ইমাম আযম আবু হানিফা রহঃ এর জিবনী
ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) এর জীবনীঃ
দ্বীন প্রচারের আলোকবর্তিকা নিয়ে যেসব মহামনীষিগন মানবজাতিকে হিদায়াতের পথ পদর্শন করেছেন,দুনিয়াবী লোভ লালসা ও পার্থিব মোহ যাদেরকে হকের আদর্শ থেকে কিছুমাত্র বিচ্যুত করতে পারেনি,যারা অন্যায় ও অসত্যের কাছে কোনদিন মাথা নত করেননি,ইসলাম ও মানুষের কল্যানে যারা জীবনকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেছিলেন ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) ছিলেন তাদেরই অন্যতম।
আশি হিজরী মুতাবিক সাতশত বার ঈসায়ীগনে কুফা নগরীতে তিনি জন্মলাভ করেন।তার পূর্বপুরুষগন ইরানের অধিবাসী ছিলেন।কৈশোরে তিনি লেখাপড়া করার তেমন সুযোগ পাননি।চৌদ্দ/পনের বছর বয়সে তিনি একদিন বাজারে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে হযরত ইমাম শাবী(রহঃ) তাকে দেখে বলেন,বালক তুমি কোথায় এবং কি পড়াশোনা করো?আবু হানিফা উত্তরে বললেন,আমি কিছুই পড়িনা।ইমাম শাবী(রহঃ) বলেন,আমি তো তোমার মাঝে প্রতিভার চিহ্ন প্রত্যক্ষ করছি।ভাল আলেমের কাছে তোমার লেখাপড়া করা উচিত।এ কথায় অনুপ্রেরনা লাভ করে তিনি লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন।তিনি ইমাম শাবী(রহঃ),ইমাম মোহাম্মদ ইবনে আতা ইবনে বরিয়া(রহঃ) এবং ইমাম জাফর সাদিক(রহঃ) এর মত তৎকালীন প্রখ্যাত আলেমগনের কাছে ইলম অর্জন করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কুরআন হাদীস,ফিকহ,ইলমে কালাম,আদব প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেন।তিনি মক্কা,মদীনা ও কুফায় অবস্থানকারী ওস্তাদগনের কাছে পাগলের মত ছুটে যেতেন ইলম হাসিল করার জন্য।তিনি প্রায় চার হাজার আলেমের কাছে জ্ঞান লাভ করেন।কারো কারো মতে তিনি তাবেয়ী ছিলেন।একশতদুই হিজরীতে তিনি যখন মদীনা গমন করেন তখন মদীনায় দুজন সাহাবী হযরত সুলাইমান(রাঃ) এবং হযরত সারেম ইবনে সুলাইমান(রাঃ) জীবিত ছিলেন।
তাফসীর ও হাদীস শাস্ত্রে তার অসাধারন অভিজ্ঞতা ও পান্ডিত্ব আয়ত্ব্যেও ফিকহ শাস্ত্রেই তিনি সর্বাধিক সুখ্যাতি অর্জন করেন।
রওযা জিয়ারতের জন্য মদীনা শরীফ পৌছে এর নিকটবর্তী হয়ে বললেনঃ(আসসালামু আলাইকুম ইয়া সায়্যেদুল মুরসালীন)।উত্তরে পেলেন(ওয়া আলাইকুমুসসালাম ইয়া ইমামাল মুসলিমীন)।
ইমাম আজম বাল্যকাল থেকে আল্লাহ প্রেমিক ও দুনিয়ার প্রতি বিমুখ ছিলেন।তিনি খুবই সাধারন পোষাক পরতেন।একরাত্রে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে,তিনি মহানবী(সাঃ) এর পাক রওজা মোবারক হতে তার পাক হাড় মোবারক তুলছেন এবং এগুলোর মধ্যে একটি অপরটি থেকে পৃথক করছেন।এ স্বপ্ন দেখে তিনি ভয়ে অস্থির হয়ে জেগে উঠে বিখ্যাত স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারী ইবনে সীরীনের এক শিষ্যের কাছে এর অর্থ জিজ্ঞেস করেন।শিষ্য এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেন যে,"আপনি নবী(সাঃ) এর ইলম এবং হাদীসে এতটাই জ্ঞানলাভ করবেনযে,এসব শাস্ত্রের বিস্তৃত ব্যাখ্যাকারী হিসেবে আপনার স্থান হবে এবং হককে না হক থেকে অর্থাৎ সত্যকে মিথ্যা থেকে পৃথক করতে সক্ষম হবেন।"
