গিরি গুহায় চিল্লাকাশি।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

#নূর_নবী_পর্ব_৭

#প্রসঙ্গ_আত্মপ্রকাশের_পূর্বাভাস_নির্জন_সাধনা_ও_গিরিগুহায়_চিল্লাকাশী

***আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স যখন ৩৫অতিক্রম করলো-তখন থেকেই তিনি নির্জনতা বেশি পছন্দ করতেন এবং কয়েক দিনের খাদ্য সাতে নিয়ে মক্কার ৩মাইল পূর্বে হেরা পর্বতের চূড়ায় চলে যেতেন, তিনি পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়া গীরিগুহায় একাকী বসে বসে ইবাদত বন্দেগী ও ধ্যান করতেন।
উক্ত গুহার নির্জন ইবাদতের কারণ ছিল এই-সেখান থেকে খানায়ে কা'বা দৃষ্টিগোচর হতো। উপরে আকাশের নিলীমা এবং সম্মুখে আল্লাহর ঘর, আর নির্জন নিথর প্রকৃতি-সব মিলিয়ে তিনি ধ্যানের রাজ্যে ডুবে যেতেন। এটা ছিল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র চিল্লা।

**বর্তমানে এক ধরনের চিল্লাতে বের হয় তাবলীগ জামাত। তারা মসজিদে থাকে, বারান্দায় ( বা বাইরে ) রান্না  করে ও খায় এবং মানুষের ঘরে গরে গাশত কলে। এটাকে তারা নাম দিয়েছে চিল্লা। কোন নবী, সাহাবি বা কোন অলী-গাউস এ ধরনের চিল্লা করেননি। সুতরাং এ নাম গ্রহন করে তারা মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তাদের চিল্লার কোন ভিত্তি নেই।

***নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদ্য ফুরিয়ে গেলে তিনি গৃহে পত্যাবর্তন করে খাদ্য নিয়ে পুনরায় চলে যেতেন হেরা  গুহায়। একাজে সহয়তা করতেন পতিপ্রাণা  বিবি হযরত খাদিজা (রাঃ)। যতই দিন যেতে লাগলো, হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ধ্যানের গভীরতা ততই বাড়তে লাগলো। পূর্ণিমার চাঁদের আকর্ষনে সাগরের পানি যেভাবে উথলে উঠে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেমাকর্ষণে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হৃদয় সাগরেও তেমনিভাবে প্রেমের জোয়ার উথলে উঠতে থাকে। প্রেমিক আর প্রেমাম্পদ ছাড়া এ আকর্ষণ অন্য কেউ অনুভব করতে পারবেনা। এ যেন মহান দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বপ্রস্তুতি পর্ব। ৪০বছর পূর্ণ হওয়া মাত্রই ১২ই রবিউল আউয়াল থেকে ওহীর সাতটি স্তরের প্রথম স্তর অবতীর্ণ হওয়া শুরু হলো-অর্থ্যত্‍ "সত্যস্বপ্ন দর্শন"। এভাবে ছয়মাস কেটে গেল। এই ছয় মাসকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তের ৪৬ভাগের এক ভাগ বলে হাদিসে উল্লেখ করেছেন-অর্থ্যাত্‍৪৬ভাগের একভাগ ছিল ৬মাস "সত্যস্বপ্ন দর্শন" (মিরকাত)। ৭ম মাসে অর্থ্যাত্‍ রমযানের শবে কদর সোমবার রাত্রে প্রথম প্রত্যক্ষ ওহী (কোরআন) নাযিল শুরু হয়। বোখারী শরীফের  প্রারম্ভে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত/ ওহী নাযীলের সূচনা সয় সত্যস্বপ্ন দ্বারা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন স্বপ্ন দেখতেন, দিনের বেলায় সূর্যালোকের ন্যায় তা বাস্তবে ঘটে যেত। এটা হলো ওহী নাযিলের সাতটি প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি অন্যতম প্রক্রিয়া। এটা জিব্রাইলের মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর পক্ষ হতে হতো। নবীগণের স্বপ্নও ওহী। এজন্য তাঁদের স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশ শরীয়তের অংশ হতো। অন্যকোন অলী বা গাউছের স্বপ্ন সত্য হলেও তা শরিয়ত বলে গণ্য হবে না এবং নবুয়তের অংশ হবেনা।
সুতরাং স্বপ্নে প্রাপ্ত তাবলীগের ৬অছুল বা নিয়মকে শরীয়ত বলে প্রচার করা এবং স্বপ্নের এই ছয় অছুলকে 'পূর্ণাঙ্গ ইসলামের রূপ' বলে প্রচার করা হারাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ছয় অছুলী তাবলীগ জামাত তাদের ছয় অছুলকে ইসলামের পূর্ণরূপ বলে "দাওয়াতে তাবলীগ" নামক পুস্তকে উল্লেখ করেছে। মূলত তাবলীগ জামাতের ছয় অছুল স্বপ্নে প্রাপ্ত। মৌলভী ইলিয়াছ  নিজিই বলেছে যে, তাবলীগের পূর্ণাঙ্গ তরিকাটি আমার স্বপ্নে প্রাপ্ত। (মলফুযাত ৫০নং)। স্বপ্নপ্রাপ্ত জিনিসকে দ্বীন নাম দিয়ে প্রচার করা বেদ্বিনী কাজ এবং মসজিদ ব্যবহার করা অবৈধ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর তরফ থেকে অবতীর্ণ হুকুম আহকামের তাবলীগ করার জন্য নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ করেছেন (সুরা মায়েদা) সুতরাং তাবলীগ করতে হলে ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত ইসলামের ৫অছুলের তাবলীগ করতে হবে-দিল্লীর স্বপ্নেপ্রাপ্ত তাবলীগ নয়। কেননা এটা আসমান থেকে অবতীর্ণ নয়। কারও ব্যাক্তিগত নীতিমালা বা অছুলকে তাবলীগ নাম দেয়া হারাম। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলিগ ছিল কাফেরদের নিকট ওহীপ্রাপ্ত দ্বীনের দাওয়াত। এ ধরনের তাবলীগের হুকুমই কোরআনে দেয়া হয়েছে। দিল্লীর তাবলীগ জামাত মুসলমানকে কাফের মনে করেই তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত দেয়। দ্বীনের দাওয়াত হয় কাফেরের কাছে।তাবলীগ জামাতের ৪২নং মলফুয মোতাবেক "তাবলীগ জামাত ও তাদের সাহায্যকারী ব্যতিত অন্য কোন তৃতীয় মুসলমান নেই" (মলফুজাতে ইলিয়াস ৪২নং)। তারা সুন্নি মুসলমানকে অমুসলিম মনে করে দ্বীনের দাওয়াত পৌছায়। প্রমান হলো ৪২নং মলফুজ।

