কারবালার ঘটনা, পর্ব-১১,১২,১৩।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব-১১,১২,১৩)।

অবরোধ সৃষ্টি ও পানি বন্ধ।
-------------------------
ইয়াযীদ বাহিনীর মনোভাব এত জঘন্য রূপ ধারণ করল যে, তারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তাঁর প্রিয়জনদের জন্য ফোরাত নদীর পানি বন্ধ করে দিল। প্রায় চার হাজার সৈন্য ফোরাত নদীর তীরে এই কাজে নিয়োজিত করলো। এদের মধ্যে দুই হাজার ছিল ‘স্থল বাহিনী’ আর দুই হাজার ছিল ‘অশ্বারোহী’। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল উনাদেরকে যেন এক ফোঁটা পানিও নিতে দেয়া না হয়। সেমতে পানি বন্ধ করে দিল। ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর তিরাশিজন কাফেলার মধ্যে দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন এবং পর্দানশীন মহিলারাও ছিলেন। তাঁদেরমোকাবিলা করার জন্য বাইশ হাজার সৈন্য এসেছে। কী আশ্চর্য! তিরাশিজনের মোকাবিলায় বাইশ হাজারসৈন্য! আবার এই তিরাশিজনের মধ্যে শিশু ও মহিলা রয়েছে। অথচ এদের মোকাবিলায় যে বাইশ হাজার সৈন্য তারা সবাই যুবক এবং সকল প্রকারের অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত । এরপরও তারা পানি বন্ধ করে দিল। কারণ, তাদের ধারণা হল যে, উনারা যদি পানি পান করে যুদ্ধ করে, তাহলে সম্ভবতঃ আমরা বাইশ হাজার হয়েও কামিয়াব হতে পারবো না। তাই পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা জুলুমের উপর জুলুম ছিল। আফসুস! উনার জন্যেই পানি বন্ধ করে দিল, যিনি সাকিয়ে কাওছার, (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদরের দৌহিত্র । কোন এক উর্দু কবি এ প্রসঙ্গে খুবই সুন্দর একটি কবিতা লিখেছেন যার বাংলা অর্থহাকিমের নির্দেশ ছিল , মানুষ, জীব-জন্তু, বিধর্মী, গরু-ছাগল, পশু-পাখি সবাই এই ফোরাত নদীর পানি পান করবে, তোমরা বাধা দিও না।কিন্তু হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাঃ)-এর এই ছেলে হযরত ইমাম হুসাইনআলাইহিস সালামকে পানি পান করতে দিও না।যেই ফোরাত নদীর পানি সবারই পান করার অনুমতি ছিল, জীব-জন্তু, পশু-পাখি কারো জন্য বাধা ছিল না। কিন্তু সেই ‘ফোরাত নদীর’ পানি পান করা থেকে বাধা দিল সাকিয়ে কাওছার (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রিয় দৌহিত্রকে।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব-১২)।