আর একবার তিনি স্বপ্নে মহানবী(সাঃ) দেখেন,তিনি বলেন"হে আবু হানিফা,আল্লাহতায়ালা তোমাকে এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে,তুমি যেন আমার সুন্নতকে জীবিত রাখবে।নির্জনতা অবলম্বন করনা"।তৎকালীন খলীফা আল মনসুর একদিন বাগদাদের প্রধান কাযী ও অন্যান্য খাস উলামাগনকে ডেকে কোতওয়ালকে বললেন,"আমার প্রত্যেক সহচরের নামে কিছু কিছু জমিজামা লিখে দাও"।কোতওয়াল হুকুমমত কাজ করে।সাক্ষীস্বরুপ দলিলে দস্তখত নেওয়ার জন্য খলীফার জৈনিক সহচরের মারফত দলিলগুলো প্রধানকাযী বৃদ্ধ শায়াবী ও অন্যান্য আলেমের কাছে পাঠিয়ে দেন।সর্বপ্রথম কাযী শায়াবী সাক্ষীস্বরুপ দলিলে দস্তখত দিলেন।তারপর অন্যান্য আলেমগনো দস্তখত করেন।কিন্তু ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) দস্তখত না করে বরং তিনি খাদেমকে জিজ্ঞেস করেন,বলেন,"হযরত খলীফাকে আমার কাছে আসতে বলো,নতুবা আমাকে তার কাছে নিয়ে চলো,তাহলে সাক্ষ্য ঠিক হবে"।খাদেম বললো,"স্বয়ং প্রধান কাযী ও অন্যান্য বিজ্ঞ আলেম খলীফার অনুপস্থিতিতে এবং তার কথায় বিশ্বাস করে স্বাক্ষর দিয়েছেন।আপনি কেন অনর্থক তর্ক করছেন?"।যাহোক তার সাক্ষ্য না করার কথা খলীফার কাছে পৌছালো।খলীফা কাযীকে জিজ্ঞেস করেন"সাক্ষী দেওয়ার জন্য নিজে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন কিনা?"কাযী সাহেব বললেন"হা প্রয়োজন"।খলীফা বললেন,"তোমাকে এই দলিলে স্বাক্ষর দিতে হুকুম করার সময় তুমি কি দেখেছো যে,আমি এতে দস্তখত করেছি?"।কাযী শায়াবী উত্তর দিলেন,"আমি বুজতে পেরেছি যে,এটা আপনার জানা মতেই লেখা হয়েছে,সে জন্য আমি আপনার মোকাবেলার প্রয়োজন মনে করিনি"।খলীফা বলেন,"এই কারনে আমি তোমাকে কাযীর পথ থেকে বরখাস্ত করলাম।"তারপর কাযীর পদে কাকে নিযুক্ত করা হবে,সে বিষয়ে আমীর ওমরাহের সাথে আলোচনা করে আবু হানিফা,সুফিয়ান,শরীহ,মোশবার প্রমুখ প্রখ্যাত চারজন আলেমকে ডেকে পাঠান।তারা একইসময়ে এবং একই সাথে উপস্থিত হন।পথে ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) বলেন,"আমি তোমাদের একটা সৎ পরামর্শ দিচ্ছি শোন"।তারা বলেন,"আচ্ছা বলুন"।আবু হানিফা বলেন,"আমি কৌশল অবলম্বন করে কাযীর পদ গ্রহন করবোনা,সুফিয়ান পলায়ন করুন,মোশহাব নিজেকে পাগল বলে ভান করুন,আর শরীহ কাযীর পদগ্রহন করুন"।তার এ পরামর্শ মতে সুফিয়ান আত্বগোপন করে একটি নৌকায় নিজেকে লুকিয়ে রাখেন।