মূলত: চিল্লা হচ্ছে তরিকতপন্হীদের নির্জন সাধনার নাম। হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) চিল্লা করেছেন নির্জন জঙ্গলে ও বিরান মরুভুমিতে। হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ (রাঃ) চিল্লা করেছেন হযরত দাতাগঞ্জ বখশ (রহঃ)-এর মাযারে একাধারে ৪০দিন। হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহঃ চিল্লা  করেছিলেন যমুনা নদির তীরে।হযরত মুছা (আঃ) চিল্লা করেছিলেন ৪০দিনের জন্য তূর পর্বতের নির্জনে। আমাদের প্রিয় নবী চিল্লা করেছেন গারে হেরায়। লোকালয় থেকে দূরে একাকী নির্জন সাধনাকেই তরিকতের ভাষায় চিল্লা বলা হয়। আজকাল চিল্লা দিচ্ছে দলবেধে মসজিদে মসজিদে। এটা চিল্লার অবমাননা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবলিগ জামাত কতৃক মসজিদে মসজিদে গাঠুরী বোঝা নিয়ে ঘুরা ফেরা করতে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই নবী নিষেদ করেছেন-
"তোমরা মক্কা, মদিনা ও বাইতুল মোকাদ্দাস-এই তিন মসজিদ ব্যাতিত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে গাঠুরী বোঝা নিয়ে সফর করো না" #বুখারী
সেই ভবিষ্যতবাণী ১৩৩৩হিজরিতে বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। ওহাবীর তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে মসজিদগুলো সফর করে তা দখল করে এলাকার ওহাবী আকিদা প্রতিষ্ঠার গোপন স্কীম হাতে নিয়েছে। এই স্কীম বাস্তবায়ন করতে প্রথমে ৬অছুলের বয়াধ করে। পরে তাদেরকে কেন্দ্রে নিয়ে ওহাবি আকিদা শিক্ষা দেয়।
(তথ্য-নূর নবী-৬৭-৬৯পৃঃ-অধ্যক্ষ হাফেজ আবদুল জলিল রহঃ)।#share_must

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।