ইমাম হুসাইন (র:) এর অাকুল অাবেদন
-------------------------
আল্লাহ্! আল্লাহ্! যখন ইমাম
হুসাইন (রাঃ) দেখলেন যে,
পানিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে,
তখন তিনি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে
ইয়াযীদের সৈন্য বাহিনীর নিকট
গেলেন এবং তাদের সামনে
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন।
তিনি (রাঃ) তাদেরকে একান্ত
যুক্তির মাধ্যমে বুঝালেন, ‘জুলুম-
অত্যাচার থেকে বিরত থাকো,
আমাদের রক্ত দ্বারা তোমাদের
হাতকে রঞ্জিত করো না। জেনে
শুনে কোন মু’মিনকে কতল বা
শহীদ করা মানে জাহান্নামকে
নিজের ঠিকানায় পরিণত করা।
আমি হলাম তোমাদের রসূল
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর দৌহিত্র; যার
কালেমা তোমরা পড়। আর এই
মূহুর্তে আমি ছাড়া তোমাদের
রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর অন্য কোন দৌহিত্র
নেই। আর আমার সম্পর্কে তোমরা
ভালভাবে জানো । আমি ঐ
হুসাইন, যার সম্পর্কে রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
“ হাসান-হুসাইন বেহেশ্তের
নওজোয়ানদের সর্দার।” আমি সেই
হুসাইন, যখন নিজ মায়ের কোলে
ক্রন্দন করতাম, তখন আল্লাহ
তায়ালা’র প্রিয় নবী হযরত
মুস্তাফা (ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “ ওগো
ফাতিমা! ওকে কাঁদায়োনা।
কারণ ও কাঁদলে আমার খুবই কষ্ট
হয়। ” দেখ, যখন আপন মায়ের
কোলে আমার কান্নাটা নবীজী
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর জন্য কষ্টদায়ক ছিল,
এখন তোমরা যদি আমাকে ভিন
দেশে কষ্ট দাও এবং আমার রক্ত
দ্বারা তোমাদের হাতকে
রঞ্জিত করো, আমার ছেলে
মেয়েদেরকে শোকাভিভূত করো,
তাহলে চিন্তা করে দেখ, নবীজী
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) কী কষ্ট পাবেন! আর যে
রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) কে কষ্ট দিবে, এর
পরিণাম সম্পর্কে তোমরা পবিত্র
কুরআন শরীফ-এই পড়েছো-
ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺆﺫﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻟﻌﻨﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ
ﻭﺍﻻﺧﺮﺓ ﻭﺍﻋﺪ ﻟﻬﻢ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻣﻬﻴﻨﺎ
অর্থ: নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক
ও তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়,
তাদের প্রতি দুনিয়া ও
আখিরাতে আল্লাহ পাকের
লা’নত এবং আল্লাহ পাক তাদের
জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক শাস্তির
ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
যখন তিনি (রাঃ) তাঁকে নির্দোষ
প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অকাট্য
যুক্তির মাধ্যমে বুঝালেন যে,
জুলুম-অত্যাচার থেকে বিরত
থাকো এবং আমার রক্ত দ্বারা
তোমাদের হাত রঞ্জিত করো
না। আমি তোমাদের কোন ক্ষতি
করিনি, তোমাদের সন্তানাদি
হত্যা করিনি, তোমাদের প্রতি
কোন অত্যাচার করিনি। আমিতো
কূফাবাসীর আহবানে এসেছি।
তারা যখন বিশ্বাসঘাতকতা
করলো, আমাকে চলে যেতে দাও।
তাঁর হৃদয় বিদারক বক্তব্য ওদের
মনে কোন প্রভাব বিস্তার করলো
না । ওদের কপালে জাহান্নাম
অবধারিত ছিল। তাই ইমাম
হুসাইন (রাঃ) এর আকুল আবেদন
তাদের মনে কোন রেখাপাত
করলো না। বরং তারা হৈ-হুল্লা
শুরু করে দিল এবং বলতে লাগলো,
আমরা আপনার বক্তৃতা শুনতে
আসিনি। হয় ইয়াযীদের বাইয়াত
গ্রহণ করুন অথবা যুদ্ধের জন্য
প্রস্তুত হোন। তিনি বললেন,
আমি আমার পক্ষে যা প্রমাণ
করার ছিল তা প্রমাণ করলাম।
যেন কাল কিয়ামতের মাঠে
তোমাদের এ কথাটুকু বলার সুযোগ
না থাকে, হে আল্লাহ! আমাদের
জানা ছিল না, আমাদেরকে কেউ
বুঝায়নি, এখন আর তোমরা
খোদার দরবারে এ ধরনের কোন
আপত্তি পেশ করতে পারবে না।
এখন সব প্রমাণিত হয়ে গেছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান-
ﻭﻣﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻌﺬﺑﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﻧﺒﻌﺚ ﺭﺳﻮﻻ
অর্থ: কোন রসূল অর্থাৎ
হিদায়েতকারী না পাঠানো
পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি দান
করবো না।
যা প্রমাণ করার ছিল তা
প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন
তোমাদের যা ইচ্ছা তা করো।
মুহররমের নয় তারিখ আসলো এবং
ইয়াযীদ বাহিনীর মধ্যে আনন্দ-
উল্লাস শুরু হয়ে গেল। এটা পূর্ণ
যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বাভাস ছিল।
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম তাঁর এক সঙ্গীকে ওদের
কাছে পাঠালেন এবং বললেন,
ওদেরকে গিয়ে বলুন, আমাদেরকে
যেন একরাত্রি সময় দেয়। ইয়াযীদ
বাহিনী এই কথাটি গ্রহণ করলো
এবং এক রাত্রির সুযোগ দিলো।

