নূরে খোদা মুস্তফা।

নুরে খোদা মুহাম্মাদ মোস্তফা ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ) ২য় পর্ব )
হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত যে -
ﻋﻦ ﺍٔﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍٔﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳﺎٔﻝ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻛﻢ
ﻋﻤﺮﺕ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﻴﻦ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﺴﺖ ﺍٔﻋﻠﻢ، ﻏﻴﺮ ﺍٔﻥ ﻓﻲ
ﺍﻟﺤﺠﺎﺏ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﻧﺠﻤﺎ ﻳﻄﻠﻊ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺍٔﻟﻒ ﺳﻨﺔ ﻣﺮﺓ، ﺭﺍٔﻳﺘﻪ
ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﺍٔﻟﻒ ﻣﺮﺓ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻭﻋﺰﺓ ﺭﺑﻲ ﺟﻞ ﺟﻼﻟﻪ ﺍٔﻧﺎ
ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻜﻮﻛﺐ
‘ নিশ্চয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এক বার জিব্রাঈল আলাইহিস
সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বয়স
কত? জিব্রাঈল আরয করলেন, আল্লাহর কসম
(আমার বয়সের ব্যাপারে) এটা ছাড়া আমি
জানিনা যে, চতুর্থ পর্দায় (আসমানে) একটি
তারকা প্রতি সত্তর হাজার বছর পর একবার
উদিত হতো আর তা আমি বাহাত্তর হাজার
বার দেখেছি। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- হে জিব্রাঈল,
আমার রবের ইজ্জতের কসম আমি-ই ছিলাম
সেই তারকা।’ (আল্লামা হাক্কী, রুহুল
বায়ান: ৩/৫৪৩; ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী,
সিরাতে হালবীয়া: ১/৪৯; আল্লামা ইউসূফ
নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার: ৭৭৬)
আবার ইমাম গাযযালী সনদ বিহীন এবং
ইমাম আবদুর রাযযাক হযরত সায়েব বিন
ইয়াযীদ থেকে মাকতূ‘ সনদে (সাহাবীর বাণী
হিসেবে) বর্ণনা করেছেন যে, “নূরে
মুহাম্মদীকে আল্লাহ ময়ূরের আকৃতিতে সৃষ্টি
করতঃ শ্বেত শুভ্রপাত্রে রেখে চার শাখা
বিশিষ্ঠ সাজারাতুল ইয়াক্বিন নামক বৃক্ষে
স্থাপন করলেন। এ অবস্থায় তিনি একাধারে
সত্তর হাজার বছর আল্লাহর তাসবীহ-
তাহলীলে মাশগুল থাকেন।” (ইমাম
গাযযালী, দাকায়েকুল আখবার: ৯; ইমাম
আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ, আল জুযউল
মাফকুদ মিনাল জুযইল আউয়াল: ৫১-৫২)
অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম
আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন সেই নূরে
মুহাম্মদীকে আদম আলাইহিস সালামের
মধ্যে স্থাপন করলেন। তাফসীরে দুররে
মানছূরে রয়েছে -
ﺍﺧﺮﺝ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻋﻤﺮ ﺍﻟﻌﺪﻧﻰ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺍﻥ ﻗﺮﻳﺸﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﻧﻮﺭﺍ
ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗﺒﻞ ﺍﻥ ﻳﺨﻠﻖ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﺑﺎﻟﻔﻰ ﻋﺎﻡ ﻳﺴﺒﺢ ﺫﻟﻚ
ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻭﺗﺴﺒﺢ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺑﺘﺴﺒﻴﺤﻪ - ﻓﻠﻤﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺩﻡ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ
