ওয়াযে হাশেমী।

ওয়াযে হাশেমী ---পর্ব ১
___________________________________________
আউলিয়ায়ে কেরামের সংস্পর্শের গুরুত্ব
____________________________________________

গাওসুল আজম জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু'র স্বরণার্থে আয়োজিত আজকের এই নূরানী ঈমানী মাহফিলের সম্মানিত সভাপতি,ফয়েজ লেক দরবার শরীফের সুযোগ্য মুরশিদে বরহক হযরত মাওলানা বেলায়ত হোসাইন ছাহেব দামাত বারকাতুহুমুল কুদসিয়াহ্,আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়েত রওনক,
যাঁর জীবন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের খেদমতের জন্য নিবেদিত। প্রকৃত গবেষক তাঁরাই যাঁরা আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল, দ্বীন ধর্ম  শরীয়ত নিয়ে গবেষণা করেন।তুমি যদি কোন অলীর কদমের ধুলো নিয়ে গবেষণা করতে থাক,তাহলে আগের পরের কুরআন হাদীসের জ্ঞান তোমার কাছে এসে যাবে।

অর্থঃযাতে তুমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখতে পাও।
আলহাজ্ব সুফী মিজানুর রহমান সাহেবও আল্লামা আব্দুস সালাম ইছাপুরী রহঃ- এর ফয়েজে ধন্য একজন গবেষক। তাঁর আব্বাজানও একজন খাঁটি নেককার পরহিজগার, যাঁকে দেখলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে যেত। তিনি গাউছে পাকের দরবারে শুধু যাননি, অনেক বছর ওখানে ছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাসে, খাজা বাবার দরকারে, হেনেম শরীফে, মসজিদে নববীতে বহুবার এতেকাফ থেকে ছিলেন। যারা মদিনায়ে পাকে যাওয়া, আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারে যাওয়াকে শিরিক বিদআত হারাম বলেছে, তাদের সাথে অনেক মুনাজারা, তর্ক- বিতর্ক হঢেছে।তারা আরও বলে অলী বুযর্গের মাযারে যাওয়া হত্যার, যিনার গুনাহ্ থেকেও মারাত্বক ( নাউজুবিল্লাহ)।
আমি যেই আয়াতে করিমা তেলাওয়াত করেছি তার মধ্যে আল্লাহ্ পাক বলেছেন আমি আল্লাহ্ নিরাকার। এমন এক দল ছিল যারা আল্লাহর আকার মানত, তাদেরকে মুজাচ্ছামা বলা হতো। গাউসুল আজম জিলানী তাদের সাথে মুনাজারা করে পরাজিত করে চিরতরে তাদেরকে দাফন করে দিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে আবার এরা বের হয়েছে। এরা বলেছে না দেখে কিভাবে এবাদত করবে। হিন্দুরা এমন বলে যে, এটা সামনে থাকতে হবে।
তাদের পীর বলেছে (ঢাকায়)  আমি আল্লাহকে দেখেছি। একটা  সুন্দর যুবকের ন্যায়, যার দাঁড় নেই। (নাউজুবিল্লাহ)।
এটা বলেছে দেওয়ানবাগী পীর। ঈমানদারের বিশ্বাস আল্লাহর কোন আকার,  স্হান, ডান বাম, উপর নীচ কিছুই নেই। বাতিলরা বলে, আল্লামা নাঈমী ছাহেব,  আল্লামা জালাল ছাহেব তথা সুন্নি আলরমগণ নবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর তারিফ করতে করতে আল্লাহর উপর নিয়ে যায়। অথচ আল্লাহর কোন উপর নীচ নেই, কোন স্হান নেই, কোন আকৃতি নেই। নিরাকার বে মেছাল, দৃষ্টান্তহীন আল্লাহকে পাবার জন্য কোন দিকে যাবে সবকিছুর একটা দিক আছে। আল্ল্হর যখন দিক নেই, যাবেন কোন দিকে?
কোথায় গেলে আল্লাহকে পাওয়া যাবে। আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তোমরা যদি আমাকে পেতে চাও, নৈকট্য চাও আমি আল্লাহর সাথে যোগাযপকরতে চাও আমার মাহবুবের পিছনে পিছনে যাও। আমার মাহবুব নবি যেদিকে সেদিকে যাও সে দিকে গেলে আমি আল্লাহ্ তোমাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহন করব। আমাকে পেতে চাইলে আমার নবি যেখানে ওইখানে যাও।
সিঁড়ি ছাড়া দশতলা বিশতলা উঠা যেমন সম্ভব নয়, মদিনা ছাড়া আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়।
ঈমানদার আল্লাহকে পেতে চাইলে নবিমুখী হতে হবে। আল্লাহ্ বলেছেন নবিমুখী হওয়া তোমাদের জন্যে বড় কঠিন, নবির দুয়ারে পৌঁছা,  নবির সাথে যোগাযোগ করা বড় কঠিন।কারণ শয়তান সর্বদা ধোকানদেয়ার জন্য তৎপর।
গাইসে পাকের ছোটবেলার কথা, গাউসে পাক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেছেন আমাকে আমার খেলার সাথিরা খেলতে যাবার জন্য ডাকল, সাথে সাথে গায়েব থেকে অন্য একটি মধুর আওয়াজ শুনলাম। বন্ধুদের সাথে তো খেলতে গেলামনা, বরং বাড়ীর দিকে আমার মায়ের কাছে গেলাম, দালানের ছাদে উঠলাম, কিন্তু ওই আওয়াজ বারবার শুনতেছি (আমার দিকে এসো হে মোবারক ছেলে)।  আমার মন ছটফট করতেছে। এই মধুর আওয়াজ কে করতেছেন? ছাদে উঠলাম, ছাদে যখন উঠলাম দেখতে পেলাম হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক সাদা কাপড় পরা ইহরামেন কাপড় পরা, আওয়াজ দিচ্ছে
  " লাব্বাইকা লাব্বাইকা"।
দেখতে পেলাম খানায়ে কাবা আল্লাহর ঘর। বাইকুল্লাহর চতুর্পার্শ্বে তাওয়াফ করতেছে এবং লাব্বাইকা আওয়াজ দিচ্ছে,  অনেক্ষন শুনলাম। তারপর মায়ের কাছে গেলাম। মাকে বললাম, মা আজকে এ ঘটনা দেখলাম, মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, মোবারক ছেলে ভাগ্যবান তুমি। জীলান শহর থেকে মক্কা শরীফ বাইতুল্লাহ শরীফ দেখতে পাচ্ছো। মা উত্তর দিলেন, আমি দেখতেছি যে, এমন একটি সময় আমবর যখন পৃথিবীর সকল লোক তোমার দিকে ঝুঁখে পড়বে। সমগ্র সৃষ্টি জগত তোমার নামে সাড়া দিবে। কিন্তু ওই সময় আমি পাবনা। এরপর মায়ের কাছে অনুমতি চাইলেন, মা! দেশের পড়া শেষ। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাই। মা অনুমতি দিলেন। আপনারা আমরা কতক্ষণ বসে থাকতে পারি। শবে কদরে সারা রাত্রি ইবাদত করি, শবে বরাতে সারা রাত্রি ইবাদত করি, কয় রাকাত পড়েছেন, বার রাকাত পড়েছেন, কোন সূরা ইখলাস বা সূরা কদর, কত ঘুরাঘুরি কত চা-নাস্তা খেয়েছেন। শুধু শবে বরাত শবে কদর নয়, চল্লিশ বছর এশার অযু দিয়ে ফজরের নাম্জ পড়েছেন গাউসে পাক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
প্রত্যেক রাত্রিতে দুই রাকাত নফল নামাজে ৩০ পারা কোরআন মাজিদ খতম করেছেন।