বাকি তিনজন খলীফার দরবারে হাজির হলে সর্বপ্রথম খলীফা আবু হানিফাকেই এই পদ গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি উত্তরে বলেন,"আমীরুল মুমিনীন,আমি আরবী নই,বরং তাদের গোলাম শ্রেনীর অন্তর্গত।আরবের প্রধানগন কিছুতেই আমার হুকুম মানতে বাধ্য হবেননা"।জাফর বারমেকী নামক একজন আমীর সেখানে উপস্থিত ছিলেন।তিনি বলেন,"বংশের সাথে এই পদের কি সম্পর্ক?বরং ইলমের সাথেই এর সম্পর্ক"।আবু হানিফা(রহঃ) আবার বলেন,"আমি এই পদের উপযুক্ত নই।আর যদি মিথ্যা বলি মনে করেন,তাহলে মিথ্যাবাদীকে কখনো এই উচ্চ পদে নিয়োগ করা উচিত নয়।আপনি বর্তমানে খলীফা,আপনার প্রতিনিধি মিথ্যাবাদী হওয়াও ঠিক নয়।কারন প্রানদন্ড ইত্যাদি গুরুতর ব্যপারে তার উপর আপনার নির্ভর ও বিশ্বাস করতে হবে"।এ কথা বলে ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) মুক্তি পেলেন।তারপর মোশয়াব এগিয়ে গিয়ে খলীফার হাতধরে বললেন,"আপনি কেমন আছেন?আপনার পরিবারের সবাই কেমন আছেন?"খলীফা তার আচরন দেখে তাকে পাগল মনে করে বের করে দিতে আদেশ দিলেন।তারপর শরীহকে ডেকে আনলে তিনি বললেন,"আমি একজন পাগল ও আমার মাথা দুর্বল"।খলীফা বলেন,"তারজন্য চিকিৎসা করুন,তাহলে বুদ্ধি মজবুত হবে"।শেষ পর্যন্ত শরীহকেই কাযীর পদে নিযুক্ত করা হয়।কাযীর পদ গ্রহন না করার কারন এটাই ছিল যে,ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) এবং তখনকার আলেমগন আযাদী কামনা করতেন।হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেন,"যাকে কাযী নির্বাচিত করা গিয়েছে।ছুরি দ্বারা তাকে কতল করা হয়েছে।"হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর নসীহত তিদের অন্তরে জেগেছিল।প্রানদন্ডাদি-ফৌজদারি বিষয়ক গুরুতর মামলায় কাযীকেই আদেশ দিতে হতো।এজন্য আল্লাহওয়ালা লোক সহজে এ পদ গ্রহন করতেননা।বর্নিত আছে,একবার কিছু বালক বল খেলছিল।কাছেই ইমাম সাহেবের মজলিশ বসেছিল।ঘটনাক্রমে একবার বলটি মজলিশের মধ্যে এসে পড়ে।বালকদের কেউ সভার মধ্য হতে বলটি নিতে এতে সাহস করলো না।একটি বালক বললো,"এটা অতি সাধারন কাজ,আমি বলটি আনছি"।এ বলে সে বেআদবের মত সভারমধ্য হতে বলটি নিয়ে আসে।ইমাম সাহেব ছেলেটির বেআদবি দেখে বলেন,"হয়ত এ বালকটি হারামজাদা হবে"।পরে লোকে খোজ নিয়ে জানতে পারে যে,বাস্তবিকই বালকটি হারামজাদা।লোকে ইমাম সাহেবকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলো,"ইমাম সাহেব,আপনি কিভাবে বুজতে পারলেন?"।তিনি বলেন,"যদি সে হারামজাদা না হতো তবে লজ্জা থাকে এতটুকু বেয়াদবি করতে বাধা দিত।মাননীয় বৃদ্ধ ও মুরুব্বীদের সামনে কখনো বেআদবি করতে সাহস করতো না"।
