আল্লাহর দিদার সম্ভব কিনা?

"বিসমিললাহির রাহমানির রাহিম" পবিত্র মিরাজ শরীফের আলোচনা-পর্ব-৯ ।
#আল্লাহর_দীদার_সম্ভব_কিনা.?

হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। আল্লাহর দীদার ব দর্শন সম্ভব কিনা এবং সম্ভব হলে কিভাবে সম্ভব এবং কোথায় সম্ভব? এ প্রশ্নটি মি'রাজের সাথে সম্পৃক্ত বলে এ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।
#প্রথমতঃ নীতিগতভাবে আল্লাহর দর্শন লাভ করা সম্ভব। নবী করিম (দঃ) মি'রাজ গমন করে জাগ্রত অবস্হায় সচক্ষে আল্লাহর দীদার লাভ করেছিলেন। মাথার চক্ষু মোবারক দিয়ে এবং হৃদয় দিয়েও তিনি আল্লাহকে দেখিছিলেন। নবী করিম (দঃ)-এর চোখ এবং কলব উভয়ের দর্শনই সমান গুরুত্ববহ। আল্লাহপাক এরশাদ করেন- "তিনি চোখে যা দেখেছেন-হৃদয় তা অস্বীকার করেনি"।

হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহর নূরের তাজাল্লী এই চোখে সহ্য করতে পারেননি বলেই বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন। বুঝা গেল -সহ্য করতে পারলে তিনি দেখতেন।
দুনিয়ার চোখে আল্লাহ্কে দেখার আরয করার কারণে আল্লাহ তায়ালা বলেছিলেন- "এই চোখে কখনও দেখতে পাবে না।

কিন্তু নবী করিম (দঃ) কে সচক্ষে দর্শন দিয়েছেন মি'রাজে। একবার নয় দশবার।
আর ৩৩বার দর্শন দিয়েছেন দুনিয়াতে স্বপ্নে।(বোখারীর হাশিয়া-আহম্মদ আলী সাহারানপুরী-নামাজ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
মহিউদ্দিন ইবনে আরবী (রাঃ) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন যে, নবী করিম (দঃ) -এর মি'রাজ হয়েছিল ৩৪বার।
১বার জাগ্রত অবস্হায় সশরীরে ও সচক্ষে এবং ৩৩বার হয়েছিল স্বপ্নযোগে এবং রুহানীভাবে। সে সময় তিনি মদিনায় বিবি আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে অবস্হান করছিলেন। ঐ স্বপ্নের মি'রাজের ব্যাপারেই হযরত আয়েশা সিদ্দিকা
(রাঃ) বলেছেন যে, "আমি মি'রাজের রাত্রে নবী করিম (দঃ)-এর দেহ মোবারক আমার বিছানা হতে হারিয়ে ফেলিনি- বরং তিনি আমার বিছানায় শুয়েই মি'রাজ করেছেন" অর্থাত্‍ স্বপ্নে  আল্লাহকে দেখেছেন। বাতিল পন্হীরা এই হাদীসকে মক্কার
মি'রাজের সাথে একত্রিত করে বলেছে হুজুরের স্বশরীরে মি'রাজ হয়নি। হাদিসের প্রেক্ষাপট জানা না থাকলে এরকমই হয়ে থাকে ।

আল্লাহ তায়ালা মদিনায় ৩৩বার রূহানী সাক্ষাত্‍ দিয়েছেন নবীজীর সাথে। সশরীরের মি'রাজ হয়েছিল মক্কা শরীফ থেকে, যে সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) স্বামীগৃহে গমনই করেননি।
হযরত আয়েশা (রাঃ) কতৃক হুজুর (দঃ)-এর সশরীরে মি'রাজ গমনের অস্বীকৃতিসূচক বর্ণনা বা হাদীসখানা মদিনায় সংঘটিত রূহানী মি'রাজের সাথে সম্পর্কিত।
মক্কা হতে মি'রাজে গমনের সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই।
এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সলফে সালেহীন ও অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের মত।

আউলিয়ায়ে কেরামগন স্বপ্নে বা মোশাহাদার মাধ্যমে আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন বলে আকায়েদের কিতাবে উল্লেখ আছে।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এবং ক্বেরাতের সপ্ত ইমামের অন্যতম ইমাম হযরত ক্বারী হামযা (রহঃ) প্রমুখ অলীগণের আল্লাহ দর্শন এই শ্রেণীভুক্ত।
আর পরকালে সকল মোমেনই আল্লাহকে চাক্ষুস দেখ পাবে বলে ২৩জন সাহাবি কতৃক বর্ণিত মোতাওয়াতের হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায় (নিবরাছ)