ﺍﻟﻘﻰ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻓﻰ ﺻﻠﺒﻪ - ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ : ﻓﺎﻫﺒﻄﻨﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻓﻰ ﺻﻠﺐ ﺍﺩﻡ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ
ﻭﺟﻌﻠﻨﻰ ﻓﻰ ﺻﻠﺐ ﻧﻮﺡ ﻭﻗﺬﻑ ﺑﻰ ﻓﻰ ﺻﻠﺐ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺰﻝ
ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻨﻘﻠﻨﻰ ﻣﻦ ﺍﻻﺻﻼﺏ ﺍﻟﻜﺮﻳﻤﺔ ﺍﻟﻰ ﺍﻻﺭﺣﺎﻡ ﺍﻟﻄﺎﻫﺮﺓ ﺣﺘﻰ
ﺍﺧﺮﺟﻨﻰ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺍﺑﻮﻯ ﻟﻢ ﻳﻠﺘﻘﻴﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﻔﺎﺡ ﻗﻂ
‘ হযরত ইবনু আবী উমর আল-আদনী ইবনু আব্বাস
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন- নিশ্চয় কুরাইশী নবী (অর্থাৎ কুরাইশ
বংশে আগমন করলেও মূলতঃ তিনি) মাখলুক
তথা আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্টির দু’
হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহর দরবারে নূর
ছিলেন। সেই নূর তাসবীহ পাঠ করতো এবং
তাঁর তাসবীর সাথে ফেরেশতাগণও তাসবীহ
পাঠ করতো। অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা
হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি
করলেন, তখন আদম আলাইহিস সালাম এর
পৃষ্টদেশে সেই নূর মুবারক স্থাপন করলেন।
রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেন- অতঃপর আল্লাহ
তা‘আলা আমাকে হযরত আদম আলাইহিস
সালামের পৃষ্টদেশে থাকা অবস্থায় জমিনে
পাঠালেন। অতঃপর হযরত নূহ আলাইহিস
সালাম এর পৃষ্টদেশে আমাকে স্থাপন করলেন।
বংশ পরম্পরায় আমাকে হযরত ইব্রাহীম
আলাইহিস সালামের পৃষ্ঠে থাকাকালীন
নমরূদের তৈরি অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা
হয়েছিল। এভাবে স্থানান্তরিত হতে হতে
পবিত্র পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র রেহেমে
স্থানান্তরিত হতে থাকি, এমনকি আমার
পিতা-মাতা পর্যন্ত। আমার পূর্ব পুরুষের মধ্যে
কখনোই যিনা সংঘটিত হয়নি।’ (ইমাম সুয়ূতী,
আদ্ দুররুল মানছূর: ৪/৩২৯ , ﻟﻘﺪ ﺟﺎﺀ ﻛﻢ ﺭﺳﻮﻝ ﻣﻦ
ﺍﻧﻔﺴﻜﻢ আয়াতের ব্যখ্যায়)
পবিত্র থেকে পবিত্র ব্যক্তিগণের মাধ্যম হয়ে
স্থানান্তর হতে হতে সে নূর সর্বশেষ হযরত
আব্দুল্লাহর মাধ্যমে হযরত আমেনা এর রেহেম
মুবারকে স্থানান্তর হয়। নবীজী নিজে
ইরশাদ করেন -
ﻭﺇﻥ ﺍٔﻣﻲ ﺭﺍٔﺕ ﻓﻲ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﻧﻮﺭﺍً ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﺠﻌﻠﺖ ﺍٔﺗﺒﻊ ﺑﺼﺮﻱ ﺍﻟﻨﻮﺭ
ﻓﺠﻌﻞ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻳﺴﺒﻖ ﺑﺼﺮﻱ ﺣﺘﻰ ﺍٔﺿﺎﺀ ﻟﻲ ﻣﺸﺎﺭﻕ ﺍﻻٔﺭﺽ ﻭﻣﻐﺎﺭﺑﻬﺎ
‘ আমার আম্মাজান দেখলেন যে তাঁর পেটে নূর
অবস্থান করছে। তিনি বলেন, অতঃপর নূরের
দিকে আমি চক্ষু ফিরালাম, নূরের প্রখরতা
আমার চোখের দৃষ্টিকে ম্লান করে দিচ্ছিল।
এমনকি ঐ নূরের আলোতে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম
তথা সারা দুনিয়া আমার নিকট আলোকিত ও
প্রকাশিত হয়ে গেল।’ (ইমাম যায়‘আলী,