একব্যাক্তি ইমাম সাহেবের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নেয়।যে গ্রামে সে বাস করতো,ঘটনাক্রমে ইমাম সাহেবের একজন ছাত্র মারা যায়।ইমাম সাহেব তার জানাজা পড়ার জন্য সেখানে যান।তখন খুব রৌদ্র ছিল।সেখানে তার ঋনগ্রস্থ ব্যাক্তির দালানের দেয়ালের ছায়া ছাড়া কোন ছায়ার ব্যবস্থা ছিল না।লোকে তাকে বললো,"আপনি এই ছায়ায় কিছুক্ষন বিশ্রাম করুন।"তিনি বললেন,"না,কেননা,দেয়ালের মালিকের ছাদ থেকে কিছু উপকার গ্রহন করা আমার জন্য ঠিক নয়।হযরত(সাঃ) বলেছেন,"ঋনস্বরূপ কাউকে কিছু দিয়ে তা থেকে কোন উপকার গ্রহন করোনা।"অতএব আমি যদি কিছু উপকার গ্রহন করি,তবে তা সুদের সমতুল্য বলে গন্য হবে।"
দাউদ তায়ী(রহঃ) বলেন,"আমিশবিশ বছর যাবত ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) এর খিদমতে ছিলাম।সবসময় তার উপর আমার নজর ছিল।তিনি কখনো প্রকাশ্যে বা গোপনে খালি মাথায় বসতেননা।পরিশ্রমের কষ্ট দূর করার জন্য কখনো পা ছড়িয়ে বসতেননা।একবার আমি বললাম,"ইমাম সাহেব,যেখানে কেউ নেই এরূপ জায়গায় পা ছড়িয়ে বসলে তাতে দোষ কি?"তিনি বললেন,"তেমন জায়াগায়ও আল্লাহপাকের সাথে আদব রক্ষা করা শ্রেয়।"
একবার ইমাম সাহেব কোন পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন।সে পথে একটি বালককে কাদাময় স্থান দিয়ে যেতে দেখে তিনি বলেন,"বাছা,সাবধানে যাও যেন পা পিছলিয়ে না যায়।"বালকটি উত্তর দিল,"আমার পড়া সহজ।আমি যদি পড়ি,তাহলে একাই পড়বো।কিন্তু আপনি সাবধানে চলবেন,কেননা আপনি পড়ে গেলে আপনার তাবেদার সব মুসলমানই পড়ে যাবে এবং তাদের উঠা অত্যন্ত কষ্টকর হবে"।বালকের এরকম জ্ঞানগর্ভ কথায় ইমাম সাহেব তাজ্জব হলেন এবং কাদতে কাদতে নিজ মুরিদগনকে বললেন,"সাবধান,যদি তোমাদের মনে কোন মাসাআলায় সন্দেহ উপস্থিত হয় এবং কোন দলীল না পাও;তাহলে সে মাসআলায় আমার মতামত অনুসারী থেকেও কিন্তু তত্বের অনুসন্ধান থেকে বিরত থাকবেনা।এটাই পূর্ন সুবিচারের লক্ষন"।এ কারনে ইমাম আবু ইউসুফ(রহঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ(রহঃ) তার ছাত্র হয়েও বহু মাসআলায় তার বিরোধিতা করেছেন।
একবার ইমাম সাহেব শহরের গোসলখানায় গিয়ে এক ব্যাক্তিকে উলঙ্গ দেখতে পান।কেউ বললো,"সে ফাসিক,কেউ বললো সে কাফের"।ইমাম সাহেব তাকে দেখা মাত্রই চোখ বন্ধ করলে লোকটি তখন জিজ্ঞেস করলো,"ইমাম সাহেব কবে থেকে আপনার চোখের জ্যোতি গিয়েছে?"।তিনি বলেন,"যেদিন থেকে তোমার লজ্জা গিয়েছে"।একবার ইমাম সাহেব বাজারে যাচ্ছিলেন খুব সামান্য পরিমান কাদামাটি হঠাৎ তার জামায় লেগে যাওয়াতে তিনি তখনই নদীতে গিয়ে কাদা ধুয়ে ফেলেন।লোকে জিজ্ঞেস করলো,"ইমাম সাহেব,আপনি যে নির্দিষ্ট পরিমান নাপাক জায়েয রেখেছেন তা তো তার অনেক কম,তবুও কেন তা ধুচ্ছেন?"তিনি বলেন,"হা,ওটা ফতওয়া,আর এটা তাকওয়া"।
দাউদ তায়ী(রহঃ) খলীফার পদ পেয়ে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন,"এখন আমার কি করা উচিত?ইমাম সাহেব বলেন,"এখন ইলম অনুসারে আমল করো;কেননা যে ইলম অনুসারে কাজ করেনা,তার দেহ প্রানশূন্য দেহের মত"।