এটা তো গাউসে পাকের কথা বলছি। খাজা গরীবে নেওয়াজ কেমন ছিলেন, বাপের উত্তরাধিকার সূত্রে যা পেয়েছিলেনসব দান করেছিলেন। সদকা করে দিয়েছেন। তারপরে পাহাড়ের দিকে চলে যাননি। মসজিদের কোনে বসলেন না, প্হ্ড়ের গিহায় বসেননি, বসজিদের কোণে বসে পাহাড়ের গুহায় বসে খোদা পাওয়া যায় না। খোদা পাবার জন্য লাগবে ইলম, খোদা পেতে, নবি বুঝতে, অলি বুঝতে, শরীয়ত বুঝতে, গাউস বুঝতে,  তরিকত বুঝতে, হাক্কীকত বুঝতে ইলম লাগবে। কারণ ইলম ছাড়া খোদা চিনা যায় না।
ইলম ছাড়া খোদা পাওয়া যায় না
শেখ ফরিদ উদ্দিন গণ্জে শকর রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলায়হি হযরত নেজামুদ্দিন মাহবুবে ইলাহির। দরবারে পাকে গেলেন। তারা মামা ভাগিনা ছিলেন, ভাগিনার কাছে গিয়ে বলল, আমাকে নুষ কর। না হবে না।
আহে তোমাকে ইলম শিখতে হবে। ইলমে মারেফত, ইলমে তরিকত,ইলমে সুলুকের সবক নেয়ার আগে তোমাকে ইলমে দ্বীন,  ইলমে শরীয়ত অর্জন করতে হবে। যাও প্র্রথমে ইলমে দ্বীন হাসিল কর।
ইলমে দ্বীন ছাড়া যদি আমি তোমাকে কিছু দিই, তাহলে শয়তান তোমার পিছু লাগবে, শয়তান তোমাকে নিয়ে খেলা করবে। আগে তুমি দ্বীনের ইলম অর্জন কর।সুতরাং খাজা গরীবে নেওয়াজের জীবনীতে পাবেন, কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন ইলমে শরীয়ত অর্জন করার জন্য। তারপরে ইলমে তরিকতের দিকে যাবির জন্য কার কার দরবারে গেছেন। কতগুলো দরবারে গেছেন, তার কোন হিসাব নেই। অবশেষে খাজা ওসমান হারুনী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহির দরবারে গেলেন। তিনি বলেন, আমিতো তোমার অপেক্ষায় আছি, আমার কাছে তোমার আমানত আছে, আমি ওই আমানত বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি। খেলাফত দিলেন, খেলাফত পেয়ে গদীতে বসে যাননি। পীর মুর্শিদের সাথে হজ্জে গেলেন।আল্লাহর ঘরের দুয়ারে গিয়ে পীর মুর্শিদ আপন মুরিদ খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর হাত ধরে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, আল্লাহ্ আমার ফকির মঈনুদ্দিনকে কবুল করুন।আওয়াজ আসল আল্লাহর পক্ষ থেকে,  আমি আল্লাজ্ মুঈনুদ্দিনকে কবুল করলাম। খাজা গরিবে নেওয়াচ রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলায়হি বললেন, আপনিনআমার জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ্ও আমাকে কবুল করলেন, আমি এতে রাজী নই, পীর মুর্শিদ বললেন, তাহলে তুমি কি চাও? কিয়ামত পর্যন্ত আমার নাম যারা নিবে সবাইকে কবুল করতে হবে। সুবহান আল্লাহ্!!
চিশতিয়া তরিকার অনুসারী  নয়, কিয়ামত পর্যন্ত যারা আমার নাম নিবে সকলকে কবুল করতে হবে। তানপরে গেলেন, মদিনা মুনাওয়ারা আল্লাহর মাহবুবের দরবারে রওযায়ে পাকে।মুরিদ পীরকে বললেন, আমি আর কোথাও যাব না, এখানেই থেকে যাব। কিন্তু রওযায়ে পাক থরকে আল্লাহর মাহবুব নির্দেশ দিলেন, তোমার ডিউটি হিন্দুস্তানে ইসলাম প্রচার করা। এভাবে আপনি যদি আলেমের জিবন রিসার্চ করেন, দেখা যাবে তাঁরা দুনিয়া চাননি, আল্লাহকে চেয়েছেন। এখন অনেকে মাযারে যাওয়া শিরক, বেদাত বলতেছে, এরা এগুলো দেখেনা? পুলসিরাত চিনেন, দেখেছেন? দেখেননি।কিন্তু তার উপর ইমান রাখতে হবে। পুলসিরাত সত্য, আল্লাহর নবি,  কুরআন এর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, তেমনি পুলসিরাতের উপরেও বিশ্বাস রাখতে হবে।
পুলসিরাত কি, পুল (সেতু) এমন পুল যা চুলের চেয়েও চিকন, বেহেস্তে যেতে চাইলে পুলসিরাত পার হয়ে যেতে হবে।