তাখরীজুল আহাদীসি ওয়াল আছার: ৮৩;
ইমাম সুয়ূতী, আল-খাসায়েসুল কুবরা)
এছাড়াও নবীজীর সুরাত বা আকৃতির
ব্যাপারে শায়খ ইসমাইল হাক্কী ‘সূরা
মারিয়াম’-এর ﻛﻬﻴﻌﺺ এর ব্যাখ্যায় ইমাম
কাশেফীর একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন।
তিনি বলেন, শায়খ রুকুনুদ্দীন আলাউদ্দৌলা
সিমনানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমান -
ﺣﻀﺮﺕ ﺭﺳﺎﻟﺖ ﺭﺍ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳﮧ ﺻﻮﺭﺗﺴﺖ ﻳﻜﯽ
ﺑﺸﺮﯼ ﻛﻘﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻗﻞ ﺍﻧﻤﺎ ﺍﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻣﺜﻠﻜﻢ � ) ﺍﻟﻜﻬﻒ : ١١٠ (�
ﺩﻭﻡ ﻣﻠﻜﯽ ﭼﻨﺎﻛﮧ ﻓﺮﻣﻮﺩﺳﺖ � ) ﻟﺴﺖ ﻛﺎٔﺣﺪ ﺍﺑﻴﺖ ﻋﻨﺪﯼ ﺭﺑﯽ (�
ﺳﻴﻮﻡ ﺣﻘﯽ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻟﯽ ﻣﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻗﺖ ﻻ ﻳﺴﻌﻨﯽ ﻓﻴﻪ ﻣﻠﻚ
ﻣﻘﺮﺏ ﻭﻻ ﻧﺒﻲ ﻣﺮﺳﻞ (� ﻭﺍﺯﻳﻦ ﻭﺭﻭﺷﻨﺘﺮ � ) ﻣﻦ ﺭﺍٔﻧﯽ ﻓﻘﺪ ﺭﺍٔﻱ
ﺍﻟﺤﻖ ((
‘ রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর তিনটি সুরাত রয়েছে। একটি,
বাশারী বা মানবীয় সুরাত। যেমন, আল্লাহর
-বাণী ﻗﻞ ﺍﻧﻤﺎ ﺍﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻣﺜﻠﻜﻢ ) আপনি বলুন, নিশ্চয়
আমি তোমাদের ন্যায় বাহ্যিক আকৃতিতে
একজন মানুষ)। দ্বিতীয়টি হলো, ফেরেশতার
সুরাত। যেমন, আল্লাহর হাবীব নিজেই
-ফরমান ﻟﺴﺖ ﻛﺎٔﺣﺪ ﺍﺑﻴﺖ ﻋﻨﺪﯼ ﺭﺑﯽ ) আমি তোমাদের
কারো মতো নই, আমি আমার রবের নিকট
রাত্রি যাপন করি)। তৃতীয়টি হলো, সুরাতে
হাক্কী বা প্রকৃত সুরাত। যেমন, হাদীস
শরীফে রয়েছে, নবীজী ইরশাদ করেন - ﻟﯽ ﻣﻊ
ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻗﺖ ﻻ ﻳﺴﻌﻨﯽ ﻓﻴﻪ ﻣﻠﻚ ﻣﻘﺮﺏ ﻭﻻ ﻧﺒﻲ ﻣﺮﺳﻞ
) আল্লাহর সাথে আমার এমন একটি বিশেষ
সময় রয়েছে যাতে নৈকট্যপ্রাপ্ত কোন
ফেরেশতা এবং কোন নবী-রাসূল পৌঁছতে
পারেনি)। এর চেয়েও স্পষ্ট বর্ণনা হাদীসে
রয়েছে যে, নবীজী বলেন - ﻣﻦ ﺭﺍٔﻧﯽ ﻓﻘﺪ ﺭﺍٔﻱ ﺍﻟﺤﻖ
) যে আমাকে দেখল, সে যেন হককেই দেখল)
অর্থাৎ তিনি আল্লাহ দেখার আয়না
স্বরূপ।’ (আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান:
৫/৩১৪)
নূরে মুহাম্মদীকে সৃষ্টির পর আকৃতি প্রদানের
ব্যাপারে আল্লামা ইমাম যারকানী বলেন -
ﺛﻢ ﺟﺴﻢ ﺻﻮﺭﺗﻪ ﻋﻠﻲ ﺷﻜﻞ ﺍﺧﺺ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻨﻮﺭ
‘ অতঃপর নূরে মুহমাম্মদীকে বিশেষ আকৃতিতে
মুজাসসাম (শরীর বিশিষ্ট) করা হয়।’ (ইমাম
যারকানী, শারহুল মাওয়াহেব: ১/৯৫)
আর আহলে সুন্নাতের সকলেই এ ব্যাপারে
একমত যে হুযুর পাকের যে সুরাতই হোক, সব
ক’টিই নূরের; এমনকি মানব আকৃতিও নূরে
মুজাসসাম (নূরের শরীর বিশিষ্ট)।
হাফিজুল হাদীস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী
বর্ণনা করেন -
ﺍﺧﺮﺝ ﺍﻟﺤﻜﻴﻢ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻋﻦ ﺫﻛﻮﺍﻥ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﺮﻯ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻﻗﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺳﺒﻊ : ﻣﻦ
ﺧﺼﺎﺋﺼﻪ ﺍﻥ ﻇﻠﻪ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﻘﻊ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ ﻓﻜﺎﻥ ﺍﺫﺍ
ﻣﺸﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺍﻭ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ - ﻗﺎﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ :
ﻭﻳﺸﻬﺪ ﻟﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻰ ﺩﻋﺎﺋﻪ - ﻭﺍﺟﻌﻠﻰ ﻧﻮﺭﺍ
-
‘ হাকিম তিরমিযী হযরত যাকওয়ান
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্ণনা করেছেন,
নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর ছায়া না সূর্যের আলোতে
দেখা যেত, আর না চন্দ্রের আলোতে। ইবনু
সাবা‘ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন- রাসূল
পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
বৈশিষ্ট্য এ যে, নিশ্চয় তাঁর ছায়া জমিনে
পতিত হতো না, কেননা তিনি ছিলেন নূর।
অতএব, তিনি যখন সূর্যের আলোতে অথবা
চন্দ্রের আলোতে চলতেন, তখন তাঁর ছায়া
দেখা যেত না। কেউ কেউ বলেন, রাসূল পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার
ছায়া না থাকার বিষয়টি ঐ হাদীস শরীফ
দ্বারা প্রমাণিত, যা হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু‘আয় বলেছেন-
হে আল্লাহ! আমাকে নূর করে দাও।’ (ইমাম
জালালুদ্দীন সুয়ূতী, আল-খাসায়েসুল কুবরা:
১/১১৬)
ইমাম যারকানী বলেন -
ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻﻗﻤﺮ ﻻﻧﻪ ﻛﺎﻥ
ﻧﻮﺭﺍ
‘ সূর্য চন্দ্রের আলোতে নবী পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেহ মুবারকের
ছায়া পড়ত না। কেননা তিনি ছিলেন
অপাদমস্তক নূর।’ (ইমাম যারকানী, শারহুল
মাওয়াহেব: ৪/২২০)
অনুরূপ বর্ণনা ইমাম কাদ্বী আয়াদ্ব তার
‘কিতাবুশ শিফা বি তা‘রীফি হুকুকিল
মুস্তফা’য়ও বর্ণনা করেছেন।
** জ্ঞাতব্য যে, মানুষের সৃষ্টিগত ধাতু বা
মাদ্দা সৃষ্টি হয় তাদের বাবা-মা’র মধ্যে।
তাদের বাবা-মা যখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকেন
তখনও এই মূল উপাদান তাদের মধ্যে থাকেনা
বরং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর তা তৈরি হয়।
আর দাদা থেকে পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কোন
কালেই নিম্ন পুরুষদের সৃষ্টি মাদ্দা বা ধাতু
থাকে না এবং স্থানান্তরিতও হয় না।
তাদের মাদ্দা যখন পিতা হতে মায়ের গর্ভে
যায় তখন এতে একটি আকৃতি প্রদান করা হয়
এবং তাতে কিছুদিন পর রূহ্ দেওয়া হয়। আর
মানুষের মাদ্দা মা-বাবার মিলিত মনি বা
বীর্য। যেমন, ইরশাদ হয়েছে -
ﻓَﻠْﻴَﻨﻈُﺮِ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥُ ﻣِﻢَّ ﺧُﻠِﻖَ ﺧُﻠِﻖَ ﻣِﻦ ﻣَّﺎﺀ ﺩَﺍﻓِﻖٍ ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦ ﺑَﻴْﻦِ ﺍﻟﺼُّﻠْﺐِ
ﻭَﺍﻟﺘَّﺮَﺍﺋِﺐِ
‘ মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে
সৃজিত হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে
সংখলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয়
মেরুদন্ড ও বক্ষ পাজরের মধ্যে থেকে।’ (সূরা
তারিক: ৫-৭)
অনুরূপ আরও ইরশাদ হয়েছে -
ﻣِﻦْ ﺍَٔﻱِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺧَﻠَﻘَﻪُ ﻣِﻦْ ﻧُﻄْﻔَﺔٍ ﺧَﻠَﻘَﻪُ ﻓَﻘَﺪَّﺭَﻩُ
‘ তিনি তাকে কি বস্তু হতে সৃষ্টি করেছেন?
শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর
সুপরিমিত করেছেন।’ (সূরা আবাছা: ১৮-১৯)
অনুরূপ অন্য আয়াতে এসেছে -
ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻣِﻦْ ﺗُﺮَﺍﺏٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻧُﻄْﻔَﺔٍ
‘ আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি
হতে অতঃপর বীর্য হতে।’ (সূরা হাজ্জ্ব: ৫)
কিন্তু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর সৃষ্টি তথ্য সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং
স্বতন্ত্র। কেননা তিনি না মাটি হতে, না
বীর্য হতে, বরং তাঁর মাদ্দা হল নূর যা প্রথমে
আদম আলাইহিস সালামের মাঝে আমানত
রাখা হয়েছিল। অতঃপর তাঁর থেকেই
স্থানান্তর হতে হতে শেষ পর্যন্ত মা
আমেনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং
তিনি আদম আলাইহিস সালামের মাঝে
স্থাপন করার পূর্বেও বিদ্যমান ছিলেন- কখনও
তারকার আকৃতিতে, কখনও বা ময়ূরের
আকৃতিতে, কখনও অন্যকোন আকৃতিতে; এমনকি
সর্ব প্রথম সৃষ্টি হয়েই তিনি সেজদা করে
মাথা উত্তোলন করেছিলেন। অবশেষে বাবা
আব্দুল্লাহ এবং মা আমেনার মাধ্যম হয়ে
মানব আকৃতিতে মানবীয় পূর্ণ গুণাবলীসহ
আগমন করেন। তাঁর মাদ্দাও পিতা-মাতার
মনি ছিলনা, ছিল নূর তা-ই পূর্বোক্ত সকল
বর্ণনা হতে প্রমাণিত হয়।
*** এখন উপর্যুক্ত সকল আলোচনা হতে যে
বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, তা হলো-
১. হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-ই হলেন আল্লাহ তা‘আলার
সর্বপ্রথম সৃষ্টি। এমনকি ফেরেশতা জিব্রাঈল
ও মানব জাতীর প্রথম মানব হযরত আদম
আলাইহিস সালাম এরও অনেক পূর্বে নবীজীর
সৃষ্টি।
২. হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহ আযযা ওয়া
জাল্লা এর যাতী নূর থেকে সৃষ্টি। আর ‘যাতী
নূর’ বলার দ্বারা আল্লাহর যাতের অংশ বা
আইনে যাত কিংবা টুকরা হওয়াও আবশ্যক হয়
না। (আ‘লা হযরত, সালাতুস সফা ফী নূরিল
মুস্তফা)
৩. নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি হয়েই বিশেষ আকৃতি
নিয়ে সিজদা করেছেন এবং সিজদা হতেই
মাথা উত্তোলন করে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’
বলেছেন। আর সে নূরের নামই আল্লাহ
‘মুহাম্মদ’ রেখেছেন।
৪. অতঃপর সে নূর কখনো ময়ূর আকৃতিতে, কখনো
তারকার আকৃতিতে ছিলেন, আবার তা কখনো
ফেরেশতার রূপেও ছিলেন এবং সর্বশেষ সে
নূরই মানব আকৃতিতে এ পৃথিবীতে আগমন
করেছেন। আর কুরআনের আয়াত ﻗﻞ ﺍﻧﻤﺎ ﺍﻧﺎ ﺑﺸﺮﻣﺜﻠﻜﻢ
) বলুন, আমি তোমাদের মত মানুষ) এর অর্থও
তাই যেমনটি রুহুল বায়ানে বলা হয়েছে।
৫. কুরআন প্রমান করে মানবজাতী সৃষ্টির
মাদ্দাহ বা ধাতু পিতা-মাতার মিলিত মনী
এবং তা পিতা-মাতার শরীরেই তৈরী হয়,
পূর্বে এর অস্তিত্ব থাকেনা এবং পূর্ব পুরুষ
হতেও স্থানান্তরিত হয়ে আসেনা।
৬. আর হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর সৃষ্টির মাদ্দাহ বা উপাদান হল