কিছু কিছু জ্ঞান পাপি আলেম -যারা নিজে বড় আলম বা শাইখুল হাদিস বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে -তারা নবী করিম (দঃ)-এর স্বপ্নে আল্লাহর দীদার লাভ করাকে অবাস্তব বলে এক ফতোয়ায় উল্লেখ
করেছে। "তারা এও দাবি করেছে যে,কোন সাহাবী -এমনকি নবী করিম (দঃ)ও স্বপ্নে আল্লাহর দীদার লাভ করার দাবী করেননি। বাস্তবে বা স্বপ্নে আল্লাহর দীদারের ঘটনা নাকি গাজাখুরি কথা। হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) রচিত সিররুল আসরার কিতাবে বর্ণিত এ সম্পর্কিত হাদীসকে এই পাপীরা সনদবিহীন হাদীস বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল"।

অধম লেখক জলিল ১৯৯৩সনে ২৭পৃষ্ঠা ব্যাপী এক ফতোয়ায় তাদের দাবিকে ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন ব প্রমান করেছি- তাদেরই দেওবন্দ মাদ্রাসার  কিতাব তালিকুছ ছবিহ্ ও ফয়যুল বারী শরহে বুখারি দিয়ে এবং হাটহাজারী থেকে প্রকাশিত তাদের কিতাব #তানজিমুল_আশতাত_ফি_হাল্লিল_মিশকাত থেকে সনদসহ হাদিস পেশ করে। এছাড়াও মোল্লা আলী ক্বারির মিরকাত গ্রন্হের মধ্যেও উক্ত হাদীসখানা সনদসহ লিপিবদ্ধ আছে।
নবী করিম (দঃ) উক্ত হাদাসে এরশাদ করেছেন, "আমি আমার প্রভু আল্লাহ তায়ালাকে গোফবিহীন যুবকের ন্যায়(নিখুত) দেখেছি"। এই হাদীহখানা মোতাশাবিহি বা দুর্বোধ্য-যার প্রকৃত অবস্হা রহস্যবৃত।
কেননা,হানাফী মাযহাব মতে আল্লাহর কোন আকৃতি নেই।
তাই বলে এই হাদীস সনদ বিহীন নয়।আমার উক্ত ফতোয়ায় সনদ উল্লেখ করেছি।
মোদ্দাকথা হলো- আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন অবস্হায় নিজেকে প্রকাশ করে থাকেন।
হাশরের ময়দানে মুমিনগন দেখবে রূহানী অবস্হায়।
আর কাফের দেখবে গযবী ও কাহহারি অবস্হায়।
নবী করিম (দঃ) ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টি আল্লাহকে প্রত্যস্তভাবে সচক্ষে দেখেনি।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল হযরত ইবনে আব্বাছ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে জোর দিয়ে বলেছেন যে, "নবী করিম (দঃ) আল্লাহ তায়ালাকে সচক্ষে দেখেছেন"|
এভাবে বার বার বলতে বলতে তার (ইবনে হাম্বল) নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এসছিল।

তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে, হিজরতের সাত মাস পূর্বে মি'রাজ সংঘটিত হয়েছিল।
নবী করিম (দঃ) কে আল্লাহ তায়ালা যে-সব এলেম দান করেছেন, তা উর্দ্ধজগতের যাবতীয় গায়েবী বিষয়ের এলেমের সমষ্টি বা এলমে মুহিত।

"হুজুর (দঃ)এর এলেম উর্দ্ধজগতের যাবতীয় গায়েবি বিষয়ের বেষ্ঠনকারী"।
সুতরাং নবী করিম (দঃ) এর "ইলমে গায়েব মুহীত" অস্বীকারকারীদের দাবী মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।ওহাবী সম্প্রদায় এলমে গায়েব মূহীত অস্বীকার করে।
ইমামে রাব্বানী (রহঃ) বলেছেনঃ "আল্লাহ তায়ারা তাঁর খাছ ইলমে গায়ব বিশেষ বিশেষ নবিগনকে দান করেছেন। (মকতুব নং ৩১০প্রথম খন্ড)।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।