হক ভান্ডারীর সংক্ষিপ্ত জিবনী।

হক ভাণ্ডারীর সংক্ষিপ্ত জীবনী
__________________________
#জন্ম-
বিশ্ব অলি শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কুদ্দাসিররুহুল আযিয ১০ পৌষ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ, ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৮ খৃষ্টাব্দ, ১২ রজব ১৩৪৭ হিজরি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত ফটিকছড়ি থানার মাইজভান্ডার দরবার শরীফ নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের সাত দিনের মাথায় তাঁর নাম সৈয়দ বদিউর রহমান রাখা হলেও তাঁর পিতা সৈয়দ দেলাওয়ার হোসাইন স্বপ্নে যোগে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী কুদ্দাসিররুহুল আযিযের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে নাম বদলে রাখেন সৈয়দ জিয়াউল হক। তাঁর মাতা সৈয়দা সাজেদা খাতুন ছিলেন বাবা ভান্ডারীর দ্বিতীয় কন্যা।

#শিক্ষা_জীবন-
প্রথমদিকে গৃহ শিক্ষক মৌলভী মোজাম্মেল হকের নিকট তিনি আরবী বর্ণমালা ও কলমা শিক্ষা লাভ করেন। এরপর মাইজভান্ডার আহমদীয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় তিনি তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করেন নানুপুর আবু সোবহান হাই স্কুলে। তৎপরবর্তীতে নবম ও দশম শ্রেনীর পাঠ শেষে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল হতে এ্যান্ট্রেন্স বা প্রবেশিকা পরিক্ষায় উত্তীর্ণ্ হলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোস ডিগ্রী কলেজে বি.এ. বা স্নাতক ডিগ্রী সমাপনী পরীক্ষার তৃতীয় দিনে হঠাৎ তাঁর স্বাভাবিক ভাবের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। তিনি আধ্যাত্মিক কিছু অলৌকিক অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হতে থাকলে অবশেষে সাদা খাতা জমা দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিত্যাগ করে সরাসরি মাইজভান্ডার প্রত্যাগমন করেন। এ ছিল তাঁর জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ প্রহর।

#সুফি_মতাদর্শ-
একথা সর্বজন বিদিত যে, উপরোক্ত ঘটনার পর তিনি বোয়ালখালী হতে মাইজভান্ডারে ফিরে এসে একাগ্রচিত্তে আধ্যত্ম সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর জীবন আধ্যাত্মিক রহস্যমন্ডিত ছুফিত্বে বিকশিত হয়। প্রকাশনাদি হতে জানাযায়, ছুফি তাত্ত্বিক সাধনাকালে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে তিনি দিনের পর দিন অনাহারে নির্ঘুম অবস্থায় কাটিয়ে দিতেন। কখনো তীব্র শীতে পুকুরের কনকনে ঠান্ডা জলে দিন-রাত একাধারে ডুবে থাকতেন। আবার কখনো সকল প্রকার জৈবনিক ক্রিয়া কলাপ মুক্ত থেকে ঘরের দরজা বন্ধ অবস্থায় আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে কাটিয়ে দিতেন দিনের পর দিন।
সন্তানের এমতাবস্থায় তাঁর পিতা যখন খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তখন তাকে স্বপ্নযোগে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী আদেশ করেন, ‘কেন তুমি এত উদ্বিগ্ন? যাও আমার লম্বা সবুজ জুব্বাটি(আলখেল্লা) তাকে পরিয়ে দাও’। তিনি সহসা গিয়ে সন্তানকে জুব্বাটি পরিয়ে দেন। এ ঘটনার পর হতে ধীর-স্থির হয়ে যাওয়ার মত সৈয়দ জিয়াউল হকের প্রাত্যহিক আচরনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাঁর জীবনী লেখকগণ তাঁকে মজ্জুবে ছালেক দরবেশ (الصّوفي المجذوب السالك‎) বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি কখনো সমূদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে, গহীন জঙ্গলে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন। তাঁর বহুল আলোচিত রহস্যময় অলৌকিক ঘটনাবহুল জীবন চিরস্মরণীয়। তিনি তরিক্বার ধারাবাহিকতায় তাঁর পীর স্বীয় পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। তাঁর পীরগত শাজরা ছোট মৌলানা সৈয়দ আমিনুল হক ওয়াছেল মাইজভান্ডারী হয়ে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর সাথে মিলিত হয়ে আব্দুল কাদের জিলানী ও আলী মারফত নবী মোহাম্মদ পর্যন্ত ব্যাপৃত।

#মৃত্যু-
তিনি ২৬ আশ্বিন ১৩৯৫ বঙ্গাব্ধ, ১৩ অক্টোবর ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দ, হিজরী সনের ০১ রবিউল আউয়াল রাত ১২টা ২৭ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন
তাঁর সমাধির উপর স্থপতি আলমগীর কবিরের নকশায় শাপলা ফুলের আঙ্গিকে নতুন একটি মাযার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা স্থাপত্য শৈলীর আঙ্গিকে একটি আধুনিক স্থাপনা হিসাবে নানা প্রকাশনায় প্রশংসিত হতে দেখা যায়। প্রতি বছর তাঁর ওরশে লক্ষ লক্ষ আশেক-ভক্তের সমাগম ঘটে।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।