★★★তোমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই, যে দোযখের উপর পুলসিরাত অতিক্রম করবে না। আপনার রবের দায়িত্বে এটা অবশ্যই স্হিরকৃত বিষয়। অতপর আমি ভয় সম্পন্নদেরকে উদ্ধার করে নেব এবং যালিমদেরকে তাতে ছেড়ে দেব নতজানু অবস্হায়।
(সীরা মারয়াম, পারা-১৬, আয়াত-৭১-৭২)।

উপায় নেই। বিকল্প পথ নেই পুলসিরাত ছাড়া। আর উহা চুলের চেয়ে বেশি চিকন, তলোয়ানের চেয়েও অধিক ধারালো। সুবহান আল্লাহ্।
দৈর্ঘ কত? ত্রিশ হাজার বছরের সময় লাগবে তা পার হতে।

★★★অন্ধকার পুণ্ঞ্জ রয়েছে, একের পর এক। যখন আপন হাত বের করে তখন তা দেখা যায় বলে মনে হয় না এবং আল্লাহ্ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্য কোথাও আলো নেই।
(সূরা নূর, পারা-১৮, আয়াত-৪০)।
ডান বাম দেখা যাবে না, তা পার হওয়া ছাড়া বেহেস্তে যাওয়া যাবে না। নবির সাথে যোগাযোগ, অলির সাথে খাজা বাবার সাথে যোগাযোগ তরা পুলসিরাত অনায়সে পার হবার জন্য। সুবহান আল্লাহ্।
নবি কি করেন? দলে দলে পুলসিরাতের পাশে উম্মত অস্হির থাকবে, চিন্তা করবে পুলসিরাত কিভাবে পার হবে? নবি তখন তিনবার তিনটা তাকবীর বলবেন, খোদা আমার উম্মত দূর্বল আমার উম্মতকে পার করিয়ে দাও।
তিনবার এটা বলার পর দেখততে পাবে।
পুলসিরাতের এপার থেকে উম্মত ওপারে পৌঁছে গেছে,
আলা হযরত ফরমায়েছেনঃ
★★★আল্লাহ্ আমার উম্মত দূর্বল।  তুমি ( ওহাবি- জামাতিরা) তো নবিকে রাসূলুল্লাহ শ্লোগান দাও নাই। কি শ্লোগান দিয়েছ আমার নেতা বলে। নাউজুবিল্লাহ্।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।