কারবালার ইতিহাস (পর্ব -১৩)।

ইমাম হুসাইন, (র:)'র অাকুল অাবেদন
--------------------------
আল্লাহ্! আল্লাহ্! যখন ইমাম হুসাইন (রাঃ) দেখলেন যে, পানিও বন্ধকরে দেয়া হয়েছে, তখন তিনি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে ইয়াযীদের সৈন্য বাহিনীর নিকট গেলেন এবং তাদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। তিনি (রাঃ) তাদেরকে একান্তযুক্তির মাধ্যমে বুঝালেন, ‘জুলুম-অত্যাচার থেকে বিরত থাকো, আমাদের রক্ত দ্বারা তোমাদের হাতকে রঞ্জিতকরো না। জেনে শুনে কোন মু’মিনকে কতলবা শহীদ করা মানে জাহান্নামকে নিজের ঠিকানায় পরিণত করা। আমি হলাম তোমাদের রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দৌহিত্র; যার কালেমা তোমরা পড়। আর এই মূহুর্তে আমি ছাড়া তোমাদের রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্য কোন দৌহিত্র নেই।আর আমার সম্পর্কে তোমরা ভালভাবে জানো । আমি ঐ হুসাইন, যার সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “হাসান-হুসাইন বেহেশ্তের নওজোয়ানদের সর্দার।” আমি সেই হুসাইন, যখন নিজ মায়ের কোলে ক্রন্দন করতাম, তখন আল্লাহ তায়ালা’র প্রিয় নবী হযরত মুস্তাফা (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “ওগো ফাতিমা! ওকে কাঁদায়োনা। কারণ ও কাঁদলে আমার খুবই কষ্ট হয়।” দেখ, যখন আপন মায়ের কোলে আমার কান্নাটা নবীজী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য কষ্টদায়ক ছিল, এখন তোমরা যদি আমাকে ভিন দেশে কষ্টদাও এবং আমার রক্ত দ্বারা তোমাদের হাতকে রঞ্জিত করো, আমার ছেলে মেয়েদেরকে শোকাভিভূত করো, তাহলে চিন্তা করে দেখ, নবীজী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী কষ্ট পাবেন! আর যে রসূল(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দিবে, এর পরিণাম সম্পর্কে তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ-এই পড়েছো- ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺆﺫﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻟﻌﻨﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻻﺧﺮﺓ ﻭﺍﻋﺪ ﻟﻬﻢ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻣﻬﻴﻨﺎ অর্থ: নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়, তাদেরপ্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাকের লা’নত এবং আল্লাহ পাক তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।যখন তিনি (রাঃ) তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে বুঝালেন যে, জুলুম-অত্যাচার থেকে বিরত থাকো এবং আমার রক্ত দ্বারা তোমাদের হাত রঞ্জিত করো না। আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করিনি, তোমাদের সন্তানাদি হত্যা করিনি, তোমাদের প্রতি কোন অত্যাচার করিনি। আমিতো কূফাবাসীর আহবানে এসেছি। তারা যখন বিশ্বাসঘাতকতা করলো, আমাকে চলে যেতে দাও। তাঁর হৃদয় বিদারক বক্তব্য ওদের মনে কোন প্রভাব বিস্তার করলো না । ওদের কপালে জাহান্নাম অবধারিত ছিল। তাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর আকুল আবেদন তাদের মনে কোন রেখাপাত করলো না। বরং তারাহৈ-হুল্লা শুরু করে দিল এবং বলতে লাগলো, আমরা আপনার বক্তৃতা শুনতে আসিনি। হয় ইয়াযীদের বাইয়াত গ্রহণ করুন অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন। তিনি বললেন, আমি আমার পক্ষে যা প্রমাণ করার ছিল তা প্রমাণ করলাম। যেন কাল কিয়ামতের মাঠে তোমাদের এ কথাটুকু বলার সুযোগ না থাকে, হে আল্লাহ! আমাদের জানা ছিল না, আমাদেরকে কেউ বুঝায়নি, এখন আর তোমরা খোদার দরবারে এ ধরনের কোন আপত্তি পেশ করতে পারবে না। এখন সব প্রমাণিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান- ﻭﻣﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻌﺬﺑﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﻧﺒﻌﺚ ﺭﺳﻮﻻ অর্থ: কোন রসূল অর্থাৎ হিদায়েতকারী না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি দান করবো না।যা প্রমাণ করার ছিল তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা তা করো। মুহররমের নয় তারিখ আসলো এবং ইয়াযীদ বাহিনীর মধ্যে আনন্দ-উল্লাস শুরু হয়ে গেল। এটা পূর্ণ যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বাভাস ছিল। হযরতইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তাঁর এক সঙ্গীকে ওদের কাছে পাঠালেন এবং বললেন, ওদেরকে গিয়ে বলুন, আমাদেরকে যেন একরাত্রি সময় দেয়।ইয়াযীদ বাহিনী এই কথাটি গ্রহণ করলো এবং এক রাত্রির সূর্য গ্রহন হল।

Comments

Popular posts from this blog

ছবছে আওলা ও আ'লা হামারা নবী।

পিডিএফ বই ২৮ টি একত্রে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ এর জিবনী।