আহলে বাইত কারা?

আহলে বাইত কারা ?
====🔹====✍️ইমরান বিন বদরী।

নাহমাদুহু ওয়া'নুসাল্লি আ'লা রাসুলীহিল কারীম আম্মাবা'দ।
আজ কিছু কঠিন কথা বলবো এবং কথাগুলি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কারো চরিত্রের সাথে মিলে লেগে অধমের কিছুই করার নেই। আশাকরি সত্যকে উপলব্ধি করার লক্ষ্যে বক্রতা পরিহার করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।

সৈয়্যদ বংশ বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ আসলে কারা সে বিষয়ে অবগত হওয়া খুবই জরুরী। আজকের দিনে প্রকৃত সৈয়্যদ হওয়ার প্রয়োজনীয়তায় কারো তেমন মাথাব্যথা নেই বরং সৈয়্যদ দাবী করাটাই এখন মূখ্য। এমন অনাকাঙ্খিত অগণিত সৈয়্যদদের দাবীর কারণে সেদিন আমির হামজা নামের একজন বক্তা তিরস্কার করে ইসলামের দুশমন আবু লাহাব'কেও সৈয়্যদ বলা শুরু করে দিলো। সে না-হয় একজন অমুসলিমকে তার মূর্খতার কারণে এসব বলেছে কিন্তু বাস্তবতা তো সেটাই যে আজকের দিনে আমাদের সমাজটি 'অ' সৈয়্যদে ভরেগেছে। "ওয়াল্লাহে বিল্লাহ " অন্তর্যামী মহান আল্লাহ পাক'কে আমি সাক্ষ্য রেখেই বলছি, আমি কারো প্রতি আক্রোশ কিংবা হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে বা কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে নয় বরং আমার রাসুলে পাকের এই সম্মানিত বংশ নিয়ে মিথ্যাচার থেকে মুক্ত থাকার জন্য আজকে আমার এ লেখা।

➡️ এবার আসুন মূল আলোচনায়। পিতার নাম সৈয়্যদ হলে যে পরবর্তী প্রজন্মও সৈয়্যদ বংশ হয়ে যাবে এমনত হওয়ার কথা নয়। বা পূর্ব পুরুষদের কেউ একজন আলিম কিংবা খোদাভীরু ছিলেন বলে উনার পরবর্তী প্রজন্মও সৈয়্যদ বংশ হয়ে যাবে তাও তো নয়! প্রকৃত আওলাদে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলছি, আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লম না হয়ে আওলাদে রাসুল দাবী করতে যাওয়া একধরনের গোমরাহি ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু নাম লাগিয়ে যদি সৈয়্যদ হওয়া যেত তো আমিও সৈয়্যদ হওয়ার চেষ্টা করতাম। নামের পর নাম লাগিয়ে বংশগত মিথ্যে শাজরা তৈরী করে কোন রকম রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছানোর অপচেষ্টা করলেই সৈয়্যদ হওয়া যায়না। সম্মানিত এ বংশটি আমার রাসুলে পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় বংশ। সৈয়্যদরা নিজেদেরকে প্রকাশে নয় গোপনে বিশ্বাসী। যে রক্তধারায় রাসুলে পাকের পবিত্র রক্তের বন্ধন রয়েছে সেটি উম্মতের জন্য নিয়ামত স্বরূপ। আমি ইসলাম পূর্ব আমার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অর্থাৎ কুরাইশ বংশের কথা বলছিনা, আমি বলছি সেই পবিত্র বংশের কথা যাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্ট। এমন একটি সম্মানিত বংশের না হয়েও নিজেকে সৈয়্যদ দাবীকরে মিথ্যাচার করলে কাল কিয়ামতের দিন আমার রাসুলের সামনে উম্মত হিসেবে মুখ দেখাবেন কি করে?

বর্তমানে আওলাদে রাসুল দাবী করার লোকের অভাব নেই বলে বিষয়টাকে এখন কিছু দুষ্টলোক হাসির খোরাকে পরিণত করেছে । আর করবেইনা বা কেন? যেহারে সৈয়্যদ দাবীকারী বাড়ছে তাতে আগামীতে দেশে কেবল এই একটি বংশের লোকজনই দেখা যাবে।অপ্রিয় সত্য যে আমি এখনো আমার পূর্ববর্তী তিন থেকে চার পুরুষের নাম ঠিকমত জানিনা এবং তারা কি আদৌ আরব থেকে এসেছে নাকি অতীতেই এদেশীয় ভিন্নধর্মাবলম্বী ছিলেন তাও জানিনা, অথচ আমিই নিজেকে বর্তমানে সৈয়দ দাবী করছি- কি আশ্চর্য!। উপমহাদেশের কলম সম্রাট আলা হজরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁ ফাজেলে ব্রেলভী (রহঃ) একজন সৈয়্যদ বংশের পালকি বহনকারীকে কিভাবে সম্মান দিয়েছেন আশাকরি ঘটনাটি সবার জানা আছে। আমরাও চাই প্রকৃত আওলাদে রাসুল দের ঠিক সেভাবেই সম্মান দিতে।

