ يرْفعَ عملي وأنا صائمٌ.
( سنن النسائي: كتاب الصيام,  صوم النبي صلى الله عليه وسلم بأبي هو وأمي وذكر اختلاف الناقلين للخبر في ذلك. رقم الحديث: 2357 وراجع: شرح السيوطي لسنن النسائي: جلال الدين عبد الرحمن بن أبي بكر السيوطي.ط: دار البشائر الإسلاميةسنة النشر: 1406هـ / 1986م  # و مسند أحمد: مسند الأنصار رضي الله عنهم. حديث أسامة بن زيد حب رسول الله صلى الله عليه وسلم. رقم الحديث: 21246واللفظ لأحمد)
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের দরবারে আরয করলাম, এয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম! শা’বান মাসের ন্যায় অন্য কোন মাসে আপনাকে এতোবেশী (নফল) রোযা রাখতে কখনও দেখি না কেন? উত্তরে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “শা’বান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস যার সম্পর্কে অনেক মানুষ অনবগত-উদাসীন, যেটি রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস, এটি ওই মহান মাস যে মাসে বান্দার আমলনামা রব্বুল আলামীনের দরবারে সরাসরি পেশ করা হয়। তাই আমি চাই আল্লাহর দরবারে আমার আমলসমূহকে এ অবস্থায় উঠানো হোক যে, আমি রোযাদার। (নাসায়ী-২৩৫৭)
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: وَكَانَ أَكْثَرُ صِيَامِهِ فِي شَعْبَانَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا لِي أَرَى أَكْثَرَ صِيَامِكَ فِي شَعْبَانَ ؟ ! فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ، إِنَّهُ شَهْرٌ يُنْسَخُ لَمَلَكِ الْمَوْتِ مَنْ يُقْبَضُ، فَأُحِبُّ أَنْ لا يُنْسَخَ اسْمِي إِلا وَأَنَا صَائِمٌ 
( طائف المعارف: ابن رجب الحنبلي جلد: 1  صفحه: 133)

হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবীর অধিকাংশ রোযা ছিল শা’বান মাসে। তখন আমি তাঁর দরবারে আরয করলাম, এয়া রাসূলাল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম আমি দেখছি আপনার অধিকাংশ রোযা রাখা হয় শা’বান মাসে, তার কারন কি? হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ মাসে যাদের ইন্তিকাল হবে তাদের নামের তালিকা ‘মালাকুল মাওত’ এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাই আমি চাইনা আমার নাম লিপিবদ্ধ হোক আমি রোযাদার থাকা ব্যতিরেকে (অর্থাৎ আমার রোযা অবস্থায়ই আমার নাম লিপিবদ্ধ হোক সেটাই আমি কামনা করি)। (ইমাম ইবন রাজব হাম্বলী: লাত্বায়েফুল মা’য়ারেফ,১/১৩৩)

শা’বান মাসের রোযার উপকারীতা: ফরয রোযার তুলনায় এ সব রোযার স্থান ফরয নামাযের আগে-পরে সুন্নাতের অনুরূপ। এ সুন্নাতগুলো যেমনিভাবে ফরয নামাজগুলোর অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণতা দান করে, ঠিক তেমনিভাবে রমযানের আগে-পরে নফল রোযারগুলোও রমযানের রোযারগুলোর নানা অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করে। নামাযের আগে-পরে সুন্নাত যেমন অন্যান্য সাধারণ নফল হতে শ্রেষ্ঠ তেমনিভাবে রমযান মাসের আগে-পরের রোযা অন্য সময়ের নফল রোযা হতে শ্রেষ্ঠ। তাই ফরয নামাযের পূর্বের ও পরের সুন্নতের অনুরূপ শা’বান মাসের কয়েকটি রোযা এবং শাওয়াল মাসের ছয় রোযা পালন করা সুন্নত।

এমনিভাবে শা’বানে রোযা রাখা দ্বারা অন্য উপকারও আছে। তা হল শাবানে রোযা পালনের মাধ্যমে রমযান মাসের রোযা পালনের অনুশীলন হয়। এতে রমযান মাসে রোযা পালনে কষ্ট অনুভব হয় না। বরং এর মাধ্যমে রোযা রাখার অনুশীলন ও অভ্যাস সৃষ্টি হয়। ফলে রমযান মাসে রোযা পালনে উৎসাহ ও আনন্দ বৃদ্ধি পায়।

শা’বান মাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার বিশেষ কারণ হলো, এ মাসে শবে বরাত নামে বিশেষ একটি রজনী আছে, যে রজনীতে বান্দার সারা বছরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বছরের জন্য বান্দার হায়াত, মউত, রিয্ক, দৌলত ইত্যাদির নতুন বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ মাসে মুসলমানদের আমল-আখলাক যেন সুন্দর হয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। শা’বান মাসে ভারসাম্যপূর্ণ নেক আমলের তাগিদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَلَيْكُمْ مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَوَاللَّهِ لَا يَمَلُّ اللَّهُ حَتَّى تَمَلُّوا وَكَانَ أَحَبَّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ .
“তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করবে, কেননা আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা-ই যা সর্বদা পালন করা হয়।”[বুখারি-৬১০০]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শানুযায়ী সম্পাদিত আমলই সর্বোত্তম আমল। তাই মুসলমানদের উচিত মাহে রমযানের পূর্বে কিছু রোযা রাখার অভ্যাস করা, যাতে করে মাহে রমযানের রোযা পালন সহজ হয় এবং লক্ষ্যও ঠিকমতো অর্জিত হয়। পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ দয়া ও ক্ষমার দৃষ্টি লাভের আশায় শা’বান মাসব্যাপী রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করা, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি করা। বিশেষত: এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তথা শবে বরাতে তওবা-ইস্তেগফার করে অতীতের সব গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুমহান আদর্শ অনুসরণে নিজেদের জীবন পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণ করা উচিত।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।