নূর। সে নূর আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি
করতঃ তাঁর মধ্যে আমানত রাখা হয়েছে এবং
পরবর্তীতে তা পবিত্র নসলে স্থানান্তরিত
হয়ে সর্বশেষ মানব রূপে পৃথীবিতে
বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এখন, কুরআন প্রমান করে মানব জাতী (জিনসে
বাশার) সৃষ্টির ধাতু হলো পিতা মাতার
মিলিত বীর্য এবং তা পিতা মাতার
শরীরেই অনস্তিত্ব ) ﻋﺪﻡ ( থেকে অস্তিত্বে
) ﻭﺟﻮﺩ ( আসে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর প্রকৃত যাত বা সত্ত্বাও যদি
মূলতঃ ‘জাতীতে মানুষ তথা জিনসে বাশার’
হয় তাহলে কুরআন অনুযায়ী নবীজীর সৃষ্টির
ধাতুও পিতা-মাতার মিশ্রিত নাপাক মনী
ধরতে হবে এবং তাঁর ‘হযরত আদম থেকে মা
আমেনা পর্যন্ত স্থানান্তর হওয়া’কে
অস্বীকার করতে হবে। (নাউযুবিল্লাহ!) আর
এখানে ঈসা আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টির
স্বতন্ত্র বিষয়টিকে এক্ষেত্রে কিয়াস করার
অবকাশ নাই এজন্য যে, তাঁর পবিত্র শরীরও
সৃষ্টি হয়েছে মা মরিয়মের গর্ভেই
জিব্রাইলের ফুৎকারের মাধ্যমে, পূর্ব পুরুষ হতে
স্থানান্তর বা প্রত্যাবর্তন হয়ে আসেনি।
এটি আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ এক কুদরতের
প্রমান এবং বিশেষ কিছু
বিরোদ্ধবাদীদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত জবাব
মাত্র।
অতএব একথা নির্দিধায় মানতে হবে যে,
নবীজীর হাকীকত বা প্রকৃত সত্ত্বা মানব
জাতীর অর্ন্তভূক্ত নয় তথা হাকীকতে
মুহাম্মদী ‘জাতীতে মানুষ (জিনসে বাশার)’
নন। তাঁর প্রকৃত সত্ত্বা কি, তা আল্লাহ ছাড়া
কেউ জানে না । যেমন নবীজী হযরত আবু বকর
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে ইরশাদ
-করেন
ﻳﺎ ﺍﺑﺎ ﺑﻜﺮ ﻭﺍﻟﺬﻱ ﺑﻌﺜﻨﻲ ﺑﺎﻟﺤﻖ ﻟﻢ ﻳﻌﻠﻤﻨﻲ ﺣﻘﻴﻘﺔ ﻏﻴﺮ ﺭﺑﻲ
‘ হে আবু বকর, ঐ সত্ত্বার কসম! যিনি আমাকে
সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমার হাকীকত
(আমার প্রকৃত জাত - ﺟﻨﺲ এবং সত্ত্বা - ﺫﺍﺕ (
আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। (ইমাম ফাসী,
মাতালিউল মাসরাত: ১২৯; আল্লামা ইউসূফ
নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার: ২/১৫; শায়খ
আবদুল হক মুহাদ্দেছে দেহলভী, শারহু
ফাতহিল গায়ব: ১/৩৪০, আ‘লা হযরত, সালাতুস
সফা ফী নূরিল মুস্তফা: ৯)
যেখানে নবীজীর প্রকৃত সত্ত্বা সর্ম্পকে হযরত
আবু বকরকে নবীজী বলেন যে- আল্লাহ ছাড়া
কেহ জানেন না, সেখানে আমরা কে যে-
নবীজীর হাকীকী জিনস বা জাত কে মানুষ
বলতে পারব?
চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ‘লা হযরত ইমাম
আহমদ রেযা খান বলেন -
ﻋﺎﻟﻢ ﻣﯿﮟ ﺫﺍﺕ ﺭﺳﻮﻝ ﮐﻮ ﺗﻮ ﮐﻮﺋﻰ ﭘﮩﭽﺎﻧﺘﺎ ﻧﮩﯿﮟ
‘ সৃষ্টিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামার সত্ত্বা বা যাতকে তো কেউই
চিনে না।’ (আ‘লা হযরত, সালাতুস সফা ফী
নূরিল মুস্তফা

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।