➡️আসুন আহলে বাইত কারা ছিলেন তাদের পরিচয়ে নিম্নোক্ত হাদিস শরীফটি দেখি। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন-

خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ، مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ، فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ، ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا، ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ قَالَ: ” {إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا}
একদা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে কালো পশমের ইয়ামেনী চাদর গায়ে দিয়ে বের হলেন। অত:পর হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রাসুলে পাকের কাছে আসলে, তিনি তাঁকে তাঁর চাদরে প্রবেশ করালেন। তারপর ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলে, তাঁকেও তিনি চাদরাবৃত করেন। এরপর হযরত মা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আসলে, তাঁকেও তিনি স্বীয় চাদরে প্রবেশ করালেন। সর্বশেষ হযরত আলী এ মর্তুজা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকেও স্বীয় চাদরে প্রবেশ করিয়ে পবিত্র কালামের এ আয়াতটুকু তেলাওয়াত করেন-
إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“হে আহলে বায়ত, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে, তোমাদেরকে পবিত্রই করতে চান।”(সূরা আহযাব,৩৩ (সহীহ মুসলিম, বৈরুত ৬৪১৪)

➡️আহলে বাইতে বলতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নিকটাত্মীয়গণকে বুঝানো হয়। আহলে বাইতের সম্মান ও মর্যাদার কথা এই স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা অসম্ভব। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই নবীর আহলে বাইতেক পুতপবিত্র করার কথা ঘোষণা করেছেন। রহমাতুল্লিল আলামীনের এ নিকটাত্মীয়দের প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى وَمَنْ يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا
হে হাবিব! আপনি বলে দিন, আমি দ্বীন প্রচারের জন্যে তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না; কিন্তু (আমার) নিকটাত্মীয়দের ভালোবাসা চাই, আর যে কেউ (তাদেরকে ভালবাসার মাধ্যমে) একটি সৎকাজ করবে, আমি তাঁদের সৎকাজের সওয়ার বৃদ্ধি করে দিব।” (সূরা শূরা, ২৩)

প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং তাদের অনুসরণই সত্যের পথে তথা সিরাতাল মুস্তাকিমে থাকার অন্যতম মাধ্যম। হেদায়াতের উৎসে আমরা জানি মুসলিম উম্মাহর গাইড লাইন হিসেবে রয়েছে পবিত্র কূরআন এবং হাদিস শরীফ, আর অনুসরণের জন্য রয়েছে আহলে বাইতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

➡️হযরত আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি পবিত্র ক্বাবা ঘরের দরজা হাত দিয়ে ধরা অবস্থায় বলেন, আমি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বাইতের দৃষ্টান্ত হযরত নুহ আলাহিস সালামের জাহাজের মত । যে এতে আরোহন করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ)

➡️হাদীস শরীফে আহলে বাইতের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে অনেক বর্ণনা এসেছে।এছাড়াও ইসলামকে পরিপূর্ণতার ঘোষণার দিনে আমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন,
يا ايها الناس انـى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله و عترتى اهل بيتي
হযরত জাবির রাদিঅাল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, আমি আরাফার দিনে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার কাসওয়া নামক উটনীর পিঠে বসা অবস্থায় সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলতে শুনেছি-হে মানবমণ্ডলী! "আমি তোমাদের কাছে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি তোমরা তা ধারণ করলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত"।(তিরমিজী)

➡️️আহলে বাইতের মর্যদা ও সম্মানের ব্যাপারে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন
لقرابة رسول الله صلى الله عليه وسلم أحب إلى أن اصل من قرابتي
যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর সত্ত্বার কসম! আমার নিকট আমার বংশধর ও আত্মীয়গণের অপেক্ষায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর ও আত্মীয়ের প্রতি সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অধিক প্রিয়।

💠 এখন আপনিই ভেবে দেখুন এমন একটি বংশের না হয়ে যদি আপনি নিজেকে আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাবী করেন তো কতটাই আপনি মুসলিম মিল্লাত কে ধোঁকা দিচ্ছেন। অস্থায়ী দুনিয়ার লোভে অপেক্ষমান পরকালীন চিন্তা থেকে মুক্ত থাকাটা কোন মুমিন বান্দার কাজ নয়। পরিশেষে বলবো
💚 নবী বংশ'ই হোক আমাদের প্রেমের অংশ  💚

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।