তখনকার খলীফা একরাত্রে আযরাঈল(আঃ) কে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন,"আমার আয়ু কতকাল বাকী আছে?"আযরাইল(আঃ) পাচ আঙ্গুলের প্রতি ইশারা করেন।খলীফা অনেক আলেমকে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করেন,কিন্তু কেউ পরিষ্কারভাবে এর অর্থ অনুধাবন করতে পারেননি।তারপর তিনি ইমাম সাহেবকে ঢেকে এর ব্যাখ্যা করতে বললেন।তিনি বলেন"পাচ আঙ্গুলি পাচ বিষয়ের জ্ঞান বুজায়।অর্থাৎ এ পাচ বিষয়ে জানা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নেই।যথাঃআল্লাহপাক কুরআন মাজীদের বর্ননা করেন,অর্থাৎ-
(১)নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে রয়েছে হিকমতের জ্ঞান।
(২)কখন বৃষ্টি হবে তার জ্ঞান।
(৩)জরায়ুতে কি ভ্রন আছে তিনিই জানেন।
(৪)কাল কি হবে কেউ জানেনা;কেবল তিনিই জানেন।
(৫)কোন স্থানে তার মৃত্যু হবে তিনিই জানেন।নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান।(তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এগুলো তাকে জানাতে পারেন)।
আল্লাহ ছাড়া এ পাচ বিষয়ের জ্ঞান কারো নেই।আপনার জীবন আর কতদিন আছে,তিনিই জানেন।আযরাঈল(আঃ) পাচ আঙ্গুলের ইশারার অর্থ এটাই"।
শেখ আবু আলী(রহঃ) বলেন,"একরাত্রে আমি হযরত(সাঃ) সময়কার মুয়াজজিন বিলালের(রাঃ) মাজারের পাশে শুয়ে ছিলাম।স্বপ্নে দেখি,আমি যেন মক্কা শরীফে আছি এবং হযরত(সাঃ) কোন একশিশুকে কোলে রাখার ন্যায় এক বৃদ্ধকে কোলে করে বনি শায়বা দরজা দিয়ে বের হলেন।আমি দৌড়ে এসে ভাবছিলাম,এ বৃদ্ধ লোকটি কে?রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,"ইনিই মুসলমানদের নেতা ইমাম আবু হানিফা।"
ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) প্রতি রাতে তিনশত রাকআত নামায পড়তেন।একবার তিনি একপথ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনলেন,এক স্ত্রীলোক অন্য এক স্ত্রীলোককে বললো,"ইমাম সাহেব প্রতিরাতে পাচশত রাকআত নামায পড়েন।"ইমাম সাহেব একথা শুনে সংকল্প করেন,প্রতি রাত্রে আমিও পাচশত রাকআত নামায পড়বো,তাহলে স্ত্রীলোকটি মিথ্যাবাদিনী হবেনা।"অন্য একদিন শুনেন বালকেরা পরস্পর বলাবলি করছে"ইমাম সাহেব প্রতিরাতে একহাজার রাকআত নামায পড়েন।"ইমাম সাহেব তখন থেকে প্রতিরাতে হাজার রাকআত করে নামায পড়া আরম্ভ শুরু করলেন।একদিন তার একছাত্র বলেন"হুযুর,লোকে বলাবলি করে করেযে আপনি সারারাত জেগে নামায পড়েন।"।সেদিন থেকে ইমাম সাহেব রাত্রিতে আর শুতেননা।যেহেতু আল্লাহতায়ালা বলেছেন,"অনেক লোক আছে যে,তারা যা করেনি,তার তারিফ করতে ভালবাসে।সুতরাং এখন থেকে আমি আর রাতে শুবোনা।তাহলে যারা মিথ্যা তারিফ শুনতে ভালবাসে,আমি তাদের অন্তরভুক্ত হবনা"।তখন থেকে ইমাম সাহেব ত্রিশবছর ইশার নামাযের ওযু দিয়েই ফযরের নামায পড়েছেন।নামায পড়তে পড়তে তার হাটুর উপরিভাগ উটের হাটুর মত শক্ত হয়ে গিয়েছিল।
ইমাম সাহেব একবার একধনী ব্যাক্তিকে তার ধনের জন্য যথেষ্ট সম্মান করেছিলেন।পরে মনে মনে দুঃখিত হয়ে একহাজার বার কুরআনমজিদ খতম করে আল্লাহর দরবারে তওবা করেন।কখনও তিনি ৪০ বার কুরআনশরীফ খতম করে কঠিন মাসআলার মীমাংসা করেছেন।
কুফার জৈনিক ধনী ব্যাক্তি হযরত যুননূরাইনকে(রহঃ) হিংসাবশতঃইহুদী বলতো।সে বললো,"আপনি মুসলমানদের ইমাম হয়েও একজন মুসলমানের মেয়েকে ইহুদীর হাতে দিতে চাচ্ছেন?আমি তাতে কখনো রাজি হবোনা"।আবু হানীফা(রহঃ) বলেন,"সুবহানাল্লাহ,তুমি তোমার মেয়ে ইহুদীর সাথে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছোনা অথচ হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) একজন ইহুদীর হাতে তার দুই মেয়েকে সোপর্দ করেছিলেন"।লোকটি ইমাম সাহেবের কথার মর্ম বুঝতে পেরে লজ্জিত হয় এবং সাথে সাথে তার মনোভাবের পরিবর্তন হয়।তখনই সে ইমাম সাহেবের হাত ধরে তওবা করে।
নওফেল ইবনে হাইয়ান(রহঃ) বলেন,"ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) এর ইনতিকালের পর আমি এক রাতে স্বপ্নে দেখি কিয়ামত সংঘটিত হচ্ছে।সমস্ত লোক হাশরের ময়দানে উপস্থিত এবং মহানবী(সাঃ) হাউজে কাউসারের কাছে দাড়ানো আছেন।ইমাম সাহেব তার পাশেই দাড়ানো।আমি ইমাম সাহেবকে সালাম দিয়ে বললাম,"আমাকে কিছু পানি পান করতেদিন।"ইমাম সাহেব বলেন,"যে পর্যন্ত আমাকে হযরত(সাঃ) হুকুম না করবেন,সে পর্যন্ত আমি তোমাকে পানি দিতে পারবোনা"।তারপর হযরত(সাঃ) আমাকে পানি দিতে আদেশ দেন।ইমাম সাহেব আমাকে এক পেয়ালা পানি দিলেন।আমি ও আমার বন্ধু পানি পান করলাম।কিন্তু পেয়ালা আগের মতো পূর্ন রয়েগেল।"আমি জিজ্ঞেস করলাম,"হযরতের দক্ষিনপাশে এই সুদর্শন পুরুষ কে?"।আবু হানিফা(রহঃ) বলেন,"তিনি হযরত ইবরাহিম(আঃ) এবং বামে হযরত আবু বকর ছিদ্দিক(রাঃ)"।আমি একেককরে সকল বুযুর্গের পরিচয় করলাম এবং ইমাম সাহেব উত্তর দিচ্ছিলেন।আমি ১৭ব্যাক্তির নাম আঙ্গুলের করে গুনলাম।জেগে দেখি,আমার আঙ্গুলটি করের ১৭দাগেই রয়েছে"।
ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) এর অন্য নাম নোমান।৭০বছর বয়সে ১৫০হিজরীতে খলীফা মনসুর কর্তৃক বন্দীদশায় জেলখানাতেই তিনি ইনতেকাল করেন।রমজান মাসে তিনি ৬১বার কুরআনশরীফ খতম করতেন,অর্থাৎ খতমে তারাবিহ নামাযে একবার ও দৈনিক দুখতম করে ৬০খতম করতেন।
ইয়াহিয়া রাযী(রহঃ) বলেন,"আমি একরাতে হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) কে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,"হযরত(সাঃ),আমি কোথায় আপনাকে তালাশ করবো?।হযরত(সাঃ) জবাবে বলেন,আবু হানিফার ইলম ও জ্ঞানরাশির মধ্যে"।
কিতাবঃতাযকেরাতুল আউলিয়া।
লেখকঃহযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আত্তার(রহঃ)।
Comments